কর্পোরেট কালচার আয়ত্ত করতে গিয়ে আমরা টেবিল, চেয়ার, কম্পিউটার, ফোনে দিনের অধিকাংশ সময় কাটিয়ে দিচ্ছি। এ সবই সময় ও যুগের চাহিদা মিটাচ্ছে বটে তবে এ ডিভাইসগুলোর অতিরিক্ত ব্যবহার আমাদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, হাড় ও জয়েন্টে ব্যথা বিশেষ করে ঘাড়, কোমর ও কব্জিতে ব্যথা, মাথাব্যথা ও চোখের সমস্যার অন্যতম কারণ এ কম্পিউটার কালচার। এ স্বাস্থ্য ঝুঁকি এড়ানোর পরামর্শ নিয়ে
লিখেছেন উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজের ফিজিওথেরাপি বিভাগের প্রধান ডা. মোহাম্মদ আলী
আমরা সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহারে ক্রমশ ঝুঁকে পড়ছি। অনেকেই বলছেন কানেকটেভিটির এ সময়ে বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় আমরা যেন ডুবে থাকি। পক্ষান্তরে কর্পোরেট কালচার আয়ত্ত করতে গিয়ে টেবিল, চেয়ার, কম্পিউটার, ফোনে দিনের অধিকাংশ সময় কাটিয়ে দিচ্ছি। এ সবই সময় ও যুগের চাহিদা মিটাচ্ছে বটে তবে এ ডিভাইসগুলোর অতিরিক্ত ব্যবহার আমাদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, হাড় ও জয়েন্টে ব্যথা বিশেষ করে ঘাড়, কোমর ও কব্জিতে ব্যথা, মাথাব্যথা ও চোখের সমস্যার অন্যতম কারণ এ কম্পিউটার কালচার। একে কম্পিউটার ভিশন সিনড্রোম বলে।
* কোনো ব্যক্তির উচ্চতা, শারীরিক ওজন, কাজের ধরন, বডি ভল্যুম, অসুস্থতার ওপর নির্ভর করে অফিসের চেয়ার টেবিল ও অন্যান্য আনুষাঙ্গিক জিনিসের এরেঞ্জমেন্ট করা হয়, একে ওয়ার্কপ্লেস আরগোনোমিকস বলে। বলাই বাহুল্য এসব ডিভাইসগুলো ফ্লেক্সিবেল, ব্যক্তিনির্ভর ও এডজাস্টএবেল হওয়া প্রয়োজন।
* আরগোনোমিকসের ফলে কর্মীর স্বাস্থ্য নিরাপত্তা বাড়ে ফলে ব্যক্তির উৎপাদনশীলতা বাড়ে।
* কর্মীরও তার বডির সঠিক পজিশন সম্পর্কে ধারণা থাকা প্রয়োজন। এজন্য একজন আরাগানোমিস্ট বা চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া যায়।
কীভাবে এ স্বাস্থ্য ঝুঁকি এড়ানো যায়
চেয়ার : বডি কার্ভেচার বা বক্রতার ওপর নির্ভর করে চেয়ার এলাইন হওয়া প্রয়োজন। ঝ আকৃতির আরগোনোমিক্স চেয়ার বর্তমানে বাজারে সহজলভ্য। লক্ষ্য রাখতে হবে কোমর যেন চেয়ারের সঙ্গে ১৫ ডিগ্রি এঙ্গেলে থাকে। প্রয়োজনে লাম্বার কুশন বা পিলো বা রোলার ব্যবহার করা যায়। পা যেন ফ্লোরে থাকে, প্রয়োজনে ফুট-রেস্ট ব্যবহার করতে হবে। কোমর, হাঁটু ও পা ৯০ ডিগ্রি এঙ্গেলে থাকতে হবে। বসার সময় পা হাঁটু থেকে একটু সামনে রাখতে হয়। উরু চেয়ারের সামনে ও পাশ থেকে ১ থেকে দেড় ইঞ্চি দূরত্বে থাকবে। হাত চেয়ারের আর্মরেস্টে থাকবে। সোল্ডার জয়েন্ট, কব্জি ও কনুই ৯০ ডিগ্রি এঙ্গেলে রাখতে হবে। সোল্ডার যেন উঁচু হয়ে না থাকে সেদিকে লক্ষ্য রাখবেন। কম্পিউটার ব্যবহার করার সময় কব্জি যেন ওপরে উঠে না থাকে।
কী-বোর্ডও উঁচু করে না রেখে সমতলে রাখবেন। মাউস ওয়ারলেস হলে ভালো। চেয়ার কাঠের হলেই যেন ভালো তা নয়, বরং শক্ত কাঠ পায়ের মাংসপেশিতে চাপ ফেলে ব্যথার সৃষ্টি করে ফলে পা ঝিনঝিন করে ও হাঁটতে কষ্ট হয়। যাদের ঘাড় ব্যথা আছে চেয়ার ব্যবহার করার সময় যেন সারভাইক্যাল রোলার থাকে সেটি নিশ্চিত করতে হবে। চেয়ার রিভলভিং হলে সহজে যেন মুভমেন্ট করা যায় তেমন চাকা হওয়া বাঞ্ছনীয়। চেয়ার বেশি মুভ করলে মাংসপেশির ওপর চাপ পড়ে।
টেবিল : টেবিল কর্মীর উচ্চতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়া প্রয়োজন। টেবিলের উচ্চতা হবে ওয়ার্কারের উচ্চতার তিনভাগের এক অংশের কিছু বেশি। কিন্তু অর্ধেকের চেয়ে কম। টেবিল কি দিয়ে তৈরি তা বিবেচ্য বিষয় নয়। তবে টেবিল যেন দাঁড়িয়ে বা বসে কাজ করার সঙ্গে এডজাস্ট করা যায় সেটিই বিবেচ্য বিষয়।
কম্পিউটার : মনিটর যেন আই লেভেলে ৪৫ ডিগ্রি এঙ্গেলে থাকে সে ব্যবস্থা করতে হবে। মাথা থেকে কম্পিউটারের দূরত্ব ১ থেকে দেড় ফুট বা এক হাত পরিমাণ হতে হবে। কম্পিউটারের সামনে ঝুঁকে বা বেশি পেছনে হেলে কাজ করা যাবে না। যেহেতু ঘাড় দেহের ওজনের ১২-১৩ কেজি বহন করে তাই ঘাড় সোজা রেখে কাজ করতে হবে। ঘাড়ব্যথা থেকে মাথাব্যথাও হতে পারে। একে সারভাইকোজেনিক হেডেক বলে। যাদের চশমা পরতে হয় তারা মনিটরকে আই লেভেল থেকে সামান্য নিচুতে রাখবেন। যাদের দুটি কম্পিউটার ব্যবহার করতে হয় তারা সেকেন্ডারি বা দ্বিতীয় কম্পিউটারকে ডানে বা বামে সামান্য এঙ্গেলে রাখবেন। জরুরি বিষয় কম্পিউটার একটানা ৩০ মিনিটের বেশি ব্যবহার করবেন না। এতে ঘাড় ব্যথাসহ ড্রাই আই সিনড্রোম বা শুষ্ক চোখ সৃষ্টি করতে পারে। ৩০ মিনিট কাজ করে ১-২ মিনিট রেস্ট বা অল্টারনেটিভ ওয়ার্ক করে আবার কম্পিউটারে বসবেন। স্ট্রেচিং এক্সারসাইজ, আই বল মুভমেন্ট, সেলফ ম্যাসাজ এ ক্ষেত্রে উপকারী।
সেন্ট্রাল এসি : এটি ক্ষতিকারক নয়। তবে এসির ফিল্টার পরিষ্কার করা না হলে নাকের অ্যালার্জি সৃষ্টি হতে পারে। অনেকের ধারণা এসিতে থাকলে শরীর ম্যাজম্যাজ করে, মাংসপেশিতে ব্যথা হয়। এটি বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত নয়। এমনটি হলে শীত প্রধান দেশে মানুষের ব্যথা-বেদনা লেগেই থাকত।
লাইটিং : কর্মক্ষেত্রে এমন আলো থাকা উচিত নয় যা আই স্ট্রেইন বা গ্লার সৃষ্টি করে এবং চোখের প্রেসার বাড়ে। স্পটলাইট বা এলইডি লাইট স্বাস্থ্য উপযোগী নয়। রড বা টিউব লাইট ব্যবহার করা যায়। টেবিল লাইট ব্যবহার উপকারী।