• শনিবার, ০৪ জানুয়ারী ২০২৫, ০৫:৩৫ অপরাহ্ন

হাজারো সূর্যমুখীর দোলের সৌন্দর্যে বিমোহিত দর্শনার্থীরা

নিউজ ডেস্ক
আপডেটঃ : রবিবার, ৯ এপ্রিল, ২০২৩

দূর থেকে দেখলে মনে হবে যেন বিশাল আকারের হলুদ গালিচা বিছিয়ে রাখা হয়েছে। কাছে গেলে চোখে পড়ে হাজারো সূর্যমুখী ফুল। বাতাসে দোল খেয়ে ফুলগুলো যেন আমন্ত্রণ জানাচ্ছে সৌন্দর্য উপভোগ করার। তাই তো দিনভর এই সূর্যমুখী বাগানে ভিড় করছেন কয়েক’শ মানুষ। দুপুরের পর থেকেই সূর্যমুখী বাগানে নানান বয়সী মানুষের মিলনমেলায় পরিণত হয়। সূর্যমুখী ফুলের এ বাগানটি এখন সৌন্দর্য প্রেমীদের কাছে দর্শনীয় স্থানে পরিণত হয়েছে। কেউ বন্ধুদের সঙ্গে আসছেন, কেউ বা আসছেন পরিবার পরিজন নিয়ে। স্মৃতি ধরে রাখতে নানা ভঙ্গিতে মুঠোফোন কিংবা ক্যামেরায় ছবি বা সেলফীও তুলছেন তারা।

মনোমুগ্ধকর এই দৃশ্যটির দেখা মেলে গাজীপুরের কালীগঞ্জ সরকারী শ্রমিক কলেজের সামনে। টঙ্গী-কালীগঞ্জ-ঘোড়াশাল সড়কের পাশে পৌরসভার তুমলিয়া এলাকায় তেলজাতীয় ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রণোদনায় কৃষক সুকুমার পালমার প্রদর্শণী। এখানে ৫০ শতাংশ জায়গা জুড়ে গেল বছরের ডিসেম্বরের ১০ তারিখে বপন করা হয়েছে হাইসান-৩৩ জাতের কয়েক হাজার সূর্যমুখী ফুলের বীজ। প্রায় প্রতিটি গাছে ফুল ফুটেছে।

দর্শনার্থীদের ভিড়ে বাগানটির রক্ষণাবেক্ষণ করতে হিমশিম খাচ্ছে কৃষক সুকুমার পালমা। কেউ যেন বাগানের ভেতর প্রবেশ বা পাশে দাঁড়িয়ে ছবি তুলতে গিয়ে বাগান নষ্ট না করেন এবং ফুলে হাত না দেন এজন্য দিনের বেলায় পাহাড়ায় বসানো হয়েছে লোক। এত কিছুর পরও ঠেকানো যাচ্ছে না। তবে বাগান রক্ষায় করা হয়েছে প্রবেশ ফি। ২০ টাকায় ভেতরে প্রবেশ করে কয়েকটি ছবি তুলার সুযোগ করে দিয়েছেন কৃষক।

সরেজমিনে সূর্যমুখী বাগানে গিয়ে উৎসবমুখর পরিবেশ দেখা যায়। সব বয়সী দর্শনার্থীরা এখানে ঘোরাঘুরি করছেন, ছবি তুলছেন। কেউ কেউ বাধা উপেক্ষা করে বাগানে নেমে যাচ্ছেন।

বাগানের রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করছেন একজন মালি। তিনি বলেন, প্রতিদিন কয়েক’শ মানুষ এ ফুলের বাগান দেখতে, ছবি তুলতে আসেন। শুক্রবার-শনিবার সাপ্তাহিক ছুটির দিনে এ ভিড় বাড়ে। কেউ যাতে ফুলে হাত না দেন বা বাগানের ক্ষতি না করেন তা দেখাশোনা করি। তবে বাগানে প্রবেশের জন্য ২০ টাকা ফি নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে কিছুটা হলেও কৃষকের উপকার হয়েছে। অনেকের মাঝে বাগানে প্রবেশে অনাগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে। সারাদিনে মোটামুটি ভালো আয় হচ্ছে বলেও তিনি জানান। ভেতরে প্রবেশ করে কয়েকটি ছবি তোলার সুযোগ করে দিয়েছেন কৃষক।

কৃষক সুকুমার পালমা বলেন, আমি পর পর দুইবার সূর্যমুখী ফুলের চাষ করেছি। সূর্যমুখী ফুলের চাষ একটি সৌখিন জিনিস। কারণ মানুষ ফুল খুব পছন্দ করেন। তাছাড়া রাস্তার পাশে এবং কলেজের সামনে হওয়ায় মানুষ বাগানে খুব বিরক্ত ও সমস্যা করেন। মানুষ ফুল চুরি করে নিয়ে যায়। তাই ভেতরে প্রবেশ নিষিদ্ধ করে ছিলাম, তবে ২০ টাকা টিকিট মূল্যে প্রবেশদ্বার খুলে দেওয়া হয়েছে। এতে করে মানুষ এখন ছবি তুলতে পারছে।

তিনি আরও বলেন, আমি ৫০ শতক জমিতে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করেছি। আগামীতে করলে আরো বৃহৎ আকারে করবো। তবে স্থানীয় কৃষি অফিসের লোকজন আমাকে সব ধরণের সহযোগীতা করছে। তারা মাঝে মধ্যে আমার এই বাগান পরিদর্শনে আসেন।

দর্শনার্থী রিয়াদ হোসেন বলেন, ফুল হচ্ছে সৃষ্টিকর্তার অন্যতম সৃষ্টি এবং ভালবাসার প্রতীক। এ ফুল পৃথিবীতে আরো সুন্দর করে তুলে। আমি হঠাৎ করে এদিক দিয়ে যাচ্ছিলাম তো এখানে দেখি সূর্যমুখী ফুলের বাগান। তাই আমারও আকর্ষণ হলো এই বাগান ঘুরে দেখার জন্য। তাই এখানে আসা। এই ফুলের বাগানটি অসাধারণ সুন্দর। মোটামুটি এটি একটি অস্থায়ী বিনোদন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে।

দর্শনার্থীরা বলেন, এদিক দিয়ে আসতেছিলাম। পড়ে রাস্তার পাশে দেখি খুব সুন্দর সূর্যমুখী ফুলের বাগান। তাছাড়া বাচ্চাও কান্না করতেছিল বাগানে আসবে, তাই আসলাম ঘুড়ে দেখলাম ও ছবি তুললাম।

আরেক দর্শনার্থী বলেন, আমার ছেলে রাফসান সূর্যমুখী ফুলের বাগান দেখবে বলে আমার কাছে বায়না ধরেছিল, তাই আসলাম। তবে এখানে খুব সুন্দর পরিবেশ তাই ভাল লেগেছে।

কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবীদ ফারজানা তাসলিম বলেন, সূর্যমুখী ফুলের একটি পাগল করা সৌন্দর্য রয়েছে। যা দর্শনার্থীদের সব সময় মুগ্ধ করে, আকর্ষণ করে। স্থানীয়ভাবে যে প্রদর্শনীগুলো আমরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের আওতায় বাস্তবায়ন করছি, এর সবগুলোতেই দর্শনার্থীদের খুব ভিড়। তারা সেখান থেকে মানুষিক প্রশান্তি নিচ্ছেন।

কৃষিবীদ ফারজানা তাসলিম আরও বলেন, সূর্যমুখী ফুলের তেলের একটি বাড়তি সুবিধা রয়েছে। এটা কোলেস্ট্রোরেল ফ্রী এবং অন্যান্য পুষ্টি উপাদানগুলোও বেশি তাই এটা খাওয়াও আমাদের দরকার।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ