ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে ‘কৌশলগত দিক’ পরিবর্তন করতে এসেছে ইমপ্যাক্ট প্লেয়ারের নিয়ম, যা ইতোমধ্যে কার্যকর হয়েছে। চলতি মৌসুমের প্রথম ম্যাচে চেন্নাই সুপার কিংস গুজরাট টাইটান্সের বিপক্ষে আমবাতি রাইডুর বদলি হিসেবে তুষার দেশপান্ডেকে খেলিয়েছে ম্যাচের মধ্যেই।
তিনিই ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের ইতিহাসের প্রথম ইমপ্যাক্ট প্লেয়ার।
ওদিকে গুজরাট টাইটান্স অনেকটা বাধ্য হয়েই কেইন উইলিয়ামসনের জায়গায় সাই সুদার্শানকে একাদশে নিয়েছে। নিউজিল্যান্ডের অধিনায়ক উইলিয়ামসন বাউন্ডারি লাইনে ফিল্ডিং করতে গিয়ে আঘাত পেয়ে মাঠ ছেড়েছিলেন।
কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, ‘ইমপ্যাক্ট প্লেয়ার’ ব্যাপারটি আসলে কী?
ইমপ্যাক্ট প্লেয়ার কী?
ক্রিকেট খেলায় বদলি, এ ধারণাটা খুব বেশি নতুন নয়, আবার খুব বেশি পুরনোও নয়।
‘বদলি ফিল্ডার’ বহু আগে থেকেই ছিল।
আগে ছিল ‘বদলি রানার’। কোনো ব্যাটসম্যান যদি দৌঁড়াতে সক্ষম না হয়, তবে তিনি ব্যাট করা অবস্থায় পাশের ক্রিজে একজন রানার হিসেবে নামতে পারতেন।
সম্প্রতি এসেছে ‘কনকাশন সাব’, কোনো ক্রিকেটার যদি মাথায় আঘাত পান তবে তার বদলে তার ডিপার্টমেন্টের একজন ক্রিকেটার মাঠে নামতে পারবেন, একে বলে ‘লাইক ফর লাইক সাবস্টিটিউশন’।
এর মানে কোনো বোলার আঘাত পেলে তার বদলে একজন বোলারকে মাঠে নামাতে পারবে টিম ম্যানেজমেন্ট। কোনো ব্যাটসম্যান আঘাত পেলে একজন ব্যাটসম্যানকে নামাতে পারবে। অলরাউন্ডারের ক্ষেত্রেও একই নিয়ম।
ক্রিকেট ইতিহাসের প্রথম কনকাশন সাব ছিলেন অস্ট্রেলিয়ান টেস্ট ব্যাটসম্যান মার্নাস ল্যাবুশেইন। স্টিভ স্মিথ মাথায় চোট পাওয়ার পর তিনি অস্ট্রেলিয়ার হয়ে টেস্ট খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন।
তবে ‘ইমপ্যাক্ট প্লেয়ারে’র বিষয়টি আলাদা।
এই নিয়মে একাদশে থাকা একজন ক্রিকেটার, যিনি মাঠে ওই মুহূর্তে খেলছেন, তার পরিবর্তে একাদশের বাইরে থেকে একজন খেলোয়াড়কে মাঠে নামাতে পারবেন দলের অধিনায়ক।
এতে যে ক্রিকেটারের বদলে একজন নতুন খেলোয়াড় নামবেন, তাকে অসুস্থ হতে হবে না। কিংবা কোনো রকম সমস্যায় থাকতে হবে না।
খেলার ফলাফলের পরিবর্তনের জন্য প্রয়োজন মনে করলে কোচ কিংবা অধিনায়ক নতুন একজন খেলোয়াড়কে মাঠে নামাতে পারবেন।
যেহেতু ফলাফল পরিবর্তনে প্রভাব রাখবেন বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে, সেজন্য তাকে বলা হচ্ছে ‘ইমপ্যাক্ট প্লেয়ার’।
ইমপ্যাক্ট প্লেয়ার বোলার বা ব্যাটার বা ফিল্ডার- সব ক্ষেত্রেই মাঠে নামানো যাবে।
এর মৌলিক ধারণা অনেকটা ফুটবল, রাগবি, বাস্কেটবলের মতো খেলা থেকেই নেয়া হয়েছে।
ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ কর্তৃপক্ষ ইমপ্যাক্ট ক্রিকেটারের ধারণাটি আইপিএল নিলামের আগেই ঘোষণা করেছিল।
এতে খেলার ‘কৌশলগত দিকে’ পরিবর্তন আসবে বলে মনে করে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের কর্তাব্যক্তিরা।
কিভাবে কাজ করবে ইমপ্যাক্ট ক্রিকেটার
নতুন ব্যবস্থায় দলগুলোর একাদশ ঘোষণার সময় পাঁচজন বদলি ক্রিকেটারের নাম দিতে হবে।
ম্যাচের যেকোনো সময় এই পাঁচজন ক্রিকেটারের মধ্যে একজনকে একাদশের কারো বদলে ম্যাচে নেয়া যাবে।
তবে যদি কোনো দলে চারজন বিদেশী ক্রিকেটার থাকেন, সেক্ষেত্রে ইমপ্যাক্ট ক্রিকেটারকে অবশ্যই ভারতীয় হতে হবে।
এই নিয়ম রাখার কারণে কোনো দলে চারজনের বেশি বিদেশী ক্রিকেটার খেলতে পারবেন না।
ইমপ্যাক্ট ক্রিকেটার তিনটি সময় মাঠে নামতে পারবেন,
যখন ইনিংস শুরু হয়, যখন ওভার শেষ হয়, যখন কোনো উইকেট পড়ে বা ব্যাটসম্যান রিটায়ার করেন।
তবে ফিল্ডিং দল উইকেট পড়ার পরে ইমপ্যাক্ট প্লেয়ার নামালে তিনি ওই ওভারে বল করতে পারবেন না।
যদি কোনো ক্রিকেটার ফিল্ডিংয়ের মাঝে চোটও পান, সেক্ষেত্রে তার বদলে যিনি নামবেন তিনি ওই নির্দিষ্ট ওভারে বল করতে পারবেন না।
ইমপ্যাক্ট ক্রিকেটার তার বাইরে বোলিং কোটার সম্পূর্ণ চার ওভারই বল করতে পারবেন, যদি বৃষ্টি বা অন্য কোনো কারণে ইনিংস সংক্ষিপ্ত না হয়।
ব্যাটসম্যান হিসেবে নামলেও যেকোনো সময় নামতে পারবেন ইমপ্যাক্ট ক্রিকেটার।
যে ক্রিকেটারের বদলে ইমপ্যাক্ট ক্রিকেটার মাঠে নামবেন, তিনি মাঠে আর কোনও ভূমিকা পালন করতে পারবেন না।
ইমপ্যাক্ট ক্রিকেটার মাঠে আনার আগে অধিনায়ককে আম্পায়ারকে জানাতে হবে যে, সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে, তখন আম্পায়ার মাথার ওপর ক্রসের মতো করে হাত দিয়ে সংকেত দেবেন যে ইমপ্যাক্ট ক্রিকেটার এখন মাঠে নামবেন।
এবারের ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে টসের পরে একাদশ ঘোষণার সিদ্ধান্তও নেয়া হয়েছে।
এটাও খেলার কৌশলগত চিন্তায় পরিবর্তন আনবে।
অনেক মাঠেই আগে বোলিং বা ব্যাটিং করে সুবিধা পাওয়া যায়, সেক্ষেত্রে দল টসের পরে সিদ্ধান্ত নিতে পারবে কাকে খেলালে সুবিধা আদায় করতে পারবে।
ইমপ্যাক্ট ক্রিকেটার নিয়ে কে কী বলছেন
ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন গুজরাট টাইটান্সের অধিনায়ক হার্দিক পান্ডিয়া মনে করেন, এই নতুন নিয়ম অধিনায়কদের জীবন কঠিন করে দিচ্ছে।
আগে শুধু বোলার আর ফিল্ডিং ঠিক করতে হতো, এখন আবার এই বাড়তি দায়িত্ব অধিনায়কের কাঁধে।
হার্দিক পান্ডিয়া সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ‘সত্যি বলতে কাজটা কঠিনই। এখানে অনেক অপশন এবং আপনাকে সঠিক অপশনই বাছতে হবে। এতে করে দলের ক্ষতিও হতে পারে, কিন্তু ঝুঁকি নিতে হবে আপনাকে।’
ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের আনুষ্ঠানিক বিশ্লেষণ অনুষ্ঠানে ভারতের সাবেক ক্রিকেটার সুনীল গাভাস্কার বলেছেন, ক্রিকেটারদের কিছুটা সময় লাগবে এটার সাথে মানিয়ে নিতে।
গতরাতে লক্ষ্ণৌর সুপার জায়ান্টস এক বলের জন্য ইমপ্যাক্ট ক্রিকেটার কৃষ্ণাপ্পা গৌথামকে নামিয়েছিল এবং তিনি এক বলে ছক্কা মেরেছেন।
তিনি নেমেছিলেন আয়ুশ বাদোনির বদলে, যিনি এর আগেই ৭ বলে ১৮ রান তুলেছিলেন।
পরে বল হাতে কৃষ্ণাপ্পা গৌথাম চার ওভারে ২৩ রান দেন।
উইজডেন ইন্ডিয়ার হেড অফ কনটেন্ট অভিষেক মুখার্জীর মনে করেন, ‘লক্ষ্ণৌর মতো দল ইমপ্যাক্ট ক্রিকেটারের সুবিধা বেশি ভোগ করতে পারবে। কারণ তাদের হাতে অলরাউন্ডার আছেন বেশ কয়েকজন।’
তিনি বলেন, ‘যদি এটা ক্রিকেটে স্থায়ী হয়, তাহলে এই নিয়মের কারণে ক্রিকেট খেলা বদলে যাবে।’
ক্রিকেট সাংবাদিক বোরিয়া মজুমদার একটি টুইটে বলেছেন, ‘ইমপ্যাক্ট ক্রিকেটার ব্যবহারের সবচেয়ে ভালো উপায় হলো তিনজন বিদেশী মাঠে নামানো এবং চতুর্থ জনকে ইমপ্যাক্ট ক্রিকেটার হিসেবে ব্যবহার করা। এবং একজন বিশেষায়িত বোলার অথবা ব্যাটার ব্যবহার করা এবং তার বদলে আরেকজন বিশেষায়িত বোলার অথবা ব্যাটার খেলানো।’
সূত্র : বিবিসি