পাট একটি বর্ষাকালীন ফসল। বাংলাদেশে পাটকে সোনালী আঁশ বলা হয়। পাট বাংলার ও পশ্চিম বঙ্গের শত বছরের ঐতিহ্য। পাট বৃষ্টি নির্ভর ফসল। পাট পরিবেশ বান্ধব, বহুমুখী ব্যবহারযোগ্য আঁশ । শিল্প বিপ্লবের সময় ফ্লাক্স এবং হেম্প এর স্থান দখল করে পাটের যাত্রা শুরু। বস্তা তৈরির ক্ষেত্রে পাট এখনও গুরুত্বপূর্ণ।
আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার শরীয়তপুরে পাটের বাম্পার ফলন হয়েছে। পূর্ব লক্ষ্যমাত্রা থেকে বেশি জমিতে পাট চাষ হয়েছে। এ বছর ভালো বৃষ্টিপাত ও সারের সঙ্কট না থাকায় বাম্পার ফলন হয়েছে বলে কৃষকরা মনে করেন।
কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর জেলায় পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩০ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে। কৃষি বিভাগের পরামর্শে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে কৃষকরা পাট চাষ করেছেন ৩০ হাজার ৭১০ হেক্টর জমিতে। এরমধ্যে দেশীয় জাতের পাট চাষ হয়েছে ৩ হাজার ৫০ হেক্টর, তোষা জাতের ২১ হাজার ৮০০ হেক্টর, কেনাফ জাতের ৩ হাজার ৯৮০ হেক্টর এবং মেশতা জাতের ১ হাজার ৮৮০ হেক্টর জমিতে
পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর শরীয়তপুরে কৃষি উন্নয়নে যোগ হয়েছে নতুন মাত্রা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে জেলার কৃষি বিভাগ ও প্রশাসনের সহায়তায় সকল প্রকার কৃষি ফসল উৎপাদনে কৃষকেরা নজিরবিহীন সাফল্য দেখিয়েছেন। নিত্য প্রয়োজনীয় ফসল উৎপাদনের পাশাপাশি সোনালী আঁশখ্যাত পাট চাষেও লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে।
সরেজমিনে জেলার ভেদরগঞ্জ, নড়িয়া, জাজিরা, সদরসহ বিভিন্ন উপজেলায় পাট থেকে আঁশ সংগ্রহ করতে দেখা গেছে। আঁশ পানিতে পরিষ্কার করছেন কৃষকরা।
সদর উপজেলার কৃষক আব্বাস খান বলেন, কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শ মতো চলায় পাটে পোকামাকড় আক্রমণ করেছে কম। ফলে ফলন ভালো হয়েছে। এখন পাটের ন্যায্য মূল্য পেলেই আমাদের কষ্ট সার্থক হবে। তবে তার আসা পদ্মা সেতু হওয়াতে পাইকাররা সরাসরি ঢাকা থেকে এসে পাট কিনবে। তাই ন্যায্য দাম পাব বলে আশা করছি।
জাজিরা উপজেলার কৃষক মোঃ হাশেম বলেন, আগে অনেকেই পাট চাষ করত। মাঝে আবহাওয়া অনুকূলে পরিবেশ ও পাটের সঠিক দাম না থাকায় অনেকেই চাষ করতে চাইতো না। এখনও পাট চাষের আগ্রহ আছে। পাটের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত হলে পাট চাষির সংখ্যা আরো বাড়বে।
নড়িয়া উপজেলার কৃষক আবুল মনসুর বেপারি বলেন, ১০ বিঘা জমিতে দেশীয় জাতের পাট চাষ করেছি। প্রতি বিঘায় খরচ হয়েছে ১৫ হাজার টাকা। নিজের পরিশ্রমের হিসেব করলে এই খরচ দাঁড়ায় ২০ হাজার টাকা। প্রতি বিঘা জমিতে পাটের ফলন হয় ৮-১০ মণ। প্রতি মণ পাটের বর্তমান বাজার মূল্য ৩ থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকা। পাট চাষে এখন আর আগের মতো লোকসান হয় না।
সদর উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ অলি হালদার বলেন, শরীয়তপুর সদরে গত বছরের চেয়ে এবছরে পাটের ফলন ভালো হয়েছে এবং গত বছরের চাইতে এ বছরে ৩০০ হেক্টর জমিতে পাটের বেশি আবাদ করা হয়েছে। তাই বাজারে ন্যায্য মূল্য পেলে কৃষকদের মুখে হাসি ফুটবে বলে আমরা আশা করি।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. রবীআহ নূর আহমেদ বলেন, কৃষি কর্মকর্তারা মাঠ গিয়ে কৃষকদের পরামর্শ দিয়েছেন। পাটের উপযোগী আবহাওয়া থাকায় লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়েছে এবার। পাট থেকে আঁশ প্রস্তুতের জন্য পানি থাকায় কৃষকরা সুন্দরভাবে পাটের আঁশ প্রক্রিয়াজাত করতে পারছেন। ফলনও ভালো হয়েছে। বাজারে ন্যায্য মূল্য পেলে কৃষকদের মুখে হাসি ফুটবে। আগামী দিনে কৃষকরা পাট চাষে আরও আগ্রহী হবেন বলে আশা করছি।