ইকবাল খন্দকার
আমার এক বন্ধুকে যেই বললাম ‘ঠাট্টা’র বয়স ১১ বছর, সে যারপরনাই অবাক হলো। বলল, ‘ঠাট্টার বয়স মাত্র এগারো বছর হয় কী করে? আমি তো জানি আমার দাদার আমলেও ঠাট্টা চলত, নানার আমলেও ঠাট্টা চলত।’ এবার অবাক হওয়ার পালা আমার, ‘তোর দাদা-নানার আমলে ঠাট্টা চলত মানে? কীভাবে সম্ভব এটা?’ বন্ধু বলল, ‘আরে সম্ভব, সম্ভব। আমি নিজে আমার নানাকে নানির সঙ্গে ঠাট্টা করতে দেখেছি। তাহলে ঠাট্টার বয়স ১১ হয় কী করে?’ আমি এবার বন্ধুকে ভালো করে বোঝালাম, এই ঠাট্টা সেই ঠাট্টা নয়। এই ঠাট্টা হলো দৈনিক ইত্তেফাকের ফান ম্যাগাজিন ঠাট্টা। বন্ধু এবার তার আধময়লা দাঁত বের করে করে হাসতে হাসতে বলল, ‘আরে বেটা, তুই তো দেখছি সিরিয়াস হয়ে গেছিস। এত বছর ধরে যে ফান ম্যাগাজিন বের হচ্ছে, সেটা সম্পর্কে আমি জানব না, এটা কোনো কথা হলো? জানি সবই। তোর সঙ্গে একটু ‘ঠাট্টা’ করলাম।’ আমি চোখ বড় সাইজের মার্বেলের মতো গোলগোল করে বললাম, ‘আবারও সেই ঠাট্টা?’ পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন আমার এক বড়ভাই। তিনি হাঁটা থামিয়ে বললেন, ‘কীসের ঠাট্টার কথা হচ্ছে?’ আমরা কোনো জবাব দিলাম না। বড়ভাই বললেন, ‘ঠাট্টা জিনিসটা আমি একদমই পছন্দ করি না। কেউ ঠাট্টা করলে ইচ্ছে হয় মাথায় তুলে একটা আছাড় মারি।’ এবার বন্ধু বলল, ‘তাহলে তো একটা ফোন দিতে হয়।’ বড়ভাই বললেন, ‘ফোন দেবে! কাকে ফোন দেবে?’ বন্ধু বলল, ‘আপনি না বললেন কেউ ঠাট্টা করলে নাকি আপনার ইচ্ছে হয় মাথায় তুলে তাকে আছাড় মারতে?’ বড় ভাই বললেন, ‘তা তো ইচ্ছে হয়ই। কিন্তু তুমি ফোন কাকে দিচ্ছ, সেটা বলো।’ বন্ধু বলল, ‘ফোন দিচ্ছি ঠাট্টার সম্পাদককে। ঠাট্টাটা তো মূলত উনিই করেন, ঠিক কিনা?’ এবার বড়ভাইয়ের পা বেশ জোরেশোরেই সচল হলো। তিনি গেলেন তো গেলেন আর পিছনেও তাকালেন না। আমরা আবারও ঠাট্টার বিষয়ে আলাপ জুড়লাম। বন্ধু বলল, ‘একসময় ঠাট্টা শৃঙ্খলাবদ্ধ ছিল। এখন ঠাট্টা মুক্ত। বন্ধনহীন।’ আমি চুপ করে থেকে বন্ধুর কথার মর্মার্থ বোঝার চেষ্টা করলাম। কিন্তু ব্যর্থ হলাম। বন্ধুকে অনুরোধ করলাম ব্যাপারটা বুঝিয়ে বলার জন্য। বন্ধু বুঝিয়ে বলল, ‘আগে ঠাট্টা বের হতো ম্যাগাজিন আকারে। তার মানে পিন মেরে ঠাট্টার এক পাতাকে আরেক পাতার সঙ্গে যুক্ত করে রাখা হতো। আর এখন ঠাট্টার পাতাগুলো খোলা। বন্ধনহীন। শৃঙ্খলমুক্ত। ফাইন না?’ জি পাঠক, ঠাট্টাকে নিয়ে এখানে সেখানে ওখানে অনেক কথাই হয়, ভবিষ্যতেও হবে। কেন হবে? কারণ, ঠাট্টা ছিল, ঠাট্টা আছে, ঠাট্টা থাকবে। ঠাট্টা না থাকলে কী হবে জানেন তো? মানুষ হাসতে ভুলে যাবে। আর হাসতে ভুলে গেলে কী হবে জানেন তো? আমরা কারো দাঁত দেখতে পাব না। আর দাঁত দেখতে না পেলে কী হবে? টুথপেস্টের বিজ্ঞাপন কমে যাবে। কারণ, মানুষের মধ্যে এই ধারণা তৈরি হয়ে যাবে, দাঁত যদি অন্যকে দেখানোই না গেল, তাহলে কী দরকার দাঁত মেজে, কী দরকার টুথপেস্ট কিনে? তার মানে ঠাট্টা না থাকলে বিস্তর ঝামেলা। তাই ঠাট্টা থাকুক অন্তত কাল। শুভ জন্মদিন হে ঠাট্টা। আসো কেক কাটি