বাংলাদেশ পোশাক শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন এবং বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল শ্রমিক ফেডারেশনের স্থানীয় নেতাকর্মীদের মতবিরোধের জেরে গাজীপুরের টঙ্গীতে হত্যার শিকার হয়েছেন শ্রমিক নেতা শহিদুল ইসলাম। নিহত শহিদুল ইসলাম বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল শ্রমিক ফেডারেশনের গাজীপুর জেলা শাখার সভাপতি ছিলেন।
জানা গেছে, বেতন, বোনাস ও শ্রমিক সংগঠনগুলো নিজেদের আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ঘটে এ হত্যাকাণ্ড। এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত অভিযোগে এখন পর্যন্ত এজাহারভুক্ত ছয় আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এরই মধ্যে একজন এ ঘটনার দায় স্বীকার করেছেন এবং ঘটনার সঙ্গে জড়িত অন্যদের সম্পর্কেও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
শিল্পাঞ্চল পুলিশ সূত্র বলছে, গ্রেফতার ব্যক্তিদের মধ্যে একজন এ ঘটনার দায় স্বীকার করেছে। ঘটনাস্থলে কারা কারা ছিল, এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্যও দিয়েছে। এ ঘটনার পেছনে জড়িত ও ইন্ধনদাতা হিসেবে বেশ কয়েকজনের নাম পাওয়া গেছে। সেসব বিষয় খতিয়ে দেখা হচ্ছে। যেসব নাম পাওয়া গেছে, তাদের রাজনৈতিক পরিচয় রয়েছে কিনা, এসব বিষয়ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
কর্মকর্তারা বলছেন, গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের সাতাইশ বাগানবাড়ী এলাকার প্রিন্স জ্যাকার্ড সোয়েটার লিমিটেড কারখানায় গত ২৫ জুন ঈদ বোনাস ও বকেয়া বেতন ভাতার কারণে অসন্তোষ দেখা দেয়। ওই পরিপ্রেক্ষিতে শ্রমিকদের বিক্ষোভ শেষে বাসায় ফেরার পথে শহিদুলসহ চার শ্রমিক নেতার ওপর হামলা চালানো হয়। এ সময় শহিদুলসহ চার শ্রমিক নেতা আহত হন। স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা শহিদুলকে মৃত ঘোষণা করেন।
পরে বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল শ্রমিক ফেডারেশনের পক্ষে কেন্দ্রীয় সভাপতি কল্পনা আক্তার বাদী হয়ে টঙ্গী পশ্চিম থানা একটি হত্যা মামলা করেন।
পুলিশ সূত্র বলছে, প্রিন্স জ্যাকার্ড সোয়েটার লিমিটেড কারখানায় বেতন-বোনাস নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্ব শুরু হয় শ্রমিকদের মাঝে। একপর্যায়ে সেই গার্মেন্টসের শ্রমিকরা শহিদুলের সঙ্গে যোগাযোগ করে বেতন-বোনাসের বিষয়টি সমাধানের জন্য আলোচনা করার অনুরোধ জানান। শহিদুল ইসলাম যখন ঘটনাটি নিয়ে মালিক ও গার্মেন্টস কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলতে যান, এ বিষয়টি তখন ভালোভাবে নেননি শ্রমিকদের আরেক সংগঠন বাংলাদেশ পোশাক শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়নের নেতারা। যদিও এই সংগঠনের নেতারা স্থানীয় রাজনৈতিক ব্যক্তিদের সঙ্গে সমন্বয় করে বিভিন্ন কারখানায় নিজেদের আধিপত্য চালিয়ে আসছিল।
শিল্পাঞ্চল পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি ক্রাইম মাসুদ আহাম্মদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, শ্রমিক নেতা শহিদুল হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে বেশ কয়েকজনের সম্পৃক্ততার বিষয়ে তথ্য পাওয়া গেছে। সব বিষয়ে যাচাই-বাছাই করে অভিযুক্তদের আইনের আওতায় আনতে আমরা কাজ করছি। এখন পর্যন্ত মামলার এজাহারভুক্ত ছয় জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ ঘটনার পেছনে যারা রয়েছে, তাদের কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।