সাকিব আল হাসানের পরিবর্তে স্পিন আক্রমণের নেতৃত্ব দেবেন কে?-জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ শুরুর আগে এটাই ছিল টিম ম্যানেজমেন্টের অনেকগুলো দুশ্চিন্তার একটি। আর যতদূর বোঝা যাচ্ছিল, দায়িত্বটা মেহেদী হাসান মিরাজই পালন করবেন।
কারণ, হয়তো দলের ‘সিনিয়র’ স্পিনার তাইজুল ইসলামের কথাটা সবাই ভুলেই গিয়েছিল। কিন্তু, মনে মনে সংকল্পটা ঠিকই করে রেখেছিলেন বাঁ-হাতি এই স্পিনার। প্রিয় প্রতিপক্ষ জিম্বাবুয়েকে পেয়ে যেন বোলিং করলেন প্রাণ খুলে।
আর তাতেই মিললো চূড়ান্ত ফলাফল। প্রথম ইনিংসের মত তাই দ্বিতীয় ইনিংসেও বাংলাদেশের বোলিংয়ের নায়ক তাইজুল ইসলাম। প্রথম ইনিংসে ছয় উইকেট পাওয়ার পর দ্বিতীয় ইনিংসেও তিনি পেলেন পাঁচ উইকেট। দুই ইনিংস মিলে পেলেন ১১ উইকেট।
ক্যারিয়ারে এবারই প্রথমবারের মত টেস্টে ১০ কিংবা তার চেয়ে বেশি সংখ্যক উইকেট নিলেন তাইজুল। বাংলাদেশের টেস্ট ইতিহাসে চতুর্থ বোলার হিসেবে ম্যাচে দশ বা ততোধিক উইকেট নিলেন এই বাঁ-হাতি স্পিনার। আগের তিনজন হলেন এনামুল হক জুনিয়র, সাকিব আল হাসান ও মেহেদী হাসান মিরাজ। এর মধ্যে সাকিব আল হাসান এই কীর্তি গড়েছেন দু’বার। এই ১০ উইকেটই নেওয়ার রেকর্ড হয়েছে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। কাকতালীয় ব্যাপার হল, পাঁচবারই এই কীর্তি গড়া প্রত্যেকেই স্পিনার।
এমন দিনে তাই স্বয়ং কোচ স্টিভ রোডসও ২৬ বছর বয়সী তাইজুলের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে তৃতীয় দিনের খেলা শেষে সংবাদ সম্মেলনে এসে তিনি বলেন, ‘তাইজুল অসাধারণ বোলিং করেছে। টেস্টে ১১ উইকেট পাওয়া সহজ কথা নয়। ও নিজেকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের জন্য যোগ্য বলে প্রমাণ করেছে।’
সিলেটে তৃতীয় দিনে চা বিরতির পর অলআউট হওয়ার আগে জিম্বাবুয়ে করতে পারে ১৮১ রান। জিম্বাবুয়েকে আটকে ফেলার মূল কৃতিত্বটা তাইজুলের। ৬২ রানের বিনিময়ে পাঁচ উইকেট পেয়েছেন তিনি। সাজঘরে পাঠিয়েছেন ব্রেন্ডন টেলর, শন উইলিয়ামস, সিকান্দার রাজা, পিটার মুর ও টেন্ডাই চাতারাকে।
প্রথম ইনিংসে ১০৮ রান দিয়ে ছয় উইকেট নেন তিনি। এর অর্থ হল ১৭০ রানে ১১ উইকেট নিয়েছেন তিনি। এক টেস্টে এটা বাংলাদেশের তৃতীয় সেরা বোলিং ফিগার।
২০১৬ সালের অক্টোবরে ঢাকার মিরপুরে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে নিজের ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় টেস্টে বাংলাদেশের পক্ষে সেরা বোলিং পরিসংখ্যান ছিল ডান হাতি স্পিনার মেহেদি হাসান মিরাজের। ঐ ম্যাচে ১৫৯ রানে ১২ উইকেট শিকার করে বাংলাদেশের পক্ষে সেরা বোলিং করেছিলেন এই ডানহাতি স্পিনার।
মিরাজের পরই আছেন এনামুল হক জুনিয়র। ২০০৫ সালের জানুয়ারিতে ঢাকার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ২০০ রানে ১২ উইকেট নেন এনামুল। ২০ টেস্টের ৩৬ ইনিংস শেষে তাইজুল ইসলাম এখন ৮০ উইকেট। বাংলাদেশের টেস্ট ইতিহাসে তৃতীয় সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী বোলার। তার আগে আছেন কেবল সাকিব আল হাসান (১৯৬) ও মোহাম্মদ রফিক (১০০)। গতকালকেই তিনি ৭৮ উইকেট নেওয়া মাশরাফি বিন মুর্তজাকে ছাড়িয়ে গেছেন।