নানা অনিশ্চয়তা ও শঙ্কা ভর করেছে বিএনপিতে। দলটি আগামী জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ ও দাবি আদায়ের বিষয়ে কৌশল নির্ধারণ করতে পারছে না। আপাতত দলের নেতাকর্মীদের সমস্ত মনোযোগ কারাবন্দি চেয়ারপারসনকে ঘিরে। বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি কবে পাবেন তা নিয়ে নিশ্চয়তা পাচ্ছেন না দলের নেতারা। গতকাল রবিবার জামিন আবেদনের ওপর শুনানি শেষ হলেও বিচারিক আদালতের নথি আসার পরে এ বিষয়ে আদেশ দেয়া হবে বলে জানিয়েছে হাইকোর্ট। এজন্য হয়তো আরো ১৫ কার্যদিবস অপেক্ষা করতে হতে পারে তাদের।
এদিকে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় বেগম জিয়া মুক্তি পেলেও সামনে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায়ে সাজা হলে আবারো হয়তো কারাগারে যেতে হতে পারে। আগামী এক মাসের মধ্যে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায় হতে পারে বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা। ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগে এই মামলার কার্যক্রম শেষ পর্যায়ে। আলিয়া মাদরাসা মাঠে স্থাপিত ঢাকার ৫নং বিশেষ জজ ড. আখতারুজ্জামানের আদালতে আজ সোমবার এই মামলার শুনানির দিন ধার্য রয়েছে। পাশাপাশি দলের অধিকাংশ সিনিয়র নেতার বিরুদ্ধে বিভিন্ন দুর্নীতির মামলার বিচারকাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। অচিরেই চার সিনিয়র নেতার বিরুদ্ধে মামলার রায় দিতে পারে বিশেষ জজ আদালত। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও মির্জা আব্বাস এবং ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এ কে এম মোশাররফ হোসেনের বিরুদ্ধে দুদকের করা মামলায় সাজা হলে তাদেরকেও জেলে যেতে হতে পারে।
দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, বেগম জিয়া কারাগারে যাওয়ার আগে দলীয় ফোরামের বৈঠকগুলোতে এই মর্মে আলোচনা হয়েছিলো যে, সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি বিশ্লেষণ করেই ধাপে ধাপে অগ্রসর হবেন তারা। আগামী নির্বাচন নিয়ে সতর্কতার সাথে অগ্রসর হবে। নির্বাচনে অংশ গ্রহণের বিষয়ে ‘অতি উত্সাহ’ দেখানোর পক্ষপাতি নয়। নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে কোনো ধরনের সমঝোতা না হলে নির্বাচনের ছয় মাস আগে ‘সর্বাত্মক’ আন্দোলনের পথ বেছে নেওয়া হতে পারে। একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের সুযোগ সৃষ্টি করতে দলটি যেকোনো পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত হবে। সংলাপের দুয়ার উন্মুক্ত রেখে নির্বাচনী প্রক্রিয়ার প্রতিটি স্তরে ‘ইতিবাচক’ ভূমিকা রাখতে সামনে এগোনোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়। দলের নেতৃবৃন্দ এবং সিনিয়র আইনজীবীরা বেগম জিয়াকে আশ্বাস দিয়েছিলেন যে, তার সাজা হলে তিন-চার দিনের বেশি কারাগারে থাকতে হবে না। জামিনে মুক্ত হবেন তিনি।
গতকাল দলের একজন সিনিয়র নেতা ইত্তেফাককে বলেন, ‘কারামুক্তি নিয়ে অনিশ্চয়তার কারণে এবং তাকে সামনের দিনগুলোতে আরও জেলে থাকলে হলে নতুন পরিকল্পনার কথা ভাবতে হবে আমাদের। এ ক্ষেত্রে আমাদের করনীয় নিয়ে শিগগিরই বৈঠকে বসবো। আমরা ইতিমধ্যে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির কনফারেন্স রুমে ম্যাডামের আইনজীবীদের সঙ্গে বৈঠক করেছি। কিছু করনীয় ঠিক করেছি।’ ওই নেতা বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশনায় আমরা কাজ করছি। সকল স্তরের নেতা-কর্মী এখন খুব অ্যাক্টিভ এবং আগের চেয়েও সতর্ক। আগামী জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ ও দাবি আদায়ের বিষয়ে চুড়ান্ত কৌশল নির্ধারণ করতে কোন সমস্যা হবে না। সব অনিশ্চয়তা ও শঙ্কা কাটিয়ে সামনে এগিয়ে যাবে দল।’
দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, আমাদের নির্বাচনের কৌশল ঠিক আছে। আমাদের সামনে এখন দুটি চ্যালেঞ্জ হাজির হয়েছে। প্রথম চ্যালেঞ্জ হচ্ছে খালেদা জিয়াকে কারাগার থেকে মুক্ত করে আনা। আর দ্বিতীয়টি হচ্ছে আন্দোলনের মধ্যে বর্তমান সরকারকে অপসারণ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে বাধ্য করা। আমরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মাধ্যমে নিরপেক্ষ নির্বাচন দিতে সরকারকে বাধ্য করব। কিন্তু সরকার চায়, খালেদা জিয়াকে ছাড়া ভোট করতে। আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, বিএনপির চেয়ারপারসনকে ছাড়া দেশে কোনো নির্বাচন করতে দেওয়া হবে না।