আসছে ২১ মার্চ বিশ্ব কবিতা দিবস। কবিতা লিখতে গিয়ে একজন কবির জীবনে ঘটে যাওয়া নানা ঘটনা নিয়ে লেখাটি লিখেছেন তারেকুর রহমান
ক্যাম্পাসের এক কোণে বিশাল একটা কড়ই গাছ রয়েছে। এই কড়ই গাছকে কেন্দ্র করে নানামুখী ব্যবসাও জমজমাট। ফুচকা, বাদামসহ নানা জিনিস এখানে পাওয়া যায়। এর মূল কারণ, এই কড়ই গাছের নিচে প্রেমিক-প্রেমিকারা আড্ডা দেয়। আবার এখানেই নানামুখী আড্ডা বসে। বন্ধুবান্ধবরা ক্লাসের ফাঁকে এসে এখানেই গালগল্প করে। বদরুল কয়েকজন বন্ধুদের নিয়ে আড্ডায় বসল। বদরুলের বদভ্যাস হলো হঠাত্ করে সবাইকে কবিতা শোনানো। কোনো ছন্দ-অলংকার নেই, তারপরও জোর করে সেই কবিতা শোনাবে। বন্ধুরা তার আচরণে বেশ বিরক্ত। কিন্তু তাকে এড়িয়ে চলতেও পারছে না।
বদরুল ফেসবুকে আইডি খুলল ‘কবি বদরুল’ নামে। প্রতিদিন একটা করে কবিতা পোস্ট দেওয়া তার রুটিনেই পরিণত হলো। পকেটে দু-চারটা কবিতা সবসময় থাকে। হঠাত্ করে কারো সঙ্গে দেখা হলেই সুযোগ মতো কবিতা আবৃত্তি করে শুনিয়ে দেয়। চরম বিরক্তিকর বদরুলের কবিতার উত্পাত দিন দিন বাড়তে লাগল। শত বুঝিয়েও তার কবিতা চর্চা থেকে বন্ধ রাখতে পারল না।
কলেজের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে বদরুল কবিতা আবৃত্তি করবে। কিন্তু কোনোক্রমেই কর্তৃপক্ষকে রাজি করাতে পারছে না। বদরুল নিজেকে নবীন উদীয়মান কবি হিসেবে পরিচয় দিল। কর্তৃপক্ষ সাফ জানিয়ে দিল—দেশে কাকের চেয়ে কবির সংখ্যা বেশি। বদরুলের মতো এরকম কবির কবিতা আবৃত্তির মঞ্চ এটা না। বদরুল নাছোড়বান্দা। তাকে একবার চান্স দেওয়ার জন্য আকুতি-মিনতি করতে লাগল। শেষমেশ কর্তৃপক্ষ বলল, ‘ঠিক আছে তোমাকে আবৃত্তির সুযোগ দেওয়া হবে, তবে একটা শর্ত আছে।’
‘কী শর্ত?’ জিজ্ঞেস করলো বদরুল।
‘শর্ত হলো খুব দ্রুত আবৃত্তি শেষ করতে হবে।’
‘আচ্ছা ঠিক আছে,’ এ কথা বলেই রাজি হয়ে গেল সে।
চুলে হালকা তেল দিয়ে ভালো করে আঁচড়িয়ে আয়নায় নিজেকে ভালো করে দেখল। বিদঘুটে কালারের একটা পাঞ্জাবি পরে নিল। কাঁধে একটা ব্যাগ ঝুলিয়ে মঞ্চে উঠল বদরুল। মাইকে ঘোষণা করা হলো বদরুলের নাম। বদরুল মাইক্রোফোন ধরেই কাঁপতে লাগল। আশপাশে অনেকেই তাকে সাহস দিল। বদরুল তার আবৃত্তি শুরু করল। ভুল উচ্চারণে আবৃত্তি শুরু করল বদরুল। কবিতার কোনো আগামাথা নেই। বদরুল তার আবৃত্তি চালিয়ে যেতে লাগল। কিছুক্ষণ পর কবিতার লাইনগুলো কেমন যেন পরিচিত মনে হলো।
‘আরে এটা তো রবি ঠাকুরের কবিতার লাইন!’
‘এটা তো নজরুলের কবিতার লাইন!’
বদরুল একেক কবির একেক কবিতার লাইন নিয়ে বিশাল এক কবিতা বানিয়ে এনেছে। সে বোঝেনি ওখানে উপস্থিত দর্শকদের বিশাল অংশ ওসব কবির কবিতার সঙ্গে পরিচিত। লোকজন বিরক্ত হয়ে উঠে যেতে লাগল। কয়েকজন হাতের পাশে যা পেল তাই ছুড়তে লাগল। কোনো রকম জান-প্রাণ নিয়ে বাড়ি ফিরল বদরুল।
কিছুদিন আত্মগোপনে থাকার পর বদরুলের কবিতা অত্যাচার আবার শুরু হলো। অবশ্য ততদিনে সবাই জেনে গেছে বদরুল কপি-পেস্ট কবি। এই কবির ওই কবির বিভিন্ন লাইন নিয়ে কবিতা লিখে বদরুল। বদরুলকে দেখলেই সবাই বলে, ‘ওই দেখ কপি-পেস্ট কবি যাচ্ছে।’
এসব কথা শুনে বদরুল লজ্জায় পড়ে না। বরং সে ভেংচি দিয়ে বলে, ‘তোমরা যদি পার এরকম কপি পেস্ট করে কবিতা লেখো দেখি? কপি-পেস্ট করতেও যোগ্যতা লাগে!’