নতুন রাজনৈতিক দল নিবন্ধনে ব্যাপক সাড়া মিলেছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে ইতিমধ্যে নতুন অর্ধশতাধিক দল নিবন্ধনের জন্য ফরম নিয়েছে। তবে এবার যথাযথভাবে যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে শর্ত পূরণ হলেই কেবল নতুন দলের নিবন্ধন দেবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। কোন নাম সর্বস্ব রাজনৈতিক দলকে এবার নিবন্ধন দেয়া হবে না। এজন্য খতিয়ে দেখা হবে তাদের মাঠপর্যায়ের অফিসসহ সকল বিষয়। ‘এক নেতা, এক দল’-এমন কোনো রাজনৈতিক দলকে নিবন্ধন দেয়া হবে না বলে ইতিমধ্যে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনের জন্য ইচ্ছুকদের কাছ থেকে আবেদন চেয়ে গত ৩০ অক্টোবর ইসির ভারপ্রাপ্ত সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। আগ্রহী দলগুলোর আবেদন জমা দেয়ার শেষ সময় ৩১ ডিসেম্বর। ইতিমধ্যে অর্ধশতাধিক নতুন দল আবেদনের জন্য ইসি থেকে ফরম সংগ্রহ করেছে।
ফরম সংগ্রহ করা দলগুলো হলো- বাংলাদেশ কংগ্রেস, বাংলাদেশ ইসলামিক পার্টি, বঙ্গবন্ধু স্মৃতি সংসদ ও স্মৃতি পাঠাগার, তৃণমূল বাংলাদেশ, বাংলাদেশ জনতা পার্টি, ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি, বাংলাদেশ লেবার পার্টি, শরিয়াহ আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ ন্যাশনাল কংগ্রেস, তৃণমূল বাংলাদেশ, ডেমোক্রেটিক পার্টি, বাংলাদেশ জামে ইসলাম পার্টি, ভাসানী ন্যাপ, খেদমত পার্টি, বাংলাদেশ ইউনাইটেড ইসলামী পার্টি, মৌলিক বাংলাদেশ, বাংলাদেশ বেকার সমাজ, জাতীয় পার্টি, জাগো বাহে, বাংলাদেশ সত্য ব্রত আন্দোলন, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট সেন্ট পার্টি, বাংলাদেশ রিপাবলিক পার্টি, বাংলাদেশ সাধারণ পার্টি, বাংলাদেশ মানবতা দল, বাংলাদেশ রেড রেস্টার পার্টি, বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক পার্টি, নাগরিক ঐক্য, স্বদেশ পার্টি, বাংলাদেশ গণমুক্তি পার্টি, কংগ্রেস বাংলাদেশ, বাংলাদেশ শ্রমজীবী মুক্তি আন্দোলন, তৃণমূল জনতা পার্টি, থার্ড পার্টি, বাংলাদেশ সমাজ উন্নয়ন পার্টি, বাংলাদেশ মানবাধিকার আন্দোলন, বাংলাদেশ সত্ সংগ্রামী ভোটার পার্টি ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স, বিশা পার্টি, লেবারেল পার্টি, এমডিপি, বাংলাদেশ নিউ সংসদ লীগ, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক দল-বিডিপি, বিজিডিপি, কেএসপি, বাংলাদেশ ইসলামিক পার্টি, কৃষক প্রজা পার্টি, বাংলাদেশ জাতীয় লীগ, তৃণমূল ন্যাশনাল পার্টি। বাংলাদেশ ইসলামিক গাজী; বাংলাদেশ জনতা পার্টি; জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ও নেজামে ইসলাম পার্টি; বাংলাদেশ জালালী পার্টি এবং সোনার বাংলা উন্নয়ন লীগ ইতিমধ্যে নিবন্ধনের জন্য আবেদনও জমা দিয়েছে।
নতুন নিবন্ধনের ক্ষেত্রে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) অনুযায়ী, তিনটির মধ্যে একটি শর্ত পূরণ হলেই তারা নিবন্ধনের যোগ্য বলে বিবেচিত হয়। শর্তগুলো হলো ১. দেশ স্বাধীন হওয়ার পর যে কোনো জাতীয় নির্বাচনের আগ্রহী দলটির যদি অন্তত একজন সংসদ সদস্য থাকেন, ২. যে কোনো একটি নির্বাচনে দলের প্রার্থী অংশ নেয়া আসনগুলোয় মোট প্রদত্ত ভোটের ৫ শতাংশ পায় এবং ৩. দলটির যদি একটি সক্রিয় কেন্দ্রীয় কার্যালয়, দেশের কমপক্ষে এক তৃতীয়াংশ (২১টি) প্রশাসনিক জেলায় কার্যকর কমিটি এবং অন্তত ১০০টি উপজেলা/মেট্রোপলিটন থানায় কমপক্ষে ২০০ ভোটারের সমর্থন সম্বলিত দলিল থাকে। ইসির কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী আবেদন যাচাই-বাছাই, দাবি-আপত্তি নিষ্পত্তি শেষে মার্চের মধ্যে নতুন দলের নিবন্ধন চূড়ান্ত করার কথা রয়েছে যাতে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তারাও অংশ নিতে পারে।
এর আগে দশম সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আগ্রহী নতুন ৪৩টি রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের আবেদন করেছিল। এর মধ্যে ৪১টিই দলই নির্বাচন কমিশনের কাছে নিজেদের ‘যোগ্যতার’ প্রমাণ দিতে ব্যর্থ হয়। মাত্র দুটি দল শর্ত অনুযায়ী মাঠপর্যায়ে কার্যালয় ও কমিটি থাকার তথ্য দিয়েছিল। এরপর তাদের নিবন্ধন দেয় কমিশন। দল দুটি হলো-বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট (বিএনএফ) ও বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট। ২০০৮ সালে নিবন্ধন প্রথা চালুর পর এ পর্যন্ত ৪২টি দল নিবন্ধিত হয়েছে। এর মধ্যে স্থায়ী সংশোধিত গঠনতন্ত্র দিতে না পারা এবং সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধ হওয়ায় ২০০৯ সালে ফ্রিডম পার্টি নিবন্ধন বাতিল করে ইসি। আর আদালতের আদেশে ২০১৩ সালে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন অবৈধ হয়।
ইসি কর্মকর্তারা ইত্তেফাককে জানান, তারা দলগুলোর সব ধরনের কমিটিতে ৩৩ শতাংশ নারী কোটার বিষয়ে খোঁজ নিয়েছেন। নিবন্ধন শর্ত অনুযায়ী, ২০২০ সালের মধ্যে প্রত্যেক দলকে এই কোটা পূরণ করতে হবে। অবশ্য আওয়ামী লীগ ও বিএনপিসহ কয়েকটি দল তাদের কমিটিতে ১৫ শতাংশ নারী প্রতিনিধিত্ব রয়েছে বলে কমিশনকে অবহিত করেছে। আর ২০২০ সালের মধ্যে কোটা পূরণের প্রতিশ্রুতির কথা জানিয়েছেন বর্তমান নিবন্ধিত দলগুলো।
এদিকে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই রাজনৈতিক দলগুলোর রাশ টেনে ধরছে কমিশন। এক নেতার এক দলের নিবন্ধনের ক্ষেত্রে কঠোর অবস্থানে যাবে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি। মাঠ পর্যায়ে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) শর্ত দলগুলো পূরণ করছে কিনা তা খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। মূলত নিবন্ধিত দলগুলোর জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে যে সংখ্যক অফিস থাকার কথা, সেগুলো আদৌ আছে কিনা তার খোঁজ করতে মাঠে নামবে ইসির নিজস্ব কর্মকর্তারা। আর এতে অনেক দল নিবন্ধন ঝুঁকিতে পড়তে পারে, এমনকি নিবন্ধনও হারাতে পারে তারা।