বিশ্বে বিগত সময়ে যে হারে কর্মসংস্থান হয়েছে সম্প্রতিকালে সেটি ধীর হয়েছে বলে উল্লেখ করেছে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও)। গতকাল জেনেভা থেকে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে সংস্থাটি উল্লেখ করেছে, বিশ্ব মন্দা পরবর্তী অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি হচ্ছে কিন্তু সে হারে কর্মসংস্থান বাড়ছে না। গতবছরের মতো এবছরও বেকারত্বের হার একই রয়েগেছে।
‘ওয়ার্ল্ড এমপ্লয়মেন্ট এন্ড সোস্যায়ল আউটলুক:ট্রেন্ড ২০১৮’ শিরোনামে প্রকাশিত এই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০১৬ সালে বিশ্বব্যাপী বেকারত্ব বৃদ্ধি পাওয়ার পর এখনও সেই জায়গায় রয়েগেছে বেকারত্বের হার। গেলো ২০১৭ সালে ১৯ কোটি ২০ লাখ মানুষ বেকার ছিলো যা মোট কর্মক্ষম মানুষের ৫ দশমিক ৬ ভাগ। বর্তমান পরিস্থিতিতে ২০১৮ সালে এই পরিস্থিতির বড় পরিবর্তন হবে না। আইএলওর পূর্বাভাস অনুযায়ী এবছর সর্বোচ্চ শূন্য দশিক ২ ভাগ কমতে পারে বেকারত্বের হার। বছর শেষে ৫ দশমিক ৫ ভাগ হতে পারে বেকরত্বের হার। বিশেষ করে উন্নত দেশগুলোর শ্রমিক চাহিদা কিছুটা বৃদ্ধি পাওয়ায় এই কর্মসংস্থান হবে বলে আশা করা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে আইএলওর মহাপরিচালক গাই রাইডার উল্লেখ করেছেন, বিশ্ব অর্থনীতিতে আরো কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। শ্রমিকের উন্নয়নেও কাজ করতে হবে।
অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে শ্রমিকদের উদাহরণ দিয়ে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, এ ধরনের শ্রম পরিস্থিতির কারণে দরিদ্র শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়ন প্রক্রিয়া ব্যাহত হতে পারে। বিশেষ করে ভারত, বাংলাদেশ, কম্বোডিয়া এবং নেপালের শ্রমিকদের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, ভারত, কোরিয়া, মঙ্গোলিয়া, শ্রীলঙ্কা, ভিয়েতনামের চেয়ে বাংলাদেশে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে শ্রমিকরা বেশি নিয়োজিত রয়েছে। অন্যদিকে যে দেশগুলো নিয়োগ পত্র ছাড়াই শ্রমিকদের খাটাচ্ছে তাদের মধ্যে চীন, ভিয়েতনাম, বাংলাদেশ ও ফিলিপাইনকে উদাহরণ হিসেবে দেখানো হয়েছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০১২ সালের পর বিশ্বে ঝুঁকিপূর্ণ শ্রম পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। কর্মসংস্থান কাঙ্খিত হারে না হওয়ায় দারিদ্র্য হ্রাসের হারও ধীর হবে বলে মনে করছে আইএলও। প্রতিবেদন অনুযায়ী, এবছরও ১১ কোটি ৪০ লাখের বেশি শ্রমিক হত দরিদ্র পরিস্থিতির মধ্যে দিন যাপন করবে যা বিশ্বের মোট শ্রমিকের ৪০ ভাগ।
আইএলও উল্লেখ করেছে, সেবা খাত হবে আগামী দিনে কর্মসংস্থানের মূল চালিকাশক্তি। উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের কারণে কৃষি ও শিল্প খাতে শ্রমিকের হার ক্রমেই কমবে। তবে বর্তমানে জনসংখ্যা পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে আইএলও উল্লেখ করেছে, প্রতিবছর নতুন করে শ্রমবাজারে যে হারে মানুষ প্রবেশ করছে সেটি ২০৩০ সাল পর্যন্ত প্রায় একই থাকবে। ফলে বয়স্ক মানুষের হার বেড়ে যাবে। সেসময় পেনশন ব্যবস্থার উপরে চাপ বাড়বে। এটি সরাসরি কর্মসংস্থানের উপর প্রভাব ফেলবে। এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের পূর্বাভাস প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, এই অঞ্চলের বেকারত্বের হার এবছর ৪ দশমিক ২ ভাগ হতে পারে। যা আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে ঠিক আছে। তবে ২০১৭ থেকে ২০১৯ এসময়কালে এই অঞ্চলে ২ কোটি ৩০ লাখ মানুষ নতুন করে শ্রম বাজারে যুক্ত হবে। এই অঞ্চলের ৯০ কোটি শ্রমশক্তি ঝুঁকিপূর্ণ কর্মসংস্থানের ঝুঁকিতে থাকবে যা মোট শ্রমশক্তির প্রায় অর্ধেক বলে উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।