জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আহত কাজল মিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য থাইল্যান্ডে পাঠিয়েছে সরকার। সিঙ্গাপুর থেকে আনা এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটি রোববার রাত সোয়া ১টায় থাইল্যান্ডের উদ্দেশে রওনা হয়। সেখানকার বেজথানি হাসপাতালে হাসপাতলে তার চিকিৎসা হবে। কাজলের সঙ্গে তার স্ত্রী সিনথিয়াও গেছেন।
তিন মাস ধরে কাজল ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতালে (নিনস) চিকিৎসাধীন ছিলেন। হাসপাতালের ইন্টারভেনশনাল নিউরোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. হুমায়ুন কবির হিমু কাজলের দেশ ত্যাগের বিষয়টি জানান।
এর আগে, রোববার কাজলকে থাইল্যান্ডের বেজথানি হাসপাতালে নেওয়ার সমস্ত আয়োজন শেষ করে সরকার। সন্ধ্যা ৭টায় সিঙ্গাপুর থেকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটি বাংলাদেশের উদ্দেশে রওনা হয়। পরে রাত সোয়া ১টার দিকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটি থাইল্যান্ডের উদ্দেশে ছেড়ে যায়।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নুরজাহান বেগম, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবু জাফর, রাজধানীর ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্স (নিনস) হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. দীন মোহাম্মদ ও এই হাসপাতালের ইন্টারভেনশনাল নিউরোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা হুমায়ুন কবির হিমু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
জানা গেছে, কাজল মিয়া জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) ইংলিশ বিভাগের ছাত্র। শুরু থেকেই আন্দোলনে যোগ দেন তিনি। পুরো জুলাই মাস ও আগস্টের শুরুতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনে অংশ নেন। কাজলের বড় ভাই রুবেলের বাসা যাত্রাবাড়ীতে।
৪ আগস্ট ভাইয়ের বিয়ের বর্ষপূর্তিতে অংশ নিতে বড়ভাই রুবেলের বাসায় যান। পরের দিন আন্দোলনের ‘লংমার্চ ফর ঢাকা’। ৫ আগস্ট ভোরেই আন্দোলনে যোগ দিতে বাসা থেকে বের হয়ে যাত্রাবাড়ীতে যান। সেখানে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। পুলিশের গুলির মুখে সবাই রাস্তা ছেড়ে দিলেও রাস্তায় সাহসিকতার সঙ্গে দাঁড়িয়ে থাকেন কাজল। রংপুরের আবু সাঈদের মত দু’হাত ছড়িয়ে দেন তিনি। পুলিশ তার মাথায় গুলি চালায়। লুটিয়ে পড়ে রাস্তায়। পরে লোকজন উদ্ধার করে নিনস হাসপাতালে ভর্তি করে। হাসপাতালে মাথায় অপারেশন হয়।
হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানান, ধীরে ধীরে কাজলের শারীরিক অবস্থার উন্নতি হতে থাকে। কিন্তু বাম হাত-পা পুরোপুরি অচল হয়ে যায়। এ জন্য প্রয়োজন রোবটিক ফিজিওথেরাপি। কিন্তু দেশে সে ব্যবস্থা নেই। সেজন্য মেডিকেল বোর্ড সিদ্ধান্ত নেয় তাকে বিদেশে নেওয়ার। কিন্তু তার আগেই শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। গত দুদিন আগে হঠাৎ করে ইনফেকশন হয়। বেশ কয়েকবার ডায়রিয়া হয়। এতে রক্তচাপ কমে তিনি শকে চলে যান।
কাজলের বিষয়টি গত শনিবারই স্বাস্থ্য উপদেষ্টাকে জানান হাসপাতালের চিকিৎসকরা। উপদেষ্টা দ্রুত বিদেশে নেওয়ার উদ্যোগ নেন। গত শনিবার ছুটির দিন হলেও কাজলকে বিদেশে নেওয়ার সব ব্যবস্থা করেন তিনি। সে রাতেই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে থাই অ্যাম্বাসিতে যোগাযোগ করা হয়। গতকাল দুপুরের মধ্যে ভিসার ব্যবস্থা করা হয়। এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের জন্য ৩১ হাজার ডলারের ব্যবস্থা করেন স্বাস্থ্য উপদেষ্টা। রোববার দুপুরের মধ্যে সে টাকা সিঙ্গাপুরে পাঠিয়ে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স নিশ্চিত করেন তিনি।