বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমেদ ভারত থেকে আপাতত দেশে ফিরছেন না। তিনি নিজেও দেশ রূপান্তরকে বলেছেন, ভারতে চিকিৎসা করাবেন। তারপর সিদ্ধান্ত নেবেন কবে দেশে ফিরবেন।
অবশ্য সালাহ উদ্দিনের বিরুদ্ধে দেশে মামলা রয়েছে। বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, দেশে ফিরলে তাকে মামলার মুখোমুখি হতে হবে। মামলার বিষয়ে জানতে তিনি যোগাযোগ করেছেন।
দেশে ফেরার জন্য সালাহ উদ্দিন ট্রাভেল কার্ড হাতে পেয়েছেন প্রায় ১০ দিন হলো। এই ট্রাভেল কার্ড ইস্যুর তারিখ থেকে তিন মাসের মধ্যে দেশে ফিরতে পারবেন তিনি। সেটি সম্ভব না হলে বিশেষ এই পাস বাতিল হয়ে যাবে।
জানা গেছে, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে দেশে ফেরার বিষয়টি খুব একটা আমলে নিচ্ছেন না তিনি। সালাহ উদ্দিনের সঙ্গে সখ্য রয়েছে বিএনপির দায়িত্বশীল এক নেতা জানান, ২০১৬ ও ২০১৭ সালে ভারতের রাজধানী দিল্লির একটি হাসপাতালে তার কিডনি ও ঘাড়ের দুটি বড় অপারেশন হয়েছিল। এর আগে বাংলাদেশে তার হার্টে তিনটি রিং বসানো হয়েছিল। গত পাঁচ বছর তিনি শিলংয়ের বাইরে যেতে পারেননি। ফলে এসব চিকিৎসার ফলোআপ হয়নি। এখন প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পাওয়ায় প্রথমে দিল্লি যাবেন। আগের হাসপাতালে চিকিৎসা করাবেন। এর বাইরে ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন রোগও রয়েছে তার। সেগুলোরও ফলোআপ করাবেন। তারপরই সিদ্ধান্ত নেবেন কবে দেশে ফিরবেন।
ওই নেতা জানান, দিল্লির উত্তরের শহর গুরুগাঁওয়ের মেডান্ত হাসপাতাল (মাল্টি স্পেশালাইস্ট হাসপাতাল) (গবফধহঃধ ঐড়ংঢ়রঃধষ) তিনি অ্যাপয়েন্টমেন্টের জন্য যোগাযোগ করেছেন।
এই প্রশ্ন ছিল সালাহ উদ্দিন আহমেদের কাছেও। তিনি দেশ রূপান্তরকে জানান, দেশে ফেরার আগে তিনি ভারতেই স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাবেন। দীর্ঘদিন ধরে তিনি চিকিৎসকের কাছে যান না। কিছু শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার পর দেশে ফিরবেন।
তবে বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের এক নেতা জানান, এখনই তিনি দেশে ফিরবেন না। চিকিৎসার জন্য দিল্লি যাওয়ার আগে ভারতের মেঘালয়ের শিলংয়ে আদালত, স্থানীয় পুলিশ ও গৌহাটিতে বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে কিছু দাপ্তরিক কাজ রয়েছে। সেগুলো সম্পন্ন করে অনুমতি সাপেক্ষে দিল্লি যাবেন। চিকিৎসা শেষ করাতে প্রায় দুই থেকে আড়াই মাসের মতো লাগবে। এ সময় বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রাখবেন তিনি। পরিস্থিতি অনুকূল হলে দেশে ফিরবেন আর প্রতিকূল হলে চিকিৎসার কারণ দেখিয়ে নতুন করে আবেদন করবেন। এ ছাড়া তার বিরুদ্ধে বাংলাদেশে থাকা মামলাগুলোও সরকার সক্রিয় করছে।
বিএনপির সিনিয়র এক আইনজীবী নেতা জানান, ইতিমধ্যে তিনি (সালাহ উদ্দিন) তার মামলার সর্বশেষ বিষয় জানতে যোগাযোগ করেছেন। দেশে ফিরলে কী ধরনের আইনি সমস্যার মুখোমুখি হতে পারেন সেটি বুঝতে চাচ্ছেন তিনি।
সালাহ উদ্দিনের আইনজীবী ও বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মাহবুব উদ্দিন খোকন দেশ রূপান্তরকে জানান, যত দূর মনে হচ্ছে তার বিরুদ্ধে ১২-১৫টি মামলা থাকতে পারে। দেশে ফিরলে এগুলো নিয়ে নতুন করে সরকার ঝামেলা করতে চাইবে, সেটিই স্বাভাবিক। এমনকি তিনি ফেরার সঙ্গে সঙ্গে গ্রেপ্তারও হতে পারেন।
সালাহ উদ্দিনের স্ত্রী হাসিনা আহমেদ বলেন, কবে দেশে ফিরবেন, সেটি তিনিই ভালো বলতে পারবেন। আদালত থেকে খালাস, ট্রাভেল পাস এসব সিদ্ধান্তের পরও কিছু দাপ্তরিক, কিছু প্রসিডিউর থাকে। যেমন ভারতীয় কর্তৃপক্ষ কীভাবে বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করবে, সে প্রক্রিয়াও দেখতে হবে। তিনি আরও বলেন, ‘উনি চিকিৎসা কোথায় করাবেন সে সিদ্ধান্ত এখনো হয়নি। তবে আগে যেমনটি বলেছেন, ভারতে (দিল্লিতে) করানোর বিষয়েই সিদ্ধান্ত রয়েছে।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও জানান, তার মামলার বিষয়টি দেখছেন আইনজীবীরা। তারা কাজ করছেন।
জানা গেছে, ইন্টারনেটের সুবাদে বাংলাদেশের সব ঘটনাবলির দিকেও নিয়মিত নজর রাখতেন সালাহ উদ্দিন। ফলে মুক্তির আগ থেকেই রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডেও সক্রিয় ছিলেন। মুক্তি পাওয়ার পর নিয়মিত দলের স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠকে এখন অংশ নেন।
প্রসঙ্গত, ২০১৫ সালের ১০ মার্চ রাজধানীর উত্তরা থেকে সালাহ উদ্দিন আহমদ নিখোঁজ হন। ৬৩ দিন পর ১১ মে ভারতের মেঘালয়ের শিলংয়ে স্থানীয় পুলিশ সালাহ উদ্দিনকে উদ্ধারের পর শিলং সিভিল হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। বৈধ কাগজপত্র ছাড়া ভারতে প্রবেশের অভিযোগে ফরেনার্স অ্যাক্ট অনুযায়ী সালাহ উদ্দিনকে গ্রেপ্তার দেখায় মেঘালয় পুলিশ। একই বছরের ২২ জুলাই ভারতের নিম্ন আদালতে আনুষ্ঠানিকভাবে তার বিরুদ্ধে অনুপ্রবেশের দায়ে অভিযোগ গঠন করা হয়।
সেই মামলায় ২০১৮ সালের নিম্ন আদালত থেকে সালাহ উদ্দিন আহমদ খালাস পান। এরপর ভারত সরকার আপিল করলে তাকে সেখানেই থাকতে হয়। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি আপিলেও বেকসুর খালাস পান এবং আদালত তাকে দেশে ফেরত পাঠানোর নির্দেশ দেয়।
পাসপোর্ট না থাকায় সালাহ উদ্দিন দেশে ফিরতে ট্রাভেল পারমিটের জন্য গৌহাটিতে বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে আবেদন করেন। গত ৮ জুন জারি করা এ ট্রাভেল পাস তিনি হাতে পান ১৩ জুন।
১৯৯১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় এলে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সহকারী একান্ত সচিব ছিলেন সালাহ উদ্দিন। পরে সরকারি চাকরি ছেড়ে বিএনপিতে যোগ দেন এবং ২০০১ সালে কক্সবাজার থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। মেঘালয়ে গ্রেপ্তারের সময় তিনি বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব পদে ছিলেন। ভারতের কারাগারে থাকা অবস্থায় বিএনপি তাকে স্থায়ী কমিটির সদস্য নির্বাচিত করে।