মুহসিন ইরম
পা ঠ ক
একদিন সকালে ঠাট্টা হাতে রাস্তায় হাঁটতে বের হলাম। হাঁটছিলাম, পড়ছিলাম আর হাসছিলাম। হলো কী, আমার এক পুরোনো পাওনাদারও রাস্তায় বিপরীত দিক থেকে হেঁটে আসছিল। ভয়ে আমার গলা গেল শুকিয়ে, চেহারার রং হলো ফ্যাকাশে, স্পস্ট বুঝতে পারলাম বুকের বাঁ পাশটা ধুকপুক করছে। দূরত্বটা এমন যে দৌড় দিলে হিতে বিপরীত হবে, বুঝে ফেলবে সে। মাথাটা দ্রুত খাটাতে হলো। ভাগ্যিস হাতে ঠাট্টা ছিল। নিমিশে মুখের সামনে লম্বা করে ঠাট্টা মেলে ধরলাম। না, আমার চেহারা উদ্ধার করা অসম্ভব। ঠিকই, পাওনাদার লোকটা আমার ঠিক পাশ ঘেঁষে চলে গেল, অথচ এটা যে আমি অর্থাত্ তার পরম কাঙ্ক্ষিত দেনাদার ছিলাম বিন্দুমাত্র টের পেল না। এ যাত্রায় ঠাট্টার কল্যাণে বেঁচে গেলাম আমি।
ঠা ট্টা বি. স.
ঠাট্টা অফিসে বসে অতি মনোযোগে লেখা বাছাই করছিলাম। হঠাত্ পিয়ন এসে জানাল, স্যার! একজন আগন্তুক দেখা করতে চায় আপনার সাথে। সাধারণত এ সময়ে আমার পরিচিত কেউ দেখা করতে অফিসে আসে না। কিছুক্ষণ ভেবে লোকটাকে আসতে বলতে খবর পাঠালাম। মাঝবয়সী এক ভদ্রলোক। কথায় কথায় জানতে পারলাম লোকটার লেখালেখির প্রবল আগ্রহ আছে। আমি বললাম বেশ তো নিয়মিত লেখা পাঠান আর আজ কোনো লেখা এনে থাকলে জমা করে যান। লোকটা একটা খাম ধরিয়ে দিয়ে গেল। লেখা ভেবে রেখে দিলাম ডেস্কে। পরে সিরিয়াল মেনে তার খাম খুলে দেখি দুটো লেখা যা অতি নিম্নমানের এবং উেকাচ হিসেবে কয়েক হাজার টাকা। কী বিপদের কথা! টাকা দিয়ে লেখা প্রকাশ অনেক শুনেছি এবার নিজেরই সে অভিজ্ঞতায় পড়তে হলো। বিশ্বাস করেন এ ঠাট্টা নয় কোনো, ভারী বিপদের কথা।
হ কা র
ঠাট্টার প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। প্রতি রবিবার ইত্তেফাক পত্রিকা থেকে নীরবে এবং সতর্কভাবে ঠাট্টাকে সরিয়ে রাখি এবং কয়েকটা বান্ধা কাস্টমারের কাছে দু টাকা করে বিক্রি করি। বেচা-বিক্রি খারাপ না। তবে অনেক পাঠকই ব্যাপারটা ধরে ফেলে এবং ঠাট্টা বুঝে নেয়। ইশ রে, দেশে সতর্ক লোকজন একটু কম হইলে টুপাইস ইনকাম আরও কিছু বেশি করা যাইত…
লে খ ক
ঠাট্টায় আমি নিয়মিত লেখক কেবল না আদর্শ পাঠকও। রোজকার মতো সেদিনও ঠাট্টার আদ্যোপান্ত পড়ছিলাম। একটা লেখা পড়ে বেশি ভালো লেগে গেল। আকাশ-পাতাল কাঁপিয়ে হো হো করে হাসতে লাগলাম। লেখাটা সম্পূর্ণ পড়ে কেমন যেন পড়েছি পড়েছি গন্ধ পাচ্ছিলাম। অথচ এটা নতুন ঠাট্টা ছিল। অনেক পরে মনে পড়ল আরে এটা তো আমার দু বছর আগে অন্য একটি ট্যাবলয়েডে প্রকাশিত লেখা ছিল। এই লেখক নিজের মনে করে ঠাট্টায় পাঠিয়ে দিয়েছে।