• মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৪২ অপরাহ্ন

স্মার্ট বাংলাদেশের জন্য স্মার্ট বাজেট পেশ আজ

নিউজ ডেস্ক
আপডেটঃ : বৃহস্পতিবার, ১ জুন, ২০২৩

আজ বৃহস্পতিবার (১ জুন), জাতীয় সংসদে উপস্থাপিত হচ্ছে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট। সব কিছু ঠিক থাকলে জাতীয় সংসদে বিকাল ৩টায় নতুন অর্থবছরের জন্য অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার বাজেট পেশ করবেন অর্থমন্ত্রী আহম মুস্তফা কামাল। এটি অর্থমন্ত্রীর পঞ্চম বাজেট হলেও বাংলাদেশের ৫২তম এবং আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের ২৪তম বাজেট। নতুন বাজেটের শিরোনাম হচ্ছে ‘উন্নয়নের দীর্ঘ অগ্রযাত্রা পেরিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশের অভিমুখে’। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

অর্থমন্ত্রীর পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, বাজেট পেশের জন্য এখন পুরোপুরি প্রস্তুত অর্থমন্ত্রী আহম মুস্তফা কামাল। বুধবার (৩১ মে) রাতে ও আজ বৃস্পতিবার (১ জুন) সকালে চিকিৎসকদের একটি দল অর্থমন্ত্রীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে গেছেন। তিনি শেষবারের মতো বাজেট বক্তৃতার কপিতে চোখ বুলিয়ে বেলা ১০টায় বাসা থেকে বেরিয়ে সংসদ ভবনে যাবেন বলে জানা গেছে। প্রতি বছরের মতো এ বছরও অর্থমন্ত্রী সাদা পাজামা আর সাদা পাঞ্জাবি পরবেন। পাঞ্জাবির ওপরে থাকবে কালো রঙয়ের মুজিব কোর্ট। পায়ে থাকবে কালো রঙয়ের পা আটকানো জুতার আদলে স্যান্ডেল। ইতোমধ্যেই মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে সরবরাহ করা হয়েছে ব্রিফকেস। যাতে করে তিনি বাজেট ডকুমেন্টস নিয়ে সংসদ অধিবেশন কক্ষে প্রবেশ করবেন। এ বছরও পাওয়ার পয়েন্টের মাধ্যমে বাজেট উপস্থাপন করবেন অর্থমন্ত্রী।

এদিকে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, আজ বৃহস্পতিবার (১ জুন) দুপুর ১২টায় অনুষ্ঠিত হবে মন্ত্রিসভার বিশেষ বৈঠক। জাতীয় সংসদ ভবনের মন্ত্রিপরিষদ সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত হবে এই বিশেষ বৈঠক। এতে সভাপতিত্ব করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মন্ত্রিসভার বিশেষ বৈঠকে নতুন অর্থবছরের বাজেট অনুমোদন দেওয়া হবে। জাতীয় সংসদে উপস্থাপনের জন্য নতুন অর্থবছরের অনুমোদিত বাজেটে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন সম্মতিসূচক সই করবেন। সময়ক্ষেপণ না করতে রাষ্ট্রপতি আজ বঙ্গভবনের পরিবর্তে জাতীয় সংসদ ভবনে রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ে অফিস করবেন। রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের পরেই অর্থমন্ত্রী আহম মুস্তফা কামালকে সঙ্গে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় সংসদের অধিবেশন কক্ষে প্রবেশ করবেন। পরে স্পিকারের অনুমতি সাপেক্ষে অর্থমন্ত্রী জাতীয় সংসদে আগামী অর্থবছরের জাতীয় বাজেট উপস্থাপন করবেন।

সূত্র জানিয়েছে, চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের তুলনায় ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটের আকার হবে ১২ শতাংশ বেশি। ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটের আকার ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। ইতোমধ্যেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সভায় ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের জন্য ২ লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকার ব্যয় সম্বলিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। নতুন এডিপি চলতি অর্থবছরের সংশোধিত এডিপির তুলনায় প্রায় ১৬ শতাংশ বেশি এবং মূল এডিপির তুলনায় ৭ শতাংশ বেশি। অন্যান্য বছরের মতো এ বছরও দেশের সম্পদ, বৈদেশিক অর্থায়ন ও সামষ্টিক অর্থনৈতিক অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের এডিপি প্রণয়ন করা হয়েছে।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, চলতি বছরের এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে অর্থমন্ত্রী আহম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আর্থিক, মুদ্রা ও মুদ্রা বিনিময়হার সংক্রান্ত সমন্বয় কাউন্সিলের ২০২২-২৩ অর্থবছরের দ্বিতীয় বৈঠক ও সম্পদ কমিটির বৈঠকে আগামী বাজেটে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ৭ দশমিক ৫ শতাংশ ধরার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। তবে বাজেট চূড়ান্ত করার আগে বাজেট ঘাটতি একটু বাড়িয়ে ৫ দশমিক ৩ শতাংশ এবং প্রবৃদ্ধির হার একটু কমিয়ে ৭ দশমিক ৩ শতাংশ করা হতে পারে।

জানা গেছে, সার্বিকভাবে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সরকারের সুদ ব্যয়ে বরাদ্দ থাকছে ১ লাখ ২ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে ভর্তুকিতে বরাদ্দ রয়েছে ১ লাখ ২ হাজার কোটি টাকা। আগামী অর্থবছরে এটি বাড়িয়ে ১ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা করা হতে পারে। বিপুল ভর্তুকির মধ্যে বিদ্যুৎ খাতে বরাদ্দ থাকছে ৩৩ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের বাজেটে বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকিতে ১৭ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ ছিল, পরে সংশোধিত বাজেটে তা বাড়িয়ে ২৩ হাজার কোটি টাকা করা হয়। আগামী অর্থবছরে কৃষি খাতে ভর্তুকিতে ১৭ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ থাকছে। চলতি অর্থবছরের বাজেটে যা ছিল ১৬ হাজার কোটি টাকা। এদিকে জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। সরকারের শেষ বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় নতুন করে ৭ লাখ ৩৫ হাজার জন বয়স্ক, বিধবা ও প্রতিবন্ধীকে অন্তর্ভুক্তির সিদ্ধান্তের কথা অবহিত করা হয়।

নতুন বাজেটে সরকারি কর্মচারীদের জন্য মহার্ঘ্য ভাতা নাকি ইনক্রিমেন্ট থাকছে, এনিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। সরকারি কর্মচারীরা ইতোমধ্যে জানিয়েছেন— মহার্ঘ্য ভাতা নয়, তারা ইনক্রিমেন্ট চান। অপরদিকে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে— নতুন বাজেটে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য মহার্ঘ্য ভাতার ঘোষণা থাকছে না। প্রধানমন্ত্রী এরইমধ্যে জানিয়ে দিয়েছেন— মহার্ঘ্য ভাতা নয়, বাজার মূল্যের সঙ্গে সমন্বয় করে বেতন বাড়বে।

উল্লেখ্য, এ বছর জুনের শেষ দিকে, অর্থাৎ চাঁদ দেখা সাপেক্ষে ২৯ জুন ঈদুল আজহা পালিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সেই হিসাবে আগের দিন ২৮ জুন ও পরের দিন ৩০ জুন ঈদুল আজহার ছুটি থাকবে। তাই আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট পাস হতে পারে জুন মাসের শেষ হওয়ার এক সপ্তাহ আগে। জানা গেছে, আগামী ২৫ জুন রবিবার সংসদে বাজেট পাস হতে পারে। যদিও জুনের ১ তারিখে বাজেট উপস্থাপিত হলে আলোচনার সময় বেশি পাওয়া যায়।

নতুন বাজেটে স্মার্ট বাংলাদেশ মহাপরিকল্পনায় প্রায় ৪০টি মেগা প্রকল্প থাকছে বলে জানা গেছে। অর্থমন্ত্রী আহম মুস্তফা কামাল তার বাজেট বক্তৃতায় এটি উপস্থাপন করবেন। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ২০২৫, ২০৩১ এবং ২০৪১— এই তিনটি সময় সূচি নির্ধারণ করা হয়েছে। পাশাপাশি স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্প গ্রহণ করা হচ্ছে। এর শুরুতে ২০২৩ সালের মধ্যে বাংলা ডিজিটাল দক্ষতা বৃদ্ধি, আইসিটি নীতিমালা, জাতীয় প্রকিউরমেন্ট ই-বাজার, ডিজিটাল চাকরির প্ল্যাটফর্ম, স্মার্ট পাবলিক সার্ভিস (জনপরিষেবা) ও পেপারলেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (কাগজবিহীন প্রশাসন), ইনক্লুসিভ ফিন্যান্সিয়াল (অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক সংস্থান), গভর্নমেন্ট ক্লাউড অ্যান্ড ডেটা সেন্টার প্রভৃতি কার্যক্রম শুরুর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। ২০২৪ সালের মধ্যে ইউনিভার্সাল ডিজিটাল আইডি, ডিজিটাল কারিকুলাম, স্মার্ট ডিভাইস অ্যাকসেস, স্মার্ট বাংলা ক্যাম্পেইন, স্মার্ট হেলথ কেয়ার, স্মার্ট ট্যাক্স, ডিজিটাল লিডারশিপ অ্যাকাডেমি উদ্যোগ গ্রহণের প্রস্তাব দেওয়া হবে। এছাড়া ২০২৫ সালের মধ্যে স্মার্ট ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট, স্মার্ট পোস্টাল সার্ভিস, স্মার্ট জুডিশিয়ারি, স্মার্ট বর্ডারস, স্মার্ট সোশ্যাল সেফটি নেট, পুলিশ মডার্নাইজেশন, ইনক্লুসিভ ফিন্যান্সিয়াল ইকোসিস্টেম, ফিনটেক অ্যাকসেলারেটর, উদীয়মান প্রযুক্তিবিষয়ক সেন্টার অব এক্সিলেন্স (সিওই) বাস্তবায়নের প্রস্তাব দেওয়া হবে। এভাবে স্মার্ট বাংলাদেশের রূপরেখা প্রণয়ন করা হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, ‘সরকারের সব কিছু প্রস্তুত। প্রস্তুত অর্থমন্ত্রীও। এবারের বাজেটে সরকারের আগামী ভিশনের একটি দিক নির্দেশনা থাকবে। এটি নির্বাচনি বছর। সে কারণে সরকার ও দলের জন্য এবারের বাজেট খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ বাজেট অবশ্যই হবে জনদরদী বাজেট। মানুষের কল্যাণের বাজেট। এ নিয়ে সন্দেহের কোনও কারণ নেই।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ