ভারতের পিকাসো খ্যাত আধুনিক শিল্পকলার সেরা শিল্পী মকবুল ফিদা হুসেন। ভারতের স্বাধীনতা-পরবর্তী শিল্প-সংস্কৃতির জগতের অগ্রপথিক মকবুল ফিদা হোসেন সাধারণ্যে যিনি এম এফ হুসেন নামে বেশি পরিচিত। সমকালীন শিল্পীদের থেকে তিনি ছিলেন স্বতন্ত্র, কারণ তিনি রঙ-তুলি-ক্যানভাসের ভেতরে নিজেকে আটকে রাখেননি। তার প্রতিভার বর্ণচ্ছটায় আলোকিত হয়ে উঠেছিল শিল্পের বিভিন্ন মাধ্যম। মকবুল ফিদা হুসেন ছিলেন একাধারে কবি, ভাস্কর, বাড়ির নকশাকার এবং চিত্রনির্মাতা।
স্পেনের শিল্পী পাবলো পিকাসোর মতো মকবুল ফিদা হুসেনও ভারতীয় চিত্রকলায় নিয়ে আসেন বৈচিত্র্য। আর এজন্য তিনি আবহমান ভারতীয় শিল্প ঐতিহ্যের সঙ্গে ইউরোপীয় শিল্পশৈলী `কিউবিজম`-এর মিলন ঘটান। এর মাধ্যমেই আধুনিক ভারতীয় চিত্রকলা ও মকবুল ফিদা হুসেন হয়ে ওঠেন সমার্থক। কালজয়ী চিত্রশিল্পী মকবুল ফিদা হুসেন ১৯১৫ সালের আজকের দিনে পরাধীন ভারতের পান্ধারপুরে জন্মগ্রহণ করেন। আজ তার জন্মদিন।
শিল্পের যাদুকর মকবুল ফিদা হুসেন ১৯১৫ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর পরাধীন ভারতের তৎকালীন বোম্বে প্রেসিডেন্সি এলাকার পান্ধারপুরের খুব সাধারণ ঘরে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা ছিলেন তদানীনত্মন ইন্দর রাজ্যের (বর্তমানে মধ্য প্রদেশ) কাপড়ের কলের কর্মচারি। ছেলেবেলা থেকেই ফিদা যা দেখতেন, তা-ই এঁকে ফেলতেন। ছেলের আগ্রহ দেখে বাবা তাকে ভর্তি করলেন এক আর্ট স্কুলে। তবে সেখানে মকবুল ফিদা হুসেনের মন টিকেনি। ১৯৩৭ সালে বাবা চলে এলেন মুম্বাইয়ে, শুরু করলেন ঘি`এর ব্যবসায়। তিনি চাইলেন ছেলেও ব্যবসা দেখুক। কিন্তু ফিদা রাজি হলেন না। ভর্তি হলেন জে জে আর্ট স্কুলে। এ স্কুল থেকেই শুরু হলো তার শিল্পী জীবন। তবে তার জন্য সহজলোভ্য ছিল না ছবি আঁকার সরঞ্জাম। এ সবের জোগাড়ের জন্য তিনি সিনেমার পোস্টার এঁকেছেন, লিখেছেন সাইনবোর্ড পর্যন্ত। অনেক দিন পর্যন্ত শহরের গ্রান্ট রোডের একটি গ্যারেজ ছিল তার স্টুডিও। শত প্রতিকূলতাতেও থেমে থাকেননি ফিদা। থামিয়ে দেননি ছবি আঁকা। মাতৃস্নেহ বঞ্চিত ছিলেন ফিদা। হয়ত এ কারণেই তার চিত্রকর্মে খুঁজে পাওয়া যায় মাতৃরূপ। অসংখ্য নারীর চিত্রকর্মের মাধ্যমে মাতৃরূপের কল্পিত মুখখানি খুঁজে দেখার ছাপ পাওয়া যায়। মকবুল ফিদা হুসেনের অসংখ্য চিত্রকলার ভেতর উল্লেখযোগ্য হলো- `বিটুইন দ্য স্পাইডার এ্যান্ড দ্য ল্যাম্প`, `বীণা পেস্নয়ার`, `গণেশ`, `মাদার তেরেসা`, `মাদার ইন্ডিয়া`, `দ্য ওরামা` ইত্যাদি।
১৯৬৭ সালে Through the Eyes of a Painter নামে প্রথম চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন তিনি। যা বার্লিন চলচ্চিত্র উৎসবে দেখানো হয় এবং গোল্ডেন বিয়ার অর্জন করে। তিনি বলিউডের নায়িকাদের কাছ থেকে ছবি আঁকার অনুপ্রেরণা পান। তার প্রিয় নায়িকার তালিকায় ছিলেন আনুশকা শর্মা, অমৃতা রাও, মাধুরী দীক্ষিত, টাবু, বিদ্যা বালান ও উর্মিলা মাতন্ডাকার। মাধুরী দীক্ষিতকে নিয়ে নির্মাণ করেন ‘গজগামিনী’। ‘হাম আপকে হ্যায় কৌন’ দেখার পর বলিউডের এ শীর্ষ নায়িকার অন্ধ ভক্ত হয়ে যান তিনি। টাবুকে নিয়ে তৈরি করেছিলেন ‘মিনাক্ষী’।
শিল্পী হিসেবে মকবুল ফিদা হুসেন স্বীকৃতি পেয়েছেন অনেক। ১৯৫৫ সালে তিনি `পদ্মশ্রী` পদক লাভ করেন । ১৯৭১ সালে পাবলো পিকাসোর সঙ্গে সাওপাওলো সম্মেলনে অংশ নেন। ১৯৭৩ সালে লাভ করেন `পদ্মভূষণ` আর ১৯৯১ সালে তাকে সম্মানিত করা হয় `পদ্মবিভূষণ` দিয়ে।
মকবুল ফিদা হুসেনের শিল্পকর্ম সময়কে জয় করতে সক্ষম হয়েছে। ২০১১ সালের ৯ জুন তিনি লন্ডনে ৯৫ বছরে মৃত্যুবরণ করেন।