• বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৩৫ পূর্বাহ্ন

যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতকে নিয়ে নেপালকে হুঁশিয়ারি চীনের

নিউজ ডেস্ক
আপডেটঃ : শনিবার, ১৭ জুন, ২০২৩

ভারত আর যুক্তরাষ্ট্র নেপাল থেকে চীন-বিরোধী কার্যকলাপ চালাতে পারে বলে নেপালকে সতর্ক করে দিয়েছে চীন। চীন সফররত নেপালের জাতীয় এসেম্বলির স্পিকার গণেশ প্রসাদ তিমিলসিনা বিবিসিকে জানিয়েছেন, ‘এধরনের কার্যকলাপের ফলে তাদের (চীনের) সমস্যা হতে পারে।’

নেপালের জাতীয় এসেম্বলির স্পিকার তিমিলসিনাকে এ বিষয়ে সতর্ক করে দিয়েছেন চীনের ন্যাশনাল পিপলস কংগ্রেসের স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান ঝাও লে জি। লে জি এবং তিমিলসিনার মধ্যে এক দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে বিষয়টি উঠে আসে বলে বিবিসি জানতে পেরেছে। সাংহাই থেকে বিবিসির সঙ্গে কথা বলার সময়ে তিমিলসিনা বলেন, ‘নেপালের ভূখণ্ড ব্যবহার করে চীন-বিরোধী কাজ বন্ধের ব্যাপারে তারা খুবই গুরুত্ব দিয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘নেপাল সরকার বারবার বলে এসেছে যে তারা নেপালে চীন বিরোধী কার্যকলাপ চালাতে দেবে না। তারা (চীন) সতর্ক করেছে যে তিব্বতি শরণার্থীদের বেশে বা অন্য কোনওভাবে কেউ নেপালে প্রবেশ করে চীন বিরোধী কাজকর্ম চালাতে পারে।’

চীনা পক্ষও ইঙ্গিত দিয়েছে যে স্পিকার তিমিলসিনার সঙ্গে বৈঠকে তাদের নিরাপত্তা স্বার্থ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। শিনহুয়া সংবাদ এজেন্সিতে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে চীনের ন্যাশনাল কংগ্রেসের স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান ঝাও লে জি বলেছেন যে দুই দেশের নিজেদের স্বার্থেই তাদের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক জোরদার করা উচিত। ঝাও লেজির উদ্ধৃতি দিয়ে ওই বিবৃতিতে বলা হয়, ‘নেপালের এক-চীন নীতিতে সর্বদা অটল থাকার জন্য, চীনের স্বার্থকে সমর্থন করা এবং তাদের ভূখণ্ডকে কোনও চীন বিরোধী কাজে ব্যবহার করতে না দেয়ার জন্য নেপাল প্রশংসনীয় কাজ করেছে।’

কাউন্সিল অফ ফরেন রিলেশনস নামের একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের মতে, বিশ্বের সবথেকে জটিল দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক রয়েছে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে। বাণিজ্য, জলবায়ু পরিবর্তন এবং তাইওয়ান সহ বিভিন্ন ইস্যুতে দুই দেশের সম্পর্কে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে নানা সময়েই। আবার সীমান্ত বিরোধের কারণে ভারত-চীন সম্পর্কও গত কয়েক বছর ধরে তিক্ত অবস্থায় পৌঁছিয়েছে, যার কোনও সমাধান এখনও পর্যন্ত হয় নি।

ওয়াশিংটন ভিত্তিক থিঙ্ক ট্যাঙ্ক উইলসন সেন্টারের দক্ষিণ এশিয়া ইনস্টিটিউটের পরিচালক মাইকেল কুগেলম্যান গত জানুয়ারিতে মন্তব্য করেছিলেন যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নেপালকে তার ইন্দো-প্যাসিফিক নীতির অংশ বলে মনে করে। তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র যা আশা করছে তা হল নেপালে চীনা প্রভাব কমাতে ভারত আরও জোরদার ভূমিকা রাখুক, কারণ ঐতিহাসিকভাবেই নেপালে ভারতের প্রভাব বেশি থেকেছে।’

গত বছর নেপাল যখন মিলেনিয়াম চ্যালেঞ্জ কর্পোরেশন নামে প্রায় ৬০ বিলিয়ন নেপালি রূপির একটি অনুদান অনুমোদন করে, তখনও যুক্তরাষ্ট্র এবং চীন একে অপরের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছিল। আবার ২০২০ সালের শেষে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তিব্বতের প্রতি সমর্থন দেখানোর জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ আইন পাস করে। আইনটি মার্কিন সরকারকে তিব্বতের ধর্মীয় নেতা দালাই লামার উত্তরসূরি নির্বাচনের ক্ষেত্রে হস্তক্ষেপকারী যে কোনও চীনা কর্মকর্তার উপর আর্থিক এবং ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের ক্ষমতা দেয়।

নেপাল ও ভারতে তিব্বতি উদ্বাস্তুদের ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক অধিকার রক্ষার বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্র সমর্থন করে। ২০২২ সালের মে মাসে, মার্কিন ডেপুটি সেক্রেটারি অফ স্টেট আজরা জেয়া, যিনি আবার তিব্বত বিষয়ক সমন্বয়কারীও, তিনি কাঠমান্ডুতে তিব্বতি শরণার্থী শিবির পরিদর্শন করেছিলেন। সেই ঘটনার প্রেক্ষিতে এক চীনা বিশেষজ্ঞ মন্তব্য করেছিলেন যে নেপালের উচিত ছিল আরও বিচক্ষণতা দেখানোর, কারণ এধরনে সফর নেতিবাচক বার্তা দেয়।

সাম্প্রতিক মাসগুলিতে, চীনা সংবাদপত্রগুলি নেপাল সরকারের কিছু জলবিদ্যুৎ প্রকল্প ভারতীয় কোম্পানির কাছে হস্তান্তরের সিদ্ধান্তে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে। চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিনপিং যখন ২০১৯ সালে নেপাল সফর করেছিলেন তখন দুই দেশের প্রতিশ্রুতি এবং চীনের অবকাঠামো প্রকল্প বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ বা এক অঞ্চল এক পথ প্রকল্প বাস্তবায়নের মতো বিষয়গুলি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছিল।

নেপালের জাতীয় এসেম্বলির স্পিকারের বর্তমান চীন সফরে সে বিষয়গুলি নিয়েও আলোচনা হয়েছে। তিমিলসিনা বলেন, বিআরআই প্রকল্পের ১০ বছর হয়ে গেছে। এর অধীনে প্রকল্পগুলির গুরুত্ব নিয়েও আলোচনা হয়েছে আমাদের মধ্যে।” যদিও নেপাল ২০১৭ সালে বিআরআই স্বাক্ষর করেছিল, বেশ কিছু বিশেষজ্ঞ এবং সরকারী সংস্থা জোর দিচ্ছে যে বড় প্রকল্পগুলি শুধুমাত্র চীনা ভর্তুকি দিয়ে তৈরি করা উচিত, কারণ চীনা ঋণ ভবিষ্যতে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। জাতীয় পরিষদের স্পিকার বলেন, অতীতে করা চুক্তিগুলো বাস্তবায়নের জন্য জাতীয় এসেম্বলিতে কোনও আইন প্রণয়ন করা উচিত কিনা তা নিয়েও আলোচনা হয়েছে। সূত্র: বিবিসি


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ