• সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:২৬ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম:

মানসিক বিকারগ্রস্থ সেই মজনু কারাগারে ঝগড়া মারামারি করেন, খোঁজ নেয়নি পরিবারের কেউ

নিউজ ডেস্ক
আপডেটঃ : রবিবার, ৭ মে, ২০২৩

স্বভাব চরিত্র পাগলাটে। মানসিক বিকারগ্রস্থ। এর আগে আদালতে পাগলামি করেছেন, কখনও পুলিশকে গালমন্দ করেছেন, কখনও আইনজীবীদের মারতে উদ্ধত হয়েছেন। আবার কখনও কারাগারে বন্দিদের সঙ্গে মারামারিতে জড়িয়ে পড়েন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ধর্ষণ মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি মজনু। মো. মজনু বর্তমানে গাজীপুরের কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে বন্দি রয়েছেন। সেখানে তিনি নিজের থাকার জায়গা পরিচ্ছন্ন রাখার কাজ করেন।

কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারের একটি সূত্র জানায়, মজনু এখন সাজাপ্রাপ্ত কয়েদি। কারাবিধি অনুযায়ী সশ্রম কারাদণ্ডের যেকোনো কয়েদিকে কারাগারে কাজ করতে হয়। তবে তিনি একজন মানসিক বিকারগ্রস্ত মানুষ। অনেকটাই পাগলাটে। তিনি কারাগারের মধ্যে প্রায় সময়ই অন্য বন্দিদের সঙ্গে ঝগড়া বিবাদ এমনকি মারামারিতে জড়িয়ে পড়েন। তাই তাকে কোনো কাজের দায়িত্ব দেওয়া হয়নি। তবে কারাগারে তিনি নিজের জায়গা ঠিকমত পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে রাখার দায়িত্ব পেয়েছেন।

কারাগারের ওই সূত্রটি বলছে, কারাগারে সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর নাস্তা করেন মজনু। পরে ঝাড়ু-মোছার কাজ করেন। এখন পর্যন্ত তার পরিবারের কেউ খোঁজ খবর নিতে আসেনি বলে জানায় কারাগারের ওই সূত্রটি। কারাগারের দেওয়া খাবার খান আর কারাগারের দেওয়া কয়েদির পোশাক পরেন মজনু।

এ ব্যাপারে কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারের জেলার মো. লুৎফর রহমান বলেন, ‘মজুন এখন কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে বন্দি আছেন। কারাবিধি অনুযায়ী তিনি সব সুযোগ সুবিধা পেয়ে থাকেন।’

২০২০ সালের ৫ জানুয়ারি সন্ধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী ক্যাম্পাস থেকে কুর্মিটোলায় এক বান্ধবীর বাসায় যাওয়ার সময় একটি ঝোপের মধ্যে তাকে ধর্ষণ করেন মজনু। এ ঘটনার পরের দিন ওই শিক্ষার্থীর বাবা বাদী হয়ে রাজধানীর ক্যান্টনমেন্ট থানায় মামলা করেন। মামলার দুদিন পরই ক্যান্টনমেন্ট থানার শেওড়া বাসস্ট্যান্ড থেকে মজনুকে গ্রেপ্তার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ১৬ জানুয়ারি আসামি ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় আদালতে দোষ স্বীকার করে জবানবন্দি দেন। তদন্ত শেষে ১৬ মার্চ ডিবি পুলিশের পরিদর্শক আবু সিদ্দিক ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে এ মামলার অভিযোগপত্র (চার্জশিট) জমা দেন। আদালত চার্জশিট আমলে নেওয়ার পর ২৬ আগস্ট আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭। ২০ সেপ্টেম্বর এ মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়ে ৫ নভেম্বর শেষ হয়। মামলার চার্জশিটভুক্ত মোট ২৪ সাক্ষীর মধ্যে ২০ জন আদালতে সাক্ষ্য দেন। ১২ নভেম্বর আসামির আত্মপক্ষ সমর্থন এবং রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক শেষে ২০ নভেম্বর রায় ঘোষণার দিন ধার্য করেন আদালত।

মাত্র ১৩ কার্যদিবসের মধ্যে ওই বছরের ২০ নভেম্বর এ মামলার রায় দেওয়া হয়। মামলায় আসামি মজনুকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭ এর বিচারক মোসা. কামরুন্নাহার। রায়ে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডের পাশাপাশি ৫০ হাজার টাকা জরিমানা এবং অনাদায়ে আরও ছয় মাসের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। রায় ঘোষণার পর মজনুকে সাজা পারোয়ানা দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়।

এ ব্যাপারে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭ এর স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটর আফরোজা ফারহানা আহম্মেদ (অরেঞ্জ) বলেন, ‘রায় হওয়ার পর থেকে মজনু কারাগারে রয়েছে। শুনেছি তার পক্ষে কেউ উচ্চ আদালতে আপিল করেনি।’ আফরোজা ফারহানা আহম্মেদ (অরেঞ্জ) বলেন, ‘তার (মজনু) যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায়ে আমরা সন্তুষ্ট। ভুক্তভোগী ওই শিক্ষার্থী নিজেই মজনুকে শনাক্ত করেছেন। আমরা আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণে সক্ষম হয়েছি। যে ধারায় চার্জ (অভিযোগ) গঠন করা হয়েছিল, সে অনুসারে আদালত আসামিকে সর্বোচ্চ সাজা দিয়েছেন। মাত্র ১৩ কার্যদিবসে চাঞ্চল্যকর এ মামলাটির রায় দিয়েছিলেন।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ