• বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:৩৯ পূর্বাহ্ন

চরমভাবাপন্ন আবহাওয়ায় ৫০ বছরে ২০ লাখ মানুষের মৃত্যু, ৪.৩ ট্রিলিয়ন ডলার অর্থনৈতিক ক্ষতি

নিউজ ডেস্ক
আপডেটঃ : মঙ্গলবার, ২৩ মে, ২০২৩

ডব্লিউএমও’র সেক্রেটারি জেনারেল পেটেরি তালাস বলেন, দুর্ভাগ্যবশত আবহাওয়া, জলবায়ু এবং পানি-সম্পর্কিত বিপর্যয়ের ধাক্কা বহন করে সবচেয়ে দুর্বল সম্প্রদায়গুলো। এর উদাহরণ হিসেবে তিনি সম্প্রতি মিয়ানমার ও বাংলাদেশের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’র প্রসঙ্গ তুলে ধরেন।

২০২৩ সালের ১৫ মে বাংলাদেশের সেন্টমার্টিন দ্বীপে ঘূর্ণিঝড় মোখায় নিজের বাড়ির ক্ষয়ক্ষতি ঘুরে দেখছেন জনৈক নারী

 

বিগত ৫০ বছরে চরমভাবাপন্ন আবহাওয়া, জলবায়ু ও পানি-সম্পর্কিত ১২০০০ বিপর্যয়ের কারণে বিশ্বজুড়ে ২০ লাখেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা (ডব্লিউএমও)। খবর ডেইলি সাবাহর।

সোমবার ডব্লিউএমও’র প্রকাশিত নতুন পরিসংখ্যানে আরও বলা হয়েছে, চরমভাবাপন্ন আবহাওয়া-সম্পর্কিত বিপর্যয়গুলোর কারণে বিশ্বে ৪.৩ ট্রিলিয়ন ডলার অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়েছে।

সোমবার (২২ মে) থেকে শুরু হয়েছে ডব্লিউএমও’র ১৯তম কংগ্রেস। ২০২৭ সালের মধ্যে চরমভাবাপন্ন আবহাওয়াজনিত বিপর্যয় মোকাবিলার ক্ষেত্রে পূর্ব সতর্কতা জারির জন্য আরও উদ্যোগ নিতে হবে, এমন বার্তা সঙ্গে নিয়ে সদস্য দেশগুলোকে নিয়ে সেশন শুরু করেছে সংস্থাটি।

জেনেভা-ভিত্তিক এই সংস্থাটি ইতোপূর্বেও বারবার মানবসৃষ্ট জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়ে সতর্ক করেছে যে, বৈশ্বিক তাপমাত্রা বাড়তে থাকার ফলে বন্যা, খরা, ঘূর্ণিঝড়, হারিকেনের মতো বৈরী আবহাওয়াজনিত বিপর্যয় বৃদ্ধি পাচ্ছে।

ডব্লিউএমও জানায়, পূর্ব সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে জলবায়ু ও অন্যান্য আবহাওয়া-সম্পর্কিত বিপর্যয়ে মৃত্যুর পরিমাণ কমিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে।

পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ১৯৭০ সাল থেকে ২০২১ সালের মধ্যে সবচেয়ে বেশি অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে- মোট ১.৭ ট্রিলিয়ন ডলার; এবং প্রতি দশটি মৃত্যুর নয়টিই ঘটেছে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে।

ডব্লিউএমও’র সেক্রেটারি জেনারেল পেটেরি তালাস বলেন, দুর্ভাগ্যবশত আবহাওয়া, জলবায়ু এবং পানি-সম্পর্কিত বিপর্যয়ের ধাক্কা বহন করে সবচেয়ে দুর্বল সম্প্রদায়গুলো। এর উদাহরণ হিসেবে তিনি সম্প্রতি মিয়ানমার ও বাংলাদেশের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’র প্রসঙ্গ তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, “অতীতে এ ধরনের দুর্যোগে মিয়ানমার ও বাংলাদেশ, দুটি দেশেই হাজার থেকে শুরু করে লাখো মানুষের মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু পূর্ব সতর্কতা এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার ফলে প্রাণহানির পরিমাণ উল্লেখযোগ্য হারে কমিয়ে আনা গেছে।”

ডব্লিউএমও’র ‘আবহাওয়া, জলবায়ু ও পানি-সম্পর্কিত বিপর্যয় থেকে মৃত্যু ও অর্থনৈতিক ক্ষতি’ শীর্ষক প্রকাশনার আপডেট হিসেবে নতুন তথ্যগুলো পাওয়া গিয়েছে।

ডব্লিউএমও বলছে, মানুষের মৃত্যুর প্রধান কারণ তীব্র তাপমাত্রা এবং অর্থনৈতিক ক্ষতির প্রধান কারণ হলো বন্যা।

ডব্লিউএমও’র হিসাব অনুযায়ী, আফ্রিকায় বন্যা ও জলোচ্ছ্বাসসহ আবহাওয়া, জলবায়ু ও পানি-সম্পর্কিত ১৮০০র বেশি দুর্যোগ সংঘটিত হয়েছে এবং ৭৩৩,৫৮৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ২০১৯ সালে সংঘটিত ট্রপিক্যাল সাইক্লোন ‘ইদাই’ এর ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এই ঘূর্ণিঝড়ের ফলে ২.১ বিলিয়ন ডলার ক্ষতি হয়।

দক্ষিণ-পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে প্রায় ১৫০০ দুর্যোগ আঘাত হেনেছে; যার ফলে ৬৬,৯৫১ জনের মৃত্যু এবং ১৮৫.৮ বিলিয়ন ডলার অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়েছে।

এশিয়া অঞ্চলে সংঘটিত ৩৬০০ দুর্যোগে ৯৮৪,২৬৩ জনের মৃত্যু এবং ১.৪ ট্রিলিয়ন ডলার অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়েছে। এসব ক্ষয়ক্ষতির বেশিরভাগই হয়েছে ঘূর্ণিঝড়গুলোর প্রভাবে।

দক্ষিণ আমেরিকা অঞ্চলে সংঘটিত ৯৬৩টি দুর্যোগের ফলে ৫৮,৪৮৪ জনের মৃত্যু এবং ১১৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়েছে।

উত্তর আমেরিকা, মধ্য আমেরিকা এবং ক্যারিবিয়ান অঞ্চলে ২১০০টি দুর্যোগের ফলে ৭৭,৪৫৪ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং ২ ট্রিলিয়ন ডলার অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়েছে।

অন্যদিকে, ইউরোপজুড়ে সংঘটিত ১৮০০ দুর্যোগে ১৬৬,৪৯২ জনের মৃত্যু এবং ৫৬২ বিলিয়ন ডলার অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়েছে।

গত সপ্তাহে ডব্লিউএমও সতর্কতা জারি করেছিল যে, ২০২৩–২০২৭ সালের মধ্যে অন্তত একটি বছরে বিশ্বের ভূপৃষ্ঠের বার্ষিক তাপমাত্রা শিল্পায়নপূর্ব সময়ের চেয়ে দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে ৬৬ শতাংশ।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ