• সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৬:০৫ অপরাহ্ন

দেশের ৪ কোটি মানুষ ফ্যাটি লিভারে আক্রান্ত

নিউজ ডেস্ক
আপডেটঃ : বুধবার, ৭ জুন, ২০২৩

দেশের প্রায় সাড়ে চার কোটি মানুষ ফ্যাটি লিভারে (ন্যাশ) আক্রান্ত। বিপুল এই রোগীদের মধ্যে গ্রামের মধ্যবয়স্ক নারীদের প্রতি তিন জনের একজন রয়েছেন। যার কারণ, আয়েশি জীবনে অভ্যস্ত হওয়াসহ জীবনযাত্রার পরিবর্তন।

বুধবার (৭ জুন) রাজধানীর সিরডাপ ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স সেন্টারের ফ্যাটি লিভার বাংলাদেশের জাতীয় অর্থনৈতিক বোঝা শীর্ষক সভায় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা এই তথ্য জানিয়েছেন।

চিকিৎসকেরা জানান, বাংলাদেশে প্রায় সাড়ে চার কোটি মানুষ ফ্যাটি লিভারে আক্রান্ত। এ রোগের শেষ পরিণতি লিভার ক্যান্সার। শুধু আমাদের দেশই নয়, উন্নত বহু দেশেই এই রোগ সম্পর্কে জানেন না মানুষ। একজন ফ্যাটি লিভার রোগীর প্রাথমিক স্টেজে থাকা অবস্থায় চিকিৎসা নিতে গেলে ১৬ হাজার ৮২০ টাকা খরচ হয়। আর সিরোসিস হলে খরচ হয় ১ লক্ষ ৯০ হাজার টাকা (তিন মাসে)। এই খরচ রোগীর রোগ হওয়ার পরবর্তী কর্মঘণ্টা ছাড়াই।

Meeting

তারা আরও জানান, এতসংখ্যক মানুষের এই রোগ হলে সিম্পল প্রাথমিক স্টেজেই রোগীর খরচ হবে ৭৫ হাজার ৬৯০ কোটি টাকা। যা সরকারি হাসপাতালের তুলনায় বেসরকারি হাসপাতালে দ্বিগুণ। একই সঙ্গে বর্তমান স্বাস্থ্য বাজেটেরও দ্বিগুণ এটি। এসব রোগীদের মধ্যে গ্রামের মধ্যবয়স্ক নারীদের প্রতি তিনজনের একজন ফ্যাটি লিভারে আক্রান্ত। যার কারণ, আয়েশি জীবনে অভ্যস্ত হওয়াসহ জীবনযাত্রার পরিবর্তন।

এছাড়া আয়োজক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ বলেন, এখন পর্যন্ত ফ্যাটি লিভার থেকে মুক্তির নির্ধারিত ওষুধ নেই। আক্রান্ত হওয়ার পর রোগী আতঙ্কিত হয়ে নানা ওষুধ খেয়ে থাকেন। যা রোগ আরও বাড়িয়ে দেয়। এ ক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে, আমাদের জীবনযাত্রার পরিবর্তন আনতে হবে। এ রোগ যেমনি ঝুঁকিপূর্ণ, তেমনি প্রতিরোধযোগ্য।

এ দিন সভায় বক্তব্যকালে বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (বিএসএমএমইউ) কর্মরত ডা. মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, শুধুমাত্র এলকোহল গ্রহণকারীরা ফ্যাটি লিভারে আক্রান্ত হয় মনে করা হলেও এই ধারণা ঠিক নয়। বর্তমানে বহু মানুষ এ রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। যার কারণ, খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনে এ রোগ বাড়ছে। গ্রামের মধ্যবয়সীদের এ রোগে আক্রান্তের হার বেশি। যেখানে প্রতি তিনজনে একজন ফ্যাটি লিভারে আক্রান্ত। এছাড়াও লিভার সিরোসিস এবং লিভার ক্যান্সারেও আক্রান্ত হচ্ছে।

অন্যদের মধ্যে হেপাটোলজি সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক ও বিএসএমএমইউ অধ্যাপক ডা. মো শাহীনুল আলম বলেন, বর্তমানে গ্রামের নারীদের ফ্যাটি লিভার আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি। এর কারণ তাদের জীবনযাত্রার ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। বর্তমানে আমাদের শহরে খেলার মাঠ কমে গেছে। শিশুদের এক্সট্রা কারিকুলাম শেখানো হচ্ছে না।

Meeting

ফ্যাটি লিভার লিভার সিরোসিস এবং লিভার ক্যান্সারের দ্বিতীয় কারণ জানিয়ে তিনি বলেন, একসময় মনে করা হতো মোটা মানুষের ফ্যাটি লিভার হয়। কিন্তু আমাদের গবেষণা বলছে- চিকন মানুষেরও ফ্যাটি লিভার হচ্ছে আমাদের দেশে।

এছাড়া হেপাটোলজি সোসাইটি বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত সহ-সভাপতি ডা. মো. মোতাহার হোসেন বলেন, স্বাভাবিকের চেয়ে অতিরিক্ত চর্বি হওয়াই ফ্যাটি লিভার। লিভারে অল্প মাত্রায় চর্বি পাওয়া যেতেই পারে। আমরা বলছি দেশের তিন ভাগের একভাগ মানুষ ফ্যাটি লিভারে আক্রান্ত। কিন্তু এই বড় সংখ্যক মানুষের অধিকাংশেরই লিভার সংক্রান্ত রোগ হবে না। তবে লিভারে কি পরিমাণ চর্বি জমল তা গুরুত্বপূর্ণ। খেয়াল রাখতে হবে রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে লিভার সক্রিয় আছে কি না। মনে রাখতে হবে- এগুলো পাওয়া মানেই জীবন শেষ হয়ে যাওয়া নয়।

ডা. মো. মোতাহার হোসেন বলেন, এ রোগ থেকে মুক্তিতে আমাদের সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখতে পারে প্রাথমিক স্টেজে থাকা চিকিৎসকগণ। জেলা-উপজেলা পর্যায়ে চিকিৎসা দেওয়া চিকিৎসকগণ ফ্যাটি লিভারে আক্রান্ত হলেই রোগীদের ঢাকায় পাঠিয়ে দেন। কারণ, তারা পুরনো ধ্যান-ধারণা নিয়ে চিকিৎসা দিচ্ছেন। রোগী আতঙ্কিত হচ্ছে, ঢাকায় চলে আসছেন। অন্যদিকে রোগীদের বলা হয়- নির্ধারিত সময় পর পরীক্ষার আওতায় আসতে, তারা আসেন না। যা ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।

ফ্যাটি লিভার প্রতিরোধে ১০ পরামর্শ

অনুষ্ঠানে ফ্যাটি লিভার প্রতিরোধ এবং দ্রুত রোগ প্রতিরোধে হেপাটোলজি সোসাইটির পক্ষ থেকে ১০টি পরামর্শের কথা উল্লেখ করেছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা। এগুলো হলো-

১. প্রত্যেকের সপ্তাহে অন্তত পাঁচ দিন ৩০ মিনিট করে হাঁটতে হবে।

২. সম্ভব হলে দড়ি লাফ, সাইকেল চালানো ও সাঁতার কাটার মাধ্যমে শরীরচর্চা প্রয়োজন।

৩. হাঁটা ও শরীরচর্চার জন্য পর্যাপ্ত সবুজ জায়গার ব্যবস্থা করা আবশ্যক।

৪. ‘স্বাস্থ্যকর নাগরিকের জন্য স্বাস্থ্যকর নগর’ স্লোগানের আওতায় শহরগুলোকে সবুজ, পরিচ্ছন্ন ও স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের উপযোগী করে তুলতে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নিতে হবে।

৫. প্রক্রিয়াজাত খাবার, ভাজা-পোড়া কম খেতে হবে। সেই সঙ্গে দুধ, ফল ও শাক-সবজি খাওয়া বাড়াতে হবে।

৬. গণসচেতনতামূলক কাজের মাধ্যমে জাংক ফুড পরিহার ও বাসায় বানানো স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণে উদ্বুদ্ধ করতে হবে।

৭. প্রক্রিয়াজাত খাবারের ক্ষেত্রে প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানকে পুষ্টিমান বজায় রাখার জন্য আদর্শমান সরবরাহ ও আইন করে তা নিশ্চিত করতে হবে।

৮. দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ‘স্কুল হেলথ প্রোগ্রামের’ আওতায় খেলার মাঠ বাধ্যতামূলক করতে হবে এবং ক্লাসের শুরুতে শরীরচর্চার ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।

৯. স্কুলভিত্তিক স্বাস্থ্যকর খাবার টিফিন হিসেবে প্রদানকে নিয়মে পরিণত করতে হবে।

১০. দেশের প্রতিটি রাস্তার পাশে বাইসাইকেল লেন চালু করতে হবে। সেই সঙ্গে মানুষদের মোটরযানের পরিবর্তে বাইসাইকেল চালাতে উৎসাহিত করতে হবে।

সচেতনতামূলক গোলটেবিল আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক ডা. এ এস এম মতিউর রহমান। এছাড়াও অন্যদের মধ্যে কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মো গোলাম মোস্তফা, অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী, অধ্যাপক মবিন খান, অধ্যাপক ডা. এস হারুন উর রশিদ, আমির খশরু, বারডেম হাসপাতালের অধ্যাপক ডা. গোলাম আজমসহ আরও অনেকেই এতে উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে বুধবার সকালে ফ্যাটি লিভার সচেতনতায় হেপাটোলজি সোসাইটি বাংলাদেশের উদ্যোগে রাজধানীতে বর্ণাঢ্য র‍্যালি অনুষ্ঠিত হয়। এতে হেপাটোলজি সোসাইটি বাংলাদেশের নেতৃবৃন্দ ছাড়াও নার্স এবং স্কাউট সদস্যরা অংশ নেন।

 


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ