বাংলাদেশ থেকে মুক্তি পাওয়া ৯৫ ভারতীয় জেলের সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুধু সাক্ষাৎ নয়, বিস্ফোরক মন্তব্যও করেছেন তিনি।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ভারতীয় জেলেদের বাংলাদেশে মারধর করা হয়েছে। এতটাই মারধর করা হয়েছে যে অনেকে ঠিকমতো এখনো চলাফেরা করতে পারছেন না।
তিনি বলেন, আমাদের দেশের (ভারত) যাতে বদনাম না হয়, সেজন্য আমরা চিকিৎসা দিয়ে বাংলাদেশি জেলেদের সেবা করেছি। যদিও মমতা বলেছেন, দুই বাংলার সম্পর্ক সুমধুর। আমাদের মধ্যে কোনো সমস্যা বা বিভেদ নেই।
সোমবার (০৬ জানুয়ারি) পশ্চিমবঙ্গের গঙ্গাসাগর মেলার প্রস্তুতি দেখতে যান মুখ্যমন্ত্রী। সেখানেই ওই জেলেদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন তিনি।
মমতা বলেন, আপনারা দেখতেই পাচ্ছেন চোখে পানি এসে যাওয়ার মতো ঘটনা। বাংলাদেশ আর আমরা দুটি প্রতিবেশী রাষ্ট্র। আমরা একে অপরকে ভালোবাসি। কিন্তু পরিস্থিতির শিকার হয়েছেন আমাদের জেলেরা। তারা জলসীমানা পেরিয়ে বাংলাদেশে চলে গিয়েছিলেন।
তিনি বলেন, রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে জেলেদের দেওয়া ট্র্যাকিং কার্ড মারফত আমরা তাদের খুঁজে পাই। আমরা বাংলাদেশে চলে যাওয়ার খবর পেতেই চারিদিকে খোঁজ-খবর রাখতে শুরু করি। পরে জানা যায়, তাদের সেখানকার স্থানীয় পুলিশ স্টেশনে আটকে রাখা হয়েছে। এরপর আমরা প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করি। আমরা দুই দেশ এক অন্যের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলছিলাম।
জেলেদের উদ্দেশে মমতা বলেন, আপনারা নিজেরাই বলুন, আপনারা যারা এসেছেন, আপনাদের মুখ দেখতে না পেয়ে আপনাদের পরিবারের সদস্যরা গভীর চিন্তায় মগ্ন ছিলেন, একটা অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে ছিলেন। কিন্তু আপনাদের ফিরে আসায় তাদের পরিবারের মুখে এখন হাসি ফুটেছে।
এরপরই তিনি বলেন, আমি দেখলাম কয়েকজন খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটছেন। আমি তাদের এর কারণ জিজ্ঞাসা করলাম, প্রথমে তারা বলতে চাননি। পরে জানতে পারলাম যে তাদের মারধর করা হয়েছে। তাদের নিয়ে গিয়ে হাত দুটো দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছিল।
তিনি আরও বলেন, তাদের মোটা লাঠি দিয়ে মারা হয়েছিল। ফলে কয়েকজন শারীরিকভাবে কোমর থেকে পা পর্যন্ত আঘাত পেয়েছেন। কিন্তু পোশাক পড়ে আছেন বলে বোঝা যাচ্ছে না। আমি স্থানীয় প্রশাসনকে বলব তাদের যাতে ভালো করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়।
বাংলাদেশ থেকে মুক্ত জেলেদের ১০ হাজার রুপি করে দেওয়ার কথা জানান মমতা। প্রাণ বাঁচাতে সাগরে ঝাঁপ দিয়ে মারা যাওয়া ব্যক্তির পরিবারকে দুই লাখ রুপি দেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।
ভারতে বন্দি থাকা জেলেদের রোববার বাংলাদেশের উপকূলরক্ষী বাহিনীর হাতে তাদের তুলে দেওয়া হয়। অন্যদিকে, বাংলাদেশে বন্দি থাকা ৯৫ জন ভারতীয় জেলেকে ভারতের উপকূলরক্ষী বাহিনীর হাতে তুলে দেয় ঢাকা। বন্দি ভারতীয় জেলেদের অধিকাংশই দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার কাকদ্বীপ ও নামখানার বাসিন্দা।
আগামী শুক্রবার থেকে শুরু হচ্ছে গঙ্গাসাগর মেলা। তার আগেই জেলেদের সঙ্গে দেখা করতে এবং গঙ্গাসাগর মেলার শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি দেখতে এদিন গঙ্গাসাগরে যান মুখ্যমন্ত্রী। পরে পূজা দেন কপিলমুনির মন্দিরে। সেখান থেকে যান ভারত সেবাশ্রমের কার্যালয়ে।