পদ্মা পাড়ের মানুষের নতুন আতঙ্ক হিসেবে দেখা দিয়েছে বিষধর রাসেলস ভাইপার বা চন্দ্রবোড়া সাপ।
বিষধর এই রাসেলস ভাইপার এখন আতঙ্ক ছড়িয়েছে কুষ্টিয়ার পদ্মা ও গড়াই পাড়ের মানুষের মধ্যে।
এছাড়া রাজবাড়ীর বাহাদুরপুর ইউনিয়নের তারাপুর গ্রামের বাসিন্দারাও আতঙ্কে আছেন।
জেলের জালে কিংবা লোকালয়ে মাঝেমধ্যেই দেখা মিলছে সাপটির। এতে নদীপাড়ের মানুষের নির্ঘুম ও আতঙ্কে রাত-দিন কাটছে। বিষধর এই সাপের ছোবলে এর আগে অনেকের মৃত্যু হয়েছে।
এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারত থেকে পানির তোড়ে বাংলাদেশে ভেসে আসছে এসব বিষধর সাপ। সাপটিকে অনেকে অজগরের বাচ্চা মনে করে। ফলে পোষার জন্য অনেকেই সঙ্গে নিয়ে যায়। দেখতে অজগরের মতো হলেও সাপটি যে কতোটা বিষধর অনেকেই বিষয়টি জানে না।
নদী তীরবর্তী এলাকার বাসিন্দারা জানায়, পদ্মা ও গড়াই পাড়ে রাসেলস ভাইপার নামে এই বিষধর সাপ মাঝেমধ্যেই মিলছে। কখনও জেলের জালে কখনও আবার চর কিংবা লোকালয়ে মিলছে। এর আগে নদীপাড়ের মানুষ বিরল প্রজাতির এই সাপ দেখেনি। বর্তমানে হরহামেশাই মিলছে এই সাপের অস্তিত্ব।
বাংলাদেশের রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ অঞ্চলে রাসেলস ভাইপার বেশি দেখা যায়। তবে ইদানিং উপকূলীয় জেলা পটুয়াখালীতেও এর দেখা মিলছে। খাবারের সন্ধানে ফসলের মাঠে চলে আসে এই বিষাক্ত সাপ।
প্রতিবেশী ভারত ও শ্রীলঙ্কায় এই সাপের আধিক্য রয়েছে। এই দুই দেশে যত মানুষ সাপের কামড়ে মারা যায়; তার মধ্যে ভারতে প্রায় ৪৩ শতাংশ এবং শ্রীলঙ্কায় প্রায় ৪০ শতাংশ মৃত্যু হয় রাসেলস ভাইপারের দংশনে। বাংলাদেশে এই হার অত বেশি নয়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার এক গবেষণায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশে প্রতিবছর ৪ লাখের বেশি মানুষকে সাপে কাটে, তাদের মধ্যে সাড়ে ৭ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়। ৯৫ শতাংশ ঘটনা ঘটে গ্রামঞ্চলে।
বিষধর সাপ কামড়ালে সেই বিষয় নিষ্ক্রয় করতে অ্যান্টিভেনম দেওয়া জরুরি। তা না হলে মৃত্যু ঝুঁকি তৈরি হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তালিকায় অ্যান্টিভেনমকে অত্যাবশ্যকীয় ওষুধের তালিকায় রাখা হলেও বাংলাদেশে এখনও কোনো অ্যান্টিভেনম তৈরি হয় না, আমদানি করতে হয়।
চিকিৎসকরা জানান, এই সাপের কামড়ে অল্প সময়ের মধ্যে রক্ত জমাট বেঁধে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। এছাড়া অঙ্গহানী, পক্ষাঘাত, কিডনির ক্ষতিসহ বিভিন্ন রকম শারীরিক উপসর্গ দেখা যেতে পারে। তাই কামড়ের পর সাপটি চিনতে পারলে দ্রুত চিকিৎসসা নেয়ার পরামর্শ চিকিৎসকদের।
রাসেলস ভাইপার বাংলাদেশ থেকে বহু বছর আগে বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল বলে ধারণা করা হচ্ছিল। কিন্তু এই প্রজাতির সাপ এই অঞ্চলে আবারও কীভাবে ফিরে আসছে, তা নিয়ে গবেষণা চলছে।