বাগেরহাট প্রতিনিধি॥
বাগেরহাটে ঠিকাদারি কাজের অভিজ্ঞতা ও পর্যাপ্ত টাকার যোগান (টার্ন ওভার) না থাকায় ছোট ছোট কয়েকশ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ পাচ্ছে না বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। যেসব প্রতিষ্ঠানের অভিজ্ঞতা ও টাকার যোগান (টার্ন ওভার) বেশি তারা সব কাজ বাগিয়ে নিচ্ছেন। বাগেরহাটে এই প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বলতে গেলে হাতে গোনা কয়েকটি। অথচ বছরের পর বছর কোন কাজে অংশগ্রহণ না করেও প্রতি বছর তারা সরকারকে লাইসেন্স নবায়নে ফি বাবদ আড়াই হাজার টাকা করে দিয়ে যাচ্ছে। তাদের অভিযোগ সংশ্লিষ্ট সরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রধানরা ছোট প্রতিষ্ঠানকে নিয়মের প্যাচে ফেলে অবজ্ঞা করে বড় প্রতিষ্ঠানকে কাজের সুযোগ করে দিচ্ছে। তবে সংশ্লিষ্ট বিভাগ অভিযোগ অস্বীকার করে বলছেন এসব ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এলজিইডি’র নিয়ম ও শর্ত পূরণ করতে না পারায় তারা কাজ পাচ্ছেনা। নিয়ম শর্ত যেসব প্রতিষ্ঠান পূরণ করছেন তারা ঠিকই কাজ পাচ্ছে। বাগেরহাটের স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের লাইসেন্সধারী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিকদের সাথে কথা বলে এই তথ্য জানা গেছে। বাগেরহাটে যেসব ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানে টার্ন ওভার অর্থাৎ অভিজ্ঞতা ভাল তাদের মধ্যে রয়েছে মেসার্স আলিফ স্টোর, মেসার্স সোহেল কনস্ট্রাকশন, মেসার্স শুভ এন্টারপ্রাইজ, মেসার্স সোনিয়া এন্টারপ্রাইজ, মেসার্স হাবিব এন্টারপ্রাইজ, মেসার্স মোজাহার এন্টারপ্রাইজ লিমিটেড, মেসার্স শাওন এন্টারপ্রাইজ, মেসার্স মাসুদ এন্টারপ্রইজ, ও মেসার্স ঝর্ণা এন্টারপ্রাইজ। এসব ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বাগেরহাট জেলার ছোট বড় সব কাজ করছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঠিকাদারিতে আগ্রহী কোন প্রতিষ্ঠানকে যখন কোন বিভাগ লাইসেন্স দিচ্ছে তখন তাকে শর্তে বলছে দুই কোটি টাকা পর্যন্ত কাজের অনুকুলে কোন টার্ন ওভার ও অভিজ্ঞতার প্রয়োজন হবে না বলে নিয়ম রয়েছে। অথচ তারা এই নিয়ম না মেনেই সেচ্ছাচারিতা করে পছন্দের প্রতিষ্ঠানকে কাজ দিয়ে চলেছে। মেসার্স প্রচেষ্টা এন্টারপ্রাইজের সত্ত্বাধিকারি সাইফুল ইসলাম এই প্রতিবেদককে বলেন, ২০১০-১১ অর্থ বছরে ঠিকাদারি করার আগ্রহ নিয়ে এলজিইডি’র একটি লাইসেন্স করি। আমাকে যখন লাইসেন্স দেয় তখন তারা শর্তে বলেছে দুই কোটি টাকা পর্যন্ত কাজের অনুকুলে কোন বড় ধরনের টার্ন ওভার ও অভিজ্ঞতার প্রয়োজন হবে না। গত পাঁচ বছর ধরে লাইসেন্সের নবায়ন ফি দিয়ে যাচ্ছি কিন্তু আজও একটা কাজ করতে পারিনি। একই অভিযোগ মেসার্স শান্তা এন্ড ব্রাদার্সের সত্ত্বাধিকারি সাইফুল ইসলাম পাভেলের। তিনি এই বলেন, ২০১৩-১৪ অর্থ বছরে এলজিইডির একটি লাইসেন্স করি। আমার কাজের অভিজ্ঞতা না থাকায় গত তিন বছরে একটি কাজও পাইনি। অথচ প্রতিবছর আমি আড়াই হাজার টাকা করে সরকারকে লাইসেন্স নবায়ন ফি দিয়ে যাচ্ছি। বাগেরহাট এলজিইডি ঠিকাদার কল্যাণ সমিতির সদস্য সচিব ও ঠিকাদার মো. আব্দুর রব সরদার এই বলেন, বাগেরহাট জেলায় এলজিইডি’র সাড়ে তিনশ লাইসেন্সধারী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। অথচ কাজ পাচ্ছে হাতে গোনা কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। কোন কাজের অনূকূলে ছোট ছোট প্রতিষ্ঠান ১০ ভাগ লেসে দরপত্র জমা দিলেও তারা কাজ পায়না। কিন্তু কাজ পায় যাদের টার্ন ওভার ভাল। এটা বৈষম্যমূলক আচরণ। শুরুতেই কেউ বড় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানে রুপ নেয় না। ছোট থেকে বড় হয়। যাদের অভিজ্ঞতা নেই বলে এখন কাজ দেওয়া হচ্ছে না তাহলে কেন এদের লাইসেন্স দিল সরকার। চলতি অর্থ বছরে অন্তত ১৫টি নতুন লাইসেন্সের জন্য আবেদন জমা পড়েছে। তিনি আরও বলেন, জেলার অধিকাংশ লাইসেন্সধারীরা তাদের লাইসেন্স ঠিক রাখতে প্রতি অর্থ বছরে নবায়ন ফি সরকারকে দিয়ে যাচ্ছে। সরকার ঠিকই রাজস্ব পাচ্ছে কিন্তু ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তার ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তাই সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগকে বৈষম্য দূর করে নতুনদের সুযোগ করে দেওয়ার ব্যবস্থা করার দাবি জানান ওই নেতা। বাগেরহাট এলজিইডি ঠিকাদার কল্যাণ সমিতির আহ্বায়ক খান আবু বক্কর সিদ্দিক এই প্রতিবেদককে বলেন, জেলার ঠিকাদারদের কল্যাণে এই সংগঠন কাজ করে থাকে। সম্প্রতি আমরা এই সমিতির দায়িত্ব নিয়েছি। বিগত দিনে যারা এই সংগঠনের দায়িত্বে ছিল তারা কি করেছে জানিনা। তবে আমরা এখন থেকে সমিতির অর্ন্তভুক্ত সকল সদস্যের কল্যাণে কাজ শুরু করেছি। এখন থেকে নিয়ম মেনে সবাইকে কাজ দিতে হবে। এলজিইডির বৈষম্য দূর করতে আমরা খুব শিগগির আন্দোলনে নামছি। বাগেরহাট এলজিইডি’র নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মকর্তা এই প্রতিবেদককে বলেন, এই বিভাগের যারা ঠিকাদারি করতে আগ্রহী তারাই লাইসেন্স করছেন। নিয়মে বলা আছে এলজিইডি’র দুই কোটি টাকার দরপত্রে কাজ করতে কোন অভিজ্ঞতা লাগবে না। অথচ নিয়মের ম্যারপ্যাচে পড়ে ব্যাংকের একাউন্টে পর্যাপ্ত টাকা জমা দেখাতে না পারায় আমাদের দরপত্রে ওইসব ঠিকাদাররা অংশ নিতে পারছেননা। অভিযোগ অস্বীকার করে বাগেরহাট এলজিইডি’র জেষ্ঠ্য সহকারি প্রকৌশলী আবু কামাল এই প্রতিবেদককে বলেন, স্থানীয় সরকার বিভাগের কাজ পেতে হলে কাজের অভিজ্ঞতা অবশ্যই থাকতে হবে। জেলার অধিকাংশ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানেরই কাজের অভিজ্ঞতা ও ব্যাংঙ্কে পর্যাপ্ত টাকার যোগান নেই। তাই তারা কাজ পাচ্ছেনা। যেসব ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নিয়ম শর্ত পূরণ করতে পারছে তারা ঠিকই কাজ পাচ্ছে। অভিজ্ঞতা নেই অথচ নতুন করে লাইসেন্স দিচ্ছেন কেন এমন প্রশ্নের উত্তরে ওই কর্মকর্তা বলেন, নতুন লাইসেন্সে সরকার রাজস্ব পাচ্ছে। সরকার নতুন করে লাইসেন্স দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলে আমাদের কি করার আছে। আমরা শুধু সরকারের দায়িত্ব পালন করছি।