ত্রিদেশীয় ওয়ানডে সিরিজে জিম্বাবুয়ে ও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম দুই ম্যাচে দাপটের সাথে জিতে আগেভাগেই ফাইনাল নিশ্চিত করে ফেলেছে স্বাগতিক বাংলাদেশ। দলগত পারফরমেন্সের ফলেই প্রথম লিগ শেষেই ফাইনালে টাইগাররা। এমনটা মনে করেন বাংলাদেশ দলের ডান-হাতি ওপেনার এনামুল হক বিজয়।
তিনি বলেন, ‘জেতার পর সবারই ভালো লাগার বিষয় থাকে। অবশ্যই সবাই ভালো খেলছে। আমরা দল হিসেবে ভালো খেলতে পারছি। অবশ্যই একটা ভালো লাগার বিষয়। আর ভালো লাগার বিষয় যেখানে থাকে সেখানে একটু নির্ভার তো থাকেই।’
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টুর্নামেন্টের প্রথম ম্যাচেই ৮ উইকেটের জয় পায় বাংলাদেশ। ফলে জয়ের স্বাদ নিয়ে টুর্নামেন্টে শুভ সূচনা করে টাইগাররা। এরপর টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় ম্যাচেও দুরন্তপনা দেখায় মাশরাফির দল। ব্যাট-বল হাতে চন্ডিকা হাথুরুসিংহের শ্রীলঙ্কাকে ধরাশায়ী করে বাংলাদেশ। ১৬৩ রানের বড় ব্যবধানে শ্রীলংকাকে হারায় টাইগাররা। নিজেদের ওয়ানডে ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি রানের ব্যবধানে জয়ের রেকর্ড গড়ে বাংলাদেশ।
মাশরাফি-তামিম-সাকিব-মুশফিকুর-মাহমুদুল্লাহ’র মতো সিনিয়ররা থাকলে দলগত পারফরমেন্সও বেরিয়ে আসে বলে মনে করেন বিজয়, ‘আমরা সবাই এখন টিম হিসেবে খেলছি। সবাই চেষ্টা করছে বাংলাদেশকে বড় জায়গায় নিয়ে যেতে। আর একটা ব্যাপার হলো আমাদের দলে বেশ কয়েকজন সিনিয়র ক্রিকেটার আছে। যারা একা হাতে ম্যাচ জেতাতে পারেন, যে কোনো জায়গায় নিয়ে যেতে পারেন। এছাড়া সবাই স্বাধীনতা নিয়ে খেলছে, যা খুব দরকার ছিলো। ড্রেসিংরুমে থাকলে একটা ভালো লাগা কাজ করে। তামিম ভাইয়ের ১১ হাজার রান, সাকিব ভাইয়ের ১০ হাজার রান, মুশফিক ভাইয়ের ৩০০ ম্যাচ, মাশরাফি ভাইয়ের নেতৃত্ব, রিয়াদ ভাইয়ের মতো দারুণ ফাইটার। এ রকম যারা আছে, মুস্তাফিজুরের মতো এ রকম একজন খেলোয়াড়ও আছে। তাই ড্রেসিংরুম এখন অনেক ভারি। যেখানে থাকলে মনে হয় আমাকেও আরো ভালো কিছু করতে হবে। ড্রেসিংরুমে থাকলে মনে হয়, বাংলাদেশ এখন অনেক বড়।’
২০১২ সালে খুলনায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ অভিষেক হয় বিজয়ের। ঐ সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচেই সেঞ্চুরি তুলে নেন তিনি। এরপর বাংলাদেশ দলের ওপেনার হিসেবে আস্থার প্রতীকই ছিলেন বিজয়। কিন্তু অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডে ২০১৫ বিশ্বকাপে নেলসনে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচে ঘাড়ের ইনজুরিতে পড়েন বিজয়। ফলে দীর্ঘদিন ছিলেন জাতীয় দলের বাইরে। ত্রিদেশীয় সিরিজ দিয়ে আবারো জাতীয় দলে ফিরতে পেরেছেন বিজয়।
তবে বেশ মারমুখী মেজাজেই খেলতে দেখা যাচ্ছে বিজয়কে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দুর্দান্ত সব শটে ৪টি বাউন্ডারিতে নিজের মারমুখী মেজাজ দেখান বিজয়। ভালো শুরুর পরও ১৪ বলে ১৯ রান করেন তিনি। দ্বিতীয় ম্যাচে জীবন পেয়ে চমৎকার শুরু ছিলো বিজয়ের। কিন্তু সেই শুরুর ধরে রাখতে পারেননি। ৩টি চার ও ১টি ছক্কায় ৩৭ বলে ৩৫ রানে ফিরেন তিনি।
ইনিংসের শুরু থেকে বিজয়ের এমন মারমুখী মেজাজের কারণ কি? এ ব্যাপারে বিজয় বলেন, ‘টিম ম্যানেজম্যান্ট থেকে আমাকে স্বাধীনতা দেয়া হয়েছে, আমাকে আমার মতো করে খেলতে। দল যেভাবে চাচ্ছে চেষ্টা করছি সেভাবেই খেলার জন্য। আসলে স্বাধীনতা পেলে তো অবশ্যই ভালো লাগে। নিজেরটা আরও দেখানো যায় কতটুকু পারা সম্ভব, কতটুকু পারি। আমার মনে হয় ফ্রিডম থাকা এরকম খেলা। দল যেভাবে চাচ্ছে সেভাবেই খেলছি। আর প্রেসে আসা অনেকদিন পর। প্রেসের সাথে কথা বলতে মাঝে মাঝে ভালো লাগে। অনেক সময় দেখা যায় কোন প্রকার সুযোগ না দিয়েই খুব ভালো ব্যাটিং করছি কিন্তু। ওই সময় খুব ভালো একটা ক্যাচ ধরে ফেলে। কিংবা রান আউট হয়ে যেতে পারি। আবার কোনো এক ভুলে আউটও হয়ে যেতে পারি। তখন কিন্তু আসলে লাইফটা পায় না। আসলে লাইফটা খেলার একটা অংশ। আমার কাছে মনে হয় লাইফের বলটা চলে গেছে তো চলে গেছে। পরবতী বলটা ফোকাস করি সব সময়। আর আমার কাছে মনে হয় আক্রমণাত্মক আছি। দল যেটা চাচ্ছে সেভাবে খেলার। এর মধ্যে চান্স আসতে পারে, ভালো ব্যাটিং করতে পারি এবং তা করতে থাকব। চেষ্টা করবো এখন যেভাবে খেলছি সেভাবে খেলার।’
দলের সবার কাছ থেকে সমর্থন পাচ্ছেন জানিয়ে বিজয় বলেন, ‘সবাই খুব সাপোর্ট করছে। সিনিয়রা তামিম ভাইয়ের থেকে শুরু করে মুশফিক ভাই, রিয়াদ ভাই, সাকিব ভাই, মাশরাফি ভাই সবাই খুব সাপোর্ট করছে। সবাই ইতিবাচক আছে। এ জিনিসটা খুবই ভালো লাগার বিষয়। আসলে সব সময় চেয়েছি দল যেভাবে চায় সেভাবে নিজেকে উজাড় করে খেলতে। আমার কাছে মনে হয় টিম যেহেতু খুশি আছে তাই আমি নিজেও খুশি।’
তবে ছোট ছোট ইনিংসেই নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখতে চান না বিজয়। তামিমকে দেখে শিক্ষা নিতে চান তিনি, ‘আমার কাছে মনে হয় বড় ইনিংস খেলা একটা অভ্যাসের ব্যাপার। তামিম ভাইকে দেখলে বুঝতে পারি। তিনি ২০১৫ সাল থেকে যেভাবে বড় ইনিংস খেলে যাচ্ছে, আমার মনে হয় জুনিয়র ব্যাটসম্যান হিসেবে এটা আমার জন্য শিক্ষনীয় ব্যাপার। আমার মনে হয় বড় ইনিংস খেলা সম্ভব। এটাকে যদি একটু বুদ্ধি খাটিয়ে সিনিয়রদের সঙ্গে কথা বলে, আর যদি ভাগ্য সঙ্গ দেয় আশা করি বড় ইনিংস খেলতে পারবো। এটা তেমন কঠিন হবে না। বাসস।