নয়ডা থেকে উদ্ধার বাংলাদেশ, ভারত ও নেপালের পোড়া পাসপোর্ট, একাধিক নথি
উদ্ধার হওয়া পাসপোর্ট
ভারতের নয়ডায় উদ্ধার করা হয়েছে ভারত, বাংলাদেশ এবং নেপালের প্রায় ২২টি আধাপোড়া পাসপোর্ট। এর মধ্যে নেপালের ১৪টি, বাংলাদেশের এবং ভারতের চারটি করে আধাপোড়া পাসপোর্ট উদ্ধার হয়েছে। উদ্ধার হয়েছে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ নথিও।
শুক্রবার নয়ডার সেক্টর-১৫১ এলাকায় অবস্থিত জে পি আমন সোসাইটি থেকে ভারত ও দুই প্রতিবেশী রাষ্ট্রের এসব পাসপোর্ট উদ্ধার করা হয়। ওই বহুতল আবাসনের ২২ নম্বর টাওয়ারের পেছনেই কোনো অপরিচিত ব্যক্তি পাসপোর্ট, ব্যাংকের পাস বই, স্বাস্থ্য বীমা, মোবাইল সিম কার্ডসহ বেশ কিছু আপত্তিকর নথিতে অগ্নিসংযোগ ঘটিয়ে নষ্ট করার চেষ্টা করছিল বলে অভিযোগ।
ওই আবাসনের প্রেসিডেন্ট যোগেশ সিং জানান, আবাসনের বাসিন্দারা দেখতে পান ২২ নম্বর টাওয়ারের পেছন দিক থেকে ছোট আকারে আগুন জ্বলছে। এরপর আমিও সেখানে ছুটে যাই। দেখতে পাই বেশ কিছু পাসপোর্টসহ অন্যান্য নথি আধাপোড়া অবস্থায় পড়ে রয়েছে। যে ব্যক্তি সেগুলোতে আগুন দিয়েছে, তাকে পাওয়া যায়নি। এরপর দ্রুততার সাথে স্থানীয় পুলিশকে বিষয়টি জানানো হয়।
এরপরেই ঘটনাস্থলে ছুটে আসে নলেজ পার্ক কোতোয়ালি থানার পুলিশ কর্মকর্তারা ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা। ঘটনাস্থল থেকে একাধিক নথি উদ্ধার করে পুলিশ সেগুলো নিয়ে যায় এবং তদন্তের জন্য সেগুলোকে স্থানীয় ম্যাক্স হাসপাতালে পাঠানো হয়।
জানা গেছে, ভারত, বাংলাদেশ ও নেপালের পাসপোর্ট ছাড়াও প্রায় ছয় থেকে সাতটি আন্তর্জাতিক মোবাইল সিম কার্ড, ব্যাংক পাস বই, মুদ্রা বিনিময় রসিদ উদ্ধার করা হয়।
এ ব্যাপারে গ্রেটার নয়ডার অতিরিক্ত ডেপুটি কমিশনার অশোক কুমার জানান, উদ্ধার হওয়া পাসপোর্টগুলোর মধ্যে ১৪টি নেপালের, চারটি বাংলাদেশের এবং চারটি ভারতের।
তিনি আরও জানান, ১৫১ নম্বর সেক্টরে জে পি আমন সোসাইটিতে একটি ছোট অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এরপর ওই আবাসনের ম্যানেজমেন্টের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র দিয়ে সেই আগুন নিভিয়ে ফেলে। পরে ঘটনাস্থলে ফায়ার সার্ভিস আসে। আর ওই ঘটনাস্থল থেকেই একাধিক নথি এবং এই পাসপোর্টগুলো উদ্ধার করা হয়।
এ ব্যাপারে স্থানীয় নলেজ পার্ক পুলিশ থানার স্টেশন হাউস অফিসার (এসএইচও) ভিকে সিং জানান, সমস্ত নথি এবং পাসপোর্টগুলো একটি ব্যাগের মধ্যে করে ওখানে মজুত রাখা ছিল। যদিও সোসাইটির কোনো সিসিটিভি ফুটেজেই সেই দৃশ্য ধরা পড়েনি। সম্ভবত কোনো অজ্ঞাত ব্যক্তি সেখানে অগ্নিসংযোগ ঘটায় কিন্তু লেমিনেশনের কারণে ওই নথিগুলো সম্পূর্ণ ভস্মীভূত হয়ে যায়নি। ঘটনার পরে সেখানে পুলিশ পৌঁছায় এবং সমস্ত নথি উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে।
তিনি আরও জানান, উদ্ধারকৃত নথি পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে ওই সমস্ত নথি কোনো একটি ট্রাভেল এজেন্সির হয়ে থাকতে পারে। বেশ কিছু ভিজিটিং কার্ডও উদ্ধার করা হয়েছে ওই ব্যাগ থেকে।
এদিকে অবৈধভাবে ভারতে অবস্থান করার অভিযোগে ১৮ জন বাংলাদেশি নাগরিককে গ্রেফতার করেছে গুজরাট রাজ্যের পুলিশ। নির্দিষ্ট তথ্যের উপর ভিত্তি করে রাজ্যটির বাপুনগর, ঈশানপুর, চাণক্যপুরী, ওধাভসহ একাধিক জায়গায় অভিযান চালিয়ে এই ১৮ জন বাংলাদেশি নাগরিককে গ্রেফতার করে আহমেদাবাদ পুলিশের স্পেশাল অপারেশন গ্রুপের (এসওজি) সদস্যরা। এই অভিযানের জন্য পাঁচটি বিশেষ টিমও গঠন করা হয়। শুক্রবার রাজ্য পুলিশের পক্ষে এই তথ্য দেওয়া হয়।
প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, আটককৃত ১৮ জনের বয়স আনুমানিক ২০ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে। কোনোরকম ভিসা, পাসপোর্ট বা বৈধ ট্রাভেল ডকুমেন্ট ছাড়াই অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশ থেকে ভারতে প্রবেশ করে এই বিদেশি নাগরিকরা। এরপর গুজরাটের শিল্পনগরী আহমেদাবাদ বসবাস করতে শুরু করে।
আটককৃত ব্যক্তিদের অধিকাংশই দৈনিক শ্রমিকের কাজ করতো, বাকিদের মধ্যে কেউ দর্জি, রাজমিস্ত্রি ও কারখানার শ্রমিক হিসেবে কাজ করতো বলে জানা গেছে। এরা কোনো অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত রয়েছে কিনা, তা খতিয়ে দেখছে তদন্তকারী কর্মকর্তারা।