তীব্র তাপপ্রবাহ ও লোডশেডিংয়ের কারণে রাজধানীজুড়ে এখন হাতপাখার কদর বেড়েছে
প্রচণ্ড গরমে শরীর জুড়াতে গ্রামবাংলায় হাতপাখার কোনও জুড়ি ছিল না। প্রযুক্তির যুগে হাতপাখার জনপ্রিয়তা প্রায় হারিয়ে গিয়েছে বললেই চলে। গ্রামে কদাচিৎ হাতপাখার ব্যবহার দেখা গেলেও, শহরে সেই দৃশ্য একেবারেই চোখে পড়তো না। কিন্তু তীব্র তাপপ্রবাহ ও লোডশেডিংয়ের কারণে রাজধানীজুড়ে এখন হাতপাখার কদর বেড়েছে।
পুরান ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ঘুরে এখন তালপাতার হাতপাখা বিক্রি করছেন হকাররা। বছর দশেক আগেও গ্রামে হাতে তৈরি এসব তালপাতার পাখার ব্যাপক প্রচলন ছিল। আমাদের মা-খালারা এসব হাতপাখা ব্যবহার করতেন। দাদা-দাদু বাড়ির উঠোনে বসে আমাদের এ রকম হাতপাখা দিয়ে বাতাস করতেন। আহ, কী মধুর স্মৃতি।
বৃহস্পতিবার (১ জুন) পুরান ঢাকার লক্ষ্মীবাজার এলাকায় তালপাতার হাতপাখা কিনতে গিয়ে এমন স্মৃতিবিজড়িত কথা বলেন রোজিনা বেগম নামের এক গৃহিণী।
প্লাস্টিক আর কাপড়ের হাতপাখা বের হওয়ায় এখন তালপাতার হাতপাখা খুব একটা দেখা যায় না বলে মন্তব্য করে এই গৃহিণী বলেন, হঠাৎ চোখের সামনে পড়লো, তাই এক জোড়া নিয়ে নিলাম। এগুলো এখন সচরাচর পাওয়া যায় না। তা ছাড়া যে গরম পড়ছে, না কিনে উপায় ছিল না।
পুরান ঢাকার মুসলিম সরকারি হাইস্কুলের সামনে থেকে দর-কষাকষি করে হাতপাখা কিনেছিলেন সুমন পাটওয়ারী নামের এক ক্রেতা। তিনি বলেন, এক সপ্তাহ ধরে মাত্রাতিরিক্ত গরম পড়ছে। তার ওপর লোডশেডিং। সব মিলিয়ে গরমে একেবারে নাজেহাল অবস্থা। মাথার ওপর ফ্যান চলে অথচ এত বেশি গরম যে গায়ে হাওয়া লাগে না।
তিনি বলেন, কারেন্ট চলে গেলে কাজে লাগবে, এই ভেবে এক জোড়া হাতপাখা কিনলাম। আগে তো এসব হাতপাখার অনেক প্রচলন ছিল। এখন খুঁজেও পাওয়া যায় না। তবে গাঁয়ে এখন এগুলো আছে। দাম অত বেশি না, তুলনামূলক কম।
গাজীপুর থেকে পাইকারি দরে কিনে পুরান ঢাকার অলিগলি ও রাস্তায় ঘুরে এসব হাতপাখা বিক্রি করেন জাকির মিয়া (৬২)। তিনি জানান, গরমের শুরুতে প্রতিদিন ২০ থেকে ২২ পিস হাতপাখা বিক্রি হতো। এখন হাতপাখার চাহিদা বেড়েছে। প্রতিদিন আগের চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি বিক্রি হচ্ছে। তবে চাহিদা বাড়ায় হাতপাখার পাইকারি দামও বেড়েছে।
তিনি বলেন, আগে যেখানে তালপাতা দিয়ে তৈরি প্রতি ১০০ পিস হাতপাখার দাম পড়তো ৩০ টাকার মতো, এখন সেই হাতপাখা পাইকারি প্রতি পিস ৪০ টাকায় কিনতে হয়। অন্যদিকে কাপড় দিয়ে তৈরি হাতপাখায়ও পাইকারি দাম ৮ থেকে ১০ টাকা বেড়েছে।
এই বিক্রেতা আরও জানান, তালপাতা দিয়ে বানানো হাতপাখার পাইকারি ৪০ টাকা কিনে খুচরা ৬০ থেকে ৭০ টাকা বিক্রি করি। আর কাপড়ের তৈরি হাতপাখা ৫০ টাকা করে বিক্রি হয়, যার পাইকারি দাম পড়ে ৩০ টাকা। গরমের শুরুতে হাতপাখা বিক্রি করে দৈনিক ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা আয় হতো। এখন দৈনিক ১০০০ থেকে ১২০০ টাকা লাভ হয়।
হাতপাখা ছাড়াও ৭০ টাকা পাইকারি দরে চার্জার লাইট কিনে তা ১০০ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি করেন তিনি।