বিশ্বকাপের জন্য কতটা প্রস্তুত বাংলাদেশ। এর উত্তর আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ থেকেই খুঁজে নেয়ার পরিকল্পনা করেছে টিম ম্যানেজমেন্ট। সামনে শুধু আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজ। এ দুই সিরিজের পর এশিয়া কাপের দল গড়বে বাংলাদেশ। সেই দলটাই মোটামুটি ভারত বিশ্বকাপের দল হয়ে দাঁড়াবে।
তাই এখন থেকে দলের পরিকল্পনা ঠিক না করলে উপায় নেই। সঙ্গে ওই দলের সবাই কেমন খেলছে সেটাও দেখে নেয়া দরকার। এই দেখার জায়গা থেকেই আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধ কন্ডিশন কঠিন চ্যালেঞ্জের ছিল বাংলাদেশের জন্য। প্রথম ম্যাচ বৃষ্টিতে পরিত্যক্ত হওয়ায় নিজেদের পরখ করার সুযোগ হয়নি। তবে দ্বিতীয় ম্যাচ জিতে নিজেদের দেখে নেয়ার প্রশ্নে একটা ভাল উত্তর পেয়েছেন তামিম ইকবালরা।
বিশ্বকাপ সবসময় স্পোর্টিং উইকেটেই হয়ে থাকে। বর্তমান ক্রিকেটের রেশ ধরলে ওই উইকেটগুলোতে তিনশো রান সাধারণ ব্যাপার। সেখানে আগে ব্যাট করলেও তিনশো পার স্কোর আর পরে ব্যাট করলে তিনশো তাড়া করারও মানসিকতা থাকতে হবে। বাংলাদেশ তিনশো তাড়া করে জিতেছে আগেও। সেটা বিশ্বকাপের মঞ্চেই।
২০১৯ বিশ্বকাপে উইন্ডিজের দেয়া ৩২২ রান তাড়া করে জয় এসেছিল। এর আগের বিশ্বকাপে (২০১৫) স্কটল্যান্ডের বিপক্ষেও ৩২২ রান তাড়া করে জিতেছিল বাংলাদেশ। এছাড়া ২০১৯ বিশ্বকাপেই অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৩৩৩ ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ৩৩০ রানের রেকর্ড আছে বাংলাদেশের। তাই বড় মঞ্চে ভালো উইকেটে বড় রান করার সামর্থ্য বাংলাদেশ দেখিয়েছে। তবে সেসব ইনিংষ ছিল ৫০ ওভারের। ৪৫ ওভারে ৩২০ রান আগে কখনই করেনি বাংলাদেশ।
তাই আয়ারল্যান্ডের দেয়া টার্গেট ছিল বেশ চ্যালেঞ্জের। দ্বিতীয় ওয়ানডেতে সেই রান তাড়া করে জিতে চ্যালেঞ্জটা জিতল তামিম ইকবালরা। সঙ্গে সবচেয়ে বেশি রান তাড়া করে জেতার দ্বিতীয় রেকর্ডও গড়েছে। তাতে বিশ্বকাপের বছর বিরুদ্ধ কন্ডিশনেও এভাবে জতার প্রমাণ রাখল বাংলাদেশ। এই অভিজ্ঞতা অবশ্যই ভারতের পরিচিত কন্ডিশনে বাংলাদেশকে বেশ উপকার দিবে।
রান তাড়ার কাজটা সেরেছেন ব্যাটাররা। আর এ বিভাগেই বড় পরীক্ষাটা দিতে হয়েছে বাংলাদেশকে। এমনিতে বড় রান তাড়ার সময় সব দলই দলের সেরা ব্যাটারদের ব্যাটে তাকিয়ে থাকে। তেমনি তামিম-সাকিবদের দিকেই নজর ছিল কালও। কিন্তু দুজনই ব্যর্থ হয়েছেন। প্রশ্ন থাকে এমন সময়ে তাহলে কি হবে। ঠিক জবাবটাই দেয়িছে বাংলাদেশ। তরুনরা এগিয়ে এসেছেন দায়িত্ব নিতে। নাজমুল হোসেন শান্ত ও তাওহিদ হৃদয় মিলে শঙ্কা দূর করেছেন।
দুজনে গত বিপিএলে সিলেট স্ট্রাইকার্সের হয়ে টানা ভালো জুটি গড়েছিলেন। সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে জয় ছিনিয়ে আনেন। শান্তর ক্যারিয়ারের প্রথম ওয়ানডে সেঞ্চুরি ৯৩ বলে ১৭৭ রান ও হৃদয়ের ৫৮ বলে ৬৮ রানের দ্বিতীয় ফিফটি বাংলাদেশকে নতুন দিকপথও বাতলে দিয়েছে। দেশের মাটিতে গত আয়ারল্যান্ড সিরিজ থেকে যা চলমান। একজন নির্ভর নয় দল নির্ভর সাফল্য, যেখানে দলের প্রয়োজনে যে কোন দিন যে কেউ হাল ধরবেন। যেমন প্রথম ম্যাচে হাল ধরেছিলেন মুশফিকুর রহিম ও মেহেদী হাসান মিরাজ।
বিশ্বকাপের প্রস্তুতিটা যদি গত আয়ারল্যান্ড সিরিজ থেকে ধরা হয় তবে এখন পর্যন্ত দারুন গতিতে এগোচ্ছে বাংলাদেশ। দেশের মাটিতে পেসাররা এগিয় এসেছেন। বিদেশে বিপদের সময়ে ব্যাটাররা বুক চিতিয়ে লড়ছেন। এমন সাফল্যে দলটাকেও বেশ ব্যালান্সড মনে হচ্ছে। সব মিলিয়ে বিশ্বকাপের প্রস্তুতির প্রশ্নে এখনও হয়ত সঠিক জবাব মিলেছে বলা যাবে না তবে শুরুটা ভাল এটাই বলতে হয়।