• মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:৩৭ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম:

সুন্দরবনের গহিনে গাছ পুড়িয়ে শুঁটকি তৈরি, হুমকিতে জীববৈচিত্র্য

নিউজ ডেস্ক
আপডেটঃ : বৃহস্পতিবার, ৩ আগস্ট, ২০২৩

গহিন সুন্দরবনের ভেতরে শুকানো হয় বিষ প্রয়োগে মারা মাছ। আর এ কাজে জ্বালানো হয় সুন্দরবনের বিভিন্ন প্রজাতির গাছ। এতে ক্ষতি হচ্ছে সুন্দরবনের সংরক্ষিত গাছপালা ও পরিবেশের। ধ্বংস হচ্ছে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য।

সুন্দরবনের গভীরে গাছ কেটে জায়গা করে অবৈধভাবে গড়ে উঠছে শুঁটকির ডিপো (খাঁটি)।
জানা গেছে, সুন্দরবনে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞার মধ্যেই একশ্রেণির অসাধু জেলে গহিন বনের বিভিন্ন খালে বিষ ছিটিয়ে চিংড়ি ধরছেন। এতে বিরূপ প্রভাব পড়ছে বনের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের ওপর। বন্য প্রাণী এবং নদী-খালের মাছের বিচরণ ও প্রজনন কার্যক্রমের সুরক্ষায় গত ১ জুন থেকে সুন্দরবনে প্রবেশে সব ধরনের অনুমতি বন্ধ রেখেছে বন বিভাগ।

চলবে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত। এর মধ্যে সম্প্রতি বনের পাতকোষ্টা, তোমরখালী, পাশাখালী, গেয়ওয়খালী, মার্কি, আদাচাকি ও ভদ্রা এলাকায় এমন কয়েকটি চিংড়ি শুকানোর স্থান চিহ্নিত করে তা উচ্ছেদ করেছে বন বিভাগ।
অভিযোগ রয়েছে, এসব এলাকা থেকে শুঁটকি বানানোর ডিপো উচ্ছেদ করলেও কালাবগি স্টেশনের আওতাধীন আদা চাকি ও নীল কোমল স্টেশনের আওতাধীন বালিং গাং এলাকায় পাঁচ-সাতটি শুঁটকির খঁটি গড়ে উঠেছে। সর্বশেষ গত ২২ জুলাই কাশিয়াবাদ ফরেস্ট স্টেশনের বনরক্ষীরা গহিন বনের মধ্যে এমন একটি চিংড়ি শুকানোর স্থান ধ্বংস করেছেন।

কয়রা পরিবেশবাদী সংগঠন সবুজ আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবু বক্কর সিদ্দিক অভিযোগ করে বলেন, সুন্দরবনকেন্দ্রিক একটি সিন্ডিকেট দীর্ঘদিন সুন্দরবনে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছে। এই সিন্ডিকেট বন বিভাগের কিছু অসাধু কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে চলে। তারা সুন্দরবনে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা চলাকালে কিছু জেলেকে বনে পাঠান। জেলেরা বিষ দিয়ে মাছ শিকার ও বনের কাঠ পুড়িয়ে শুঁটকি তৈরি করেন। এরা বনের জীববৈচিত্র্য ধ্বংস করছেন।

তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে চলতি প্রজনন মৌসুমে সুন্দরবনের বিভিন্ন প্রজাতির মাছের অপূরণীয় ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। এ জন্য বন বিভাগকে আরো সতর্ক ও কঠোর হতে হবে।
কয়রার সুন্দরবনসংলগ্ন মঠবাড়ি এলাকার বনজীবী জেলে আনারুল ইসলাম বলেন, বিষ দিয়ে শিকার করা চিংড়ি লোকালয়ে আনা যায় না। গোপনে পাইকারি আড়তে বিক্রিও হয় না। অসাধু জেলেরা এখন বনের মধ্যে মাচা করে আগুনের তাপে চিংড়ি শুকিয়ে শুঁটকি তৈরি করে কৌশলে শহরে পাঠাচ্ছেন।
একাধিক জেলের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ভারতের হেমনগর ও কলকাতা বন্দর থেকে সিমেন্টের কাঁচামাল নিয়ে কয়রার সুন্দরবনসংলগ্ন আংটিহারা শুল্ক অফিস হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে ছোট জাহাজ। এসব জাহাজের কর্মীদের মাধ্যমেও হরিণের মাংস ও বিষ দিয়ে ধরা চিংড়ি পাচার হয়। গত ৬ মার্চ আংটিহারা বাজারের কাছ থেকে হরিণের মাংসসহ জাহাজের চার শ্রমিককে আটক করে পুলিশে দেন স্থানীয়রা।

জেলেরা জানান, সুন্দরীগাছের আগুন চিংড়ি শুকানোর জন্য বেশ ভালো। এতে শুকানো চিংড়ির রং অনেকটা লালচে হয়। বাজারে ওই চিংড়ির চাহিদা ও দাম বেশি। আগে কয়রার বিভিন্ন এলাকায় এ ধরনের চিংড়ি শুকানোর কারখানা (খঁটি) ছিল। গত দুই বছরে বন বিভাগ ও স্থানীয় প্রশাসন যৌথভাবে অভিযান চালিয়ে অন্তত ৩০টি খঁটি উচ্ছেদ করেছে। এর পর থেকে বনের মধ্যেই চিংড়ি শুকানোর ব্যবস্থা করছেন অসাধু জেলেরা।

অভিযানের বিষয়ে কাশিয়াবাদ ফরেস্ট স্টেশনের কর্মকর্তা শ্যামা প্রসাদ রায় বলেন, বনের সুন্দরী, পশুর, গেওয়াসহ অনেক প্রজাতির গাছ কেটে একই স্তরে সাজিয়ে বিশেষ কায়দায় বানানো হয় মাচা। বনের কাঠ দেখেই বোঝা যাচ্ছিল সেখানে চিংড়ি শুকনো হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বন বিভাগ ও পুলিশের অভিযানে গত দেড় মাসে সুন্দরবন থেকে বিষ দিয়ে ধরা এক হাজার ১০ কেজি চিংড়ি জব্দ করা হয়েছে। এর বাইরে ১৯ জুলাই রাতে কয়রার কাশিরহাটখোলা এলাকা থেকে বিষ দিয়ে শিকার করা ৩১০ কেজি চিংড়িসহ একজনকে আটক করে পুলিশ। ২১ জুলাই গহিন সুন্দরবনের খাল থেকে দুই বোতল বিষসহ দুজনকে আটক করেন কোবাদক ফরেস্ট স্টেশনের বনরক্ষীরা।

সুন্দরবনের খুলনা রেঞ্জের সহকারী বনসংরক্ষক এ জেড এম হাসানুর রহমান বলেন, এ ব্যাপারে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

পশ্চিম সুন্দরবনের বিভাগীয় কর্মকর্তা আবু নাসের মহসীন হোসেন বলেন, জেলে ও দুর্বৃত্তদের নিষিদ্ধ সময়ে সুন্দরবনে অনুপ্রবেশ ঠেকাতে টহলও বাড়ানো হয়েছে। অবৈধ কাজে বন বিভাগের কেউ জড়িত থাকলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ