ইরানের ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনী বা আইআরজিসি প্রথমবারের মতো হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্রের মোড়ক উন্মোচন করেছে। আইআরজিসির আরোস্পেস ফোর্স এ ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করেছে। এটির নাম দেওয়া হয়েছে ফাত্তাহ বা বিজয়ী।
আল জাজিরা জানিয়েছে, ইরানের তৈরি এই হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্রের পাল্লা হচ্ছে ১৪০০ কিলোমিটার বা ৮৭০ মাইল। এটি সব ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেদ করতে সক্ষম বলে দাবি করেছে তেহরান।
মঙ্গলবার ফাত্তাহ হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্রের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি।
ইরানের প্রতিরক্ষা ও ক্ষেপণাস্ত্র শিল্প দেশীয় প্রযুক্তির ভিত্তিতে গড়ে উঠছে তা উল্লেখ করে এ দিন তিনি বলেন, ইরানের প্রতিরোধ ক্ষমতা এই অঞ্চলের দেশগুলোতে স্থিতিশীলতা, নিরাপত্তা ও শান্তি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা পালন করবে।
রাইসি আরো বলেন, প্রতিরক্ষা এবং ক্ষেপণাস্ত্র শিল্প ইরানের নিজস্ব প্রযুক্তিসম্পন্ন হয়ে উঠেছে এবং ইরান যেহেতু অস্ত্র আমদানি করে না সে কারণে এইসব কারখানার উন্নতি হুমকির মুখে পড়ার সম্ভাবনাও নেই।
প্রসঙ্গত, এখন পর্যন্ত শুধু রাশিয়া, চীন, আমেরিকা এবং উত্তর কোরিয়া হাইপারসনিক মিসাইল প্রযুক্তি উন্মোচন করেছে। তবে আমেরিকা এখানো হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্রের সফল উৎক্ষেপণ করতে পারেনি।
ফাত্তাহ হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্রের উন্মোচন অনুষ্ঠানে ইরানের ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর অ্যারোস্পেস ফোর্সের কমান্ডার জেনারেল হাজিজাদেহ বলেন, এই ক্ষেপণাস্ত্র উন্মোচনের সঙ্গে সঙ্গে ইরান এই প্রযুক্তির অধিকারী চারটি দেশের মধ্যে একটি হয়ে গেল।
তিনি আরও বলেন, বিশ্বে ট্যাঙ্ক, যুদ্ধজাহাজ ও যুদ্ধবিমানসহ সব অস্ত্র ধ্বংসের জন্যই পাল্টা ব্যবস্থা বা অস্ত্র রয়েছে। ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংসের জন্যও এখন ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু ইরানের তৈরি এই হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংস করার মতো কোনো অস্ত্র এখন পর্যন্ত নেই।
বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর এ কমান্ডার বলেন, ইরানের হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তির অর্জন এবং এর কার্যকারিতা নিঃসন্দেহে আধুনিক যুদ্ধের ক্ষেত্রে একটি সিদ্ধান্তমূলক এবং বৈপ্লবিক অগ্রগতি। এখন থেকে ইসলামি ইরানের শত্রুরা বিশেষ করে ইহুদিবাদী শাসক গোষ্ঠী ইরানে হামলা চালানোর বিষয়ে তাদের হিসাব পুনর্বিবেচনা করতে বাধ্য হবে।
ইরানের সংবাদমাধ্যমে বলা হয়েছে, ক্ষেপণাস্ত্রটি শব্দের চেয়ে ১৪ গুণ বেশি দ্রুত ছুটতে পারে। এই গতি হচ্ছে ফাত্তাহ হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্রের অন্যতম প্রধান ক্ষমতা। ফাত্তাহ ক্ষেপণাস্ত্রে কঠিন জ্বালানি ব্যবহার করা হয়েছে। এটি বায়ুমন্ডলের ভেতরে ও বাইরে ম্যানুভার করতে পারে।
এই নতুন পরিবর্তনশীল ফাতাহ ক্ষেপণাস্ত্রের ফলে পশ্চিম এশীয় অঞ্চলে ইরানের পক্ষে সামরিক ও অস্ত্র সমীকরণ পরিবর্তন করবে। ইরানের বিরুদ্ধে যেকোনো পদক্ষেপ নেয়ার আগে শত্রুরা এখন কয়েকবার চিন্তা করবে বলে সামরিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন।