উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত চলাচল করলেও মতিঝিল পর্যন্ত চলাচলের জন্য প্রস্তুত করতে মেট্রোরেলের ট্রায়াল রান আগামী জুলাই থেকে শুরু হবে
উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত বর্তমানে চালু রয়েছে মেট্রোরেল। আগে দিনে ছয় ঘণ্টা চলাচল করলেও সময় বাড়িয়ে এখন সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত ১২ ঘণ্টা চলছে। আর সাপ্তাহিক বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে শুক্রবার। উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত চলাচল করলেও মতিঝিল পর্যন্ত চলাচলের জন্য প্রস্তুত করতে মেট্রোরেলের ট্রায়াল রান আগামী জুলাই থেকে শুরু হবে।
অপারেশনাল সব কাজ ঠিক রেখে উত্তরা থেকে মতিঝিল মেট্রোরেল চলাচলের জন্য চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। নির্ধারিত সময়ের দুই মাস আগেই অক্টোবরের শেষ কিংবা নভেম্বরের শুরুর দিকে উত্তরা থেকে মতিঝিল মেট্রো চলাচল পুরোদমে শুরুর আশা করছে কর্তৃপক্ষ। এখন চলছে মেট্রোরেলের ওপরে ও নিচের স্টেশনগুলোর প্রবেশ ও বাহির হওয়ার জায়গায় শেষ মুহূর্তের কাজ।
মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
কর্তৃপক্ষ বলছে, আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত যেসব স্টেশন রয়েছে, সেসব স্টেশনে প্রবেশ ও বাহির হওয়ার ব্যবস্থাপনার বিষয়ে শেষ পর্যায়ের কাজ চলছে। মাটির নিচেও বেশ কিছু কাজ রয়েছে এবং ওপরেও কিছু রয়েছে। বিভিন্ন স্টেশন গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় হওয়ায় বেশ কিছু চ্যালেঞ্জে পড়তে হয়েছে। বিশেষ করে সচিবালয় এলাকায় মেট্রোরেলের স্টেশন পড়েছে, তা একেবারে সচিবালয়ের দেয়ালের ভেতরের অংশে গিয়ে পড়েছে। নিরাপত্তার বিষয় বিবেচনা করে যে দেয়াল দেওয়া হয়েছে, তার কোনও ঘাটতি থাকবে না।
মেট্রোরেল প্রকল্প এমআরটি লাইন সিক্সের অগ্রগতির বিষয় সম্পর্কে কর্তৃপক্ষের দেওয়া তথ্য বলছে, ২০২৩ সালের ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত উত্তরা উত্তর থেকে মতিঝিল পর্যন্ত অংশের বাস্তব অগ্রগতি হয়েছে ৯৪ দশমিক ৪৩ শতাংশ। প্রথম পর্যায়ে নির্মাণের জন্য নির্ধারিত উত্তরা উত্তর থেকে আগারগাঁও অংশের পূর্ত কাজের অগ্রগতি ৯৯ দশমিক ৬০ শতাংশ। দ্বিতীয় পর্যায়ে নির্মাণের জন্য নির্ধারিত আগারগাঁও থেকে মতিঝিল অংশের পূর্ত কাজের অগ্রগতি ৯৩ দশমিক ৮৫ শতাংশ। তৃতীয় পর্যায়ে নির্মাণের জন্য নির্ধারিত মতিঝিল থেকে কমলাপুর পর্যন্ত অংশের পূর্ত কাজের অগ্রগতি ২ দশমিক ৩০ শতাংশ। ইলেকট্রিক্যাল ও মেকানিক্যাল সিস্টেম এবং রোলিং স্টক (রেল কোচ) ও ডিপো ইকুইপমেন্ট সংগ্রহ কাজের অগ্রগতি ৯ দশমিক ৪ শতাংশ।
মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ বলছে, আগামী জুলাই মাস থেকে পারফরম্যান্সের টেস্ট ও সিস্টেম ইন্টিগ্রেশন টেস্ট রয়েছে। তারপর ট্রায়াল রান শুরু হবে। মেট্রোরেল চলাচলের সবচেয়ে বড় বিষয় অপারেশনাল, সেটি ঠিক রাখতে হবে। টেস্ট ও ট্রায়ালগুলো একই সঙ্গে চালিয়ে যেতে হবে।
যত সময় যাচ্ছে, ততই মেট্রোরেলে ভ্রমণকারীদের সংখ্যা বাড়ছে উল্লেখ করে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন সিদ্দিক বলেন, উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত পরিচালনা করার জন্য ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় নির্ধারণ করা থাকলেও আমরা এর আগেই যাত্রী পরিবহন শুরু করতে কাজ করছি। অক্টোবরের শেষের দিকে না হলেও নভেম্বরের শুরুর দিকে পুরোদমে চলাচল শুরু হবে বলে ধারণা করছি।
গতকাল বুধবার (৩১ মে) সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত ১২ ঘণ্টা চলাচল শুরু করেছে মেট্রোরেল, যা এখন আগারগাঁও থেকে শুরু করে বিভিন্ন স্টেশন ধরে উত্তরা উত্তর স্টেশনে গিয়ে গন্তব্য শেষ হয়। ১২ ঘণ্টার চলাচলের বিষয়গুলো ঠিক করার জন্য নির্ধারিত সময়ের আগে থেকেই কাজ শুরু করতে হয়। সকাল ৮টা থেকে মেট্রোরেল চালু শুরু হলেও সকাল ৬টা থেকে পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে বিভিন্ন বিষয় খতিয়ে দেখে কাজ শুরু করতে হয়। এ কারণে মেট্রোরেলের কর্মকর্তা ও সদস্যরা যারা ডিউটি করছেন, তারা দুই ভাগে ভাগ হয়ে ডিউটি করবেন। সকাল ৮টা থেকে ২টা পর্যন্ত এক শিফট এবং দুপুর ২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত দ্বিতীয় শিফট পরিচালিত হচ্ছে। যারা প্ল্যাটফর্মের দায়িত্বে রয়েছেন এবং যারা টিকিট বিক্রি করছেন, সবাই এই দুই শিফটের আওতায় ভাগ হয়ে কাজ করছেন।
মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ বলছে, ডিসেম্বরে উদ্বোধনের পর থেকে মে মাস পর্যন্ত অনেকেই মেট্রোরেল চলাচলে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছেন। আর অনেকেই নতুন ব্যবহারকারী হওয়ায় বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে এখনও অবগত হতে পারছেন না। তারা আস্তে আস্তে মেট্রোরেল ব্যবহার করলে এসব বিষয়ে ধারণা নিতে পারবেন। এ জন্য সেবা সহায়ক হিসেবে স্কাউট ও মেট্রোরেলের দায়িত্বরত সদস্যরা প্রতিটি স্টেশনের দায়িত্ব পালন করছেন। টিকিট কাটা থেকে শুরু করে প্রবেশ এবং বের হওয়ার সময় টিকিট পাঞ্চ এবং টিকিট রাখার বিষয়গুলো সম্পর্কে অবহিত করা হচ্ছে।
মেট্রোরেলের নিরাপত্তায় অনুমোদিত পুলিশের নতুন ইউনিট ‘এমআরটি পুলিশ’ যেকোনও দিন থেকে স্টেশনগুলোতে দায়িত্ব পালন করবে জানিয়ে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এল সিদ্দিক জানান, যাদের এমআরটি পুলিশের দায়িত্ব দেওয়া হবে, তাদের আমরা প্রশিক্ষণ দেবো। আমরা চাই যাদের এমআরটি পুলিশে নিয়োগ দেওয়া হবে, তারা যেন প্রযুক্তিগত দক্ষ হন, এ বিষয়টি এরই মধ্যে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।