বগুড়ায় ছাত্রদলের মিছিল প্রতিহত করতে গিয়ে ছাত্রলীগের দুপক্ষে হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে। মঙ্গলবার (১১ জুলাই) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সরকারি আজিজুল হক কলেজ ক্যাম্পাসে এ ঘটনা ঘটে।
এ সময় ছাত্রলীগের বিদ্রোহী গ্রুপ সংগঠনটির জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক আল মাহিদুল ইসলাম জয়কে লাঞ্ছিত করার চেষ্টা করেন। জেলা ছাত্রলীগের দুপক্ষের বিরাজমান বিরোধকে কেন্দ্র করে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। তবে কেউ হতাহত হননি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মঙ্গলবার সরকারি আজিজুল হক কলেজে প্রচার মিছিলের প্রস্তুতি নেয় ছাত্রদল। খবর পেয়ে তাদের প্রতিহত করতে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সজীব সাহা ও সাধারণ সম্পাদক আল মাহিদুল ইসলাম জয় কলেজ ক্যাম্পাসে আসেন। এ সময় ছাত্রলীগের বিদ্রোহী গ্রুপের নেতা ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাফুজার রহমানও তার অনুসারীদের নিয়ে কলেজে অবস্থান নেন।
এক পর্যায়ে ছাত্রলীগ স্ট্যান্ডে বসাকে কেন্দ্র করে দুপক্ষের মধ্যে হাতাহাতি হয়। এ সময় ছাত্রলীগের বিদ্রোহী পক্ষের নেতাকর্মীরা সাধারণ সম্পাদক আল মাহিদুল ইসলাম জয়কে লাঞ্ছিত করার চেষ্টা করে। সেখান থেকে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক তাদের অনুসারীদের নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল ও সামাবেশ করে কলেজ লাইব্রেরির সামনে অবস্থান নেন। তারা বিভিন্ন শ্লোগান দিতে থাকেন।
অপরদিকে বিদ্রোহী পক্ষের নেতাকর্মীরা ছাত্রলীগ স্ট্যান্ডে অবস্থান নিয়ে পাল্টা শ্লোগান দিতে থাকে। এ সময় তাদের কাছে লাঠিসোটা ও জিআই পাইপও দেখা যায়।
পুরো কলেজ ক্যাম্পাসে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে বগুড়া সদর থানা পুলিশ ও জেলা গোয়েন্দা শাখা পুলিশ অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে ছাত্রলীগের উভয় পক্ষের মাঝে অবস্থান নেয়।
দুপুর দেড়টার দিকে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক তাদের অনুসারীদের নিয়ে কলেজের মূল ফটক দিয়ে বের হয়ে যায়। এরপরই বিদ্রোহী পক্ষের নেতাকর্মীরা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাফুজারের নেতৃত্বে কলেজে বিক্ষোভ মিছিল ও সামবেশ করে। তারা কলেজের হল গেট দিয়ে ক্যাম্পাস ত্যাগ করে।
এর আগে ছাত্রলীগের অবস্থানের মুখে কলেজে পূর্বনির্ধারিত মিছিল করতে পারেনি ছাত্রদল। তারা ক্যাম্পাসের মূল ফটকের সামনে অবস্থান নিলেও ছাত্রলীগের বাধায় প্রবেশ করতে পারেনি। তবে সরকারি শাহ সুলতান কলেজে সকাল ১০টার দিকে মিছিল করেছে সংগঠনটি। মিছিলে ছাত্রদলের ৩০-৪০ জন নেতাকর্মী অংশ নেন।
বগুড়া জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নূরে আলম সিদ্দিকী রিগ্যান বলেন, ‘সরকারি আজিজুল হক কলেজে মিছিলের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিল। সেখানে ছাত্রলীগ সন্ত্রাসী কায়দায় বাধা দেয়। তবে শাহ সুলতান কলেজে শান্তিপূর্ণভাবে মিছিল হয়েছে।’
বগুড়া জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সজীব সাহা জাগো নিউজকে বলেন, ‘মিছিলের নামে ছাত্রদলের নৈরাজ্য প্রতিহত করা হয়েছে। ক্যাম্পাসের পরিবেশ অস্থিতিশীল করতে ছাত্রদল মিছিলের নামে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করতে চায়।’
অভ্যন্তরীণ কোন্দলে হাতাহাতির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘যারাই এ ঘটনা ঘটিয়েছে তাদের চিহ্নিত করা হবে। ছাত্রলীগের সম্পাদককে যারা লাঞ্ছিত করার চেষ্টা করেছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ছাত্রলীগের বিদ্রোহী পক্ষের নেতা ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাফুজার রহমান বলেন, ‘ছাত্রদলকে প্রতিহত করতে ছাত্রলীগের ত্যাগী কর্মীরাই যথেষ্ট। যারা সংগঠনের নামে কমিটি বাণিজ্য করে ও ছাত্রলীগকে প্রশ্নবিদ্ধ করে সাধারণ কর্মীরা তাদের প্রতিহত করেছে।
লাঠিসোটা নিয়ে উপস্থিতির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ছাত্রদল মানেই অপশক্তি। সাধারণ শিক্ষার্থীরা নিজেদের ক্যাম্পাস রক্ষায় লাঠিসোটা নিয়ে এসেছিলো।’
বগুড়া স্টেডিয়াম পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ (পরিদর্শক) হরিদাস মন্ডল জাগো নিউজকে বলেন, ছাত্রলীগের বিবাদমান বিরোধ নিয়ে দুপক্ষের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দিয়েছিলো। উভয় পক্ষ ক্যাম্পাস ত্যাগ করেছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে।
সরকারি আজিজুল হক কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর শাহজাহান আলী জাগো নিউজকে বলেন, ছাত্রলীগের দুপক্ষের মধ্যে উত্তেজনা তৈরি হয়েছিল। প্রশাসনকে এ বিষয়ে জানানো হয়েছে। এখন কোনো সমস্যা নেই।
গত বছরের ৭ নভেম্বর রাতে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে ৩০ সদস্যের বগুড়া জেলা শাখার আংশিক কমিটি ঘোষণা দেওয়া হয়। ঘোষণার পর থেকেই কাঙ্ক্ষিত পদ না পেয়ে ছাত্রলীগের দুপক্ষের বিরোধ চলে আসছে। ওই বছরে বিজয় দিবসে দলীয় কর্মসূচিতেও হাতাহাতিতে জড়ায় ছাত্রলীগের বিবাদমান দুপক্ষ।