কারিগরি ত্রুটির কারণে আবার বন্ধ হয়ে গেছে বহুল আলোচিত-সমালোচিত রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রথম ইউনিট। পুরো বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু হতে না হতেই এর আগেও বয়লারের টিউব ফেটে যাওয়া, কুলিং হিটারে ছিদ্রসহ নানা কারিগরি কারণে একাধিকবার কেন্দ্রটি বন্ধ হয়েছে। এ ছাড়া কয়লা সংকটেও ব্যাহত হচ্ছে এই কেন্দ্রের বিদ্যুৎ উৎপাদন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, কয়লা সংকট কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই গত শুক্রবার রাত পৌনে ৯টার দিকে ইলেকট্রিক্যাল প্রোটেকশন সিস্টেমে ত্রুটি দেখা দেওয়ায় বন্ধ হয়ে যায় কেন্দ্রটি। এখন মেরামতকাজ চলছে। ঠিক হতে চার থেকে পাঁচ দিন সময় লাগতে পারে। তবে কয়লা নিয়ে আপাতত কোনো সংকট নেই।
এ বিষয়ে জানতে বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া ফ্রেন্ডশিপ পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডের (বিআইএফপিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী সৈয়দ আকরাম উল্লাহ এবং প্রতিষ্ঠানটির উপ-মহাব্যবস্থাপক আনোয়ারুল আজিমকে একাধিকবার ফোন দেওয়া হলেও তাদের সাড়া মেলেনি।
জ¦ালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম বলেন, ‘চুক্তি মোতাবেক চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে না পারলে সরকারের উচিত তাদের ক্যাপাসিটি পেমেন্ট বন্ধ করে দেওয়া। সেই সঙ্গে ক্ষতিপূরণ আদায় করা হলে এ সমস্যা দূর হবে।’
১৩ বছর আগে বাগেরহাটের রামপালে বাংলাদেশ-ভারত যৌথ উদ্যোগে কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। চুক্তি অনুযায়ী ২০১৮ সালে এই প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও গত ডিসেম্বর থেকে কেন্দ্রটির প্রথম ইউনিট থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। দ্বিতীয় ইউনিট এখনো উৎপাদনে আসেনি।
শুরু থেকেই এই কেন্দ্রের গুণগত মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে সচিবপর্যায়ের জয়েন্ট স্টিয়ারিং কমিটির সভায়ও কাজের মান নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন অনেকে।
এ ধরনের বিদ্যুৎকেন্দ্রে ৯০ দিনের জ্বালানি মজুদ রাখা বাধ্যতামূলক হলেও রামপালের প্রথম ইউনিট চালুর ২৩ দিনের মাথায় কয়লার অভাবে গত ১৪ জানুয়ারি বন্ধ হয়ে যায়। কয়লা আমদানির পর গত ১৬ ফেব্রুয়ারি কেন্দ্রটির প্রথম ইউনিট আবার বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করে।
অভিযোগ উঠেছে, কেন্দ্রটিতে নিম্নমানের যন্ত্রাংশ ব্যবহারের কারণে পূর্ণ ক্ষমতায় দীর্ঘ সময় ধরে উৎপাদন চালু রাখা সম্ভব হচ্ছে না। বয়লার টিউব ফেটে যাওয়াসহ এমন ঘটনা একাধিকবার সৃষ্টি হওয়ায় ভবিষ্যতে কেন্দ্রটির পূর্ণ ক্ষমতায় উৎপাদন করা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।
পাওয়ার সেলের সাবেক মহাপরিচালক বিডি রহমত উল্লাহ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘রামপাল কেন্দ্রের কারণে সুন্দরবনের অপূরণীয় ক্ষতি হবে। শুরুতেই এই কেন্দ্র নিয়ে আশঙ্কা করা হলেও সরকার তা আমলে নেয়নি। এটি যখন নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয় তখনো এই কেন্দ্রের বিদ্যুতের প্রয়োজন ছিল না। আর এখন সরকারের দাবি অনুযায়ী চাহিদার চেয়ে দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা বেশি। ফলে এখন এই কেন্দ্র একেবারেই অপ্রয়োজনীয়। উপরন্তু নিম্নমানের যন্ত্রপাতি ব্যবহারের কারণে কেন্দ্রের উৎপাদন বন্ধ থাকলেও কেন্দ্র ভাড়া দিতে হবে। সেই সঙ্গে দিতে হবে ঋণের কিস্তি। এক কথায় বলা যায়, এই কেন্দ্রটি বাংলাদেশকে অনেক ভোগাবে।’