• বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:০৪ অপরাহ্ন

ঢাকের বাদ্য বাজেরে…

আপডেটঃ : বৃহস্পতিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

মুসলমানের ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আজহার আমেজ শেষ হতে না হতেই চারদিকে দুর্গাপূজার উৎসব শুরু হয়েছে। মণ্ডপে মণ্ডপে ঢাকের বাদ্য বাজানোর রিহার্সেল এতদিন তো দুর্গাপূজার কথাই স্মরণ করিয়ে দিচ্ছিল। এখন চলছে সে পূজার চূড়ান্ত আয়োজন। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস মতে, প্রতিবারের মতো এবারও দেশের পূজা মণ্ডপ ঘুরে দেবী দুর্গা আসছেন অশুভ শক্তির বিনাস এবং শুভ শক্তির অভ্যুদয় ঘটাতে। তবে দেবী দুর্গার বিদায়ের ক্ষণ ঘনিয়ে এসেছে। তিনি এবার ফিরবেন ‘কৈলাসে দেবালয়ে’। আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর বিকালে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হচ্ছে হিন্দু সম্প্রদায়ের দশ দিনব্যাপী সবচেয়ে বড় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। হিন্দুদের দেবী দুর্গার ইতিহাস ঘাঁটলে ‘পরমাপ্রকৃতি, বিশ্বের আদি কারণ ও শিবপত্নী’ এই বাক্যটিতেই পরিচয় পাওয়া যায় তার। রূপসী মাতৃদেবী বাংলায় পূজিত হন শরৎকালে। যখন নীলাভ আকাশে ফুরফুরে হাওয়ায় ভেসে বেড়ায় সাদা মেঘের ভেলা, নদীর ধারে উজ্জ্বল রোদে ফুটে থাকে বাতাসে দোল খাওয়া সাদা কাশের ফুল আর গ্রামীণ জনপদে দেবীর আগমনী ঘোষণায় উন্মাতাল ঢাকের শব্দে বাঙালির আদিম রক্তস্রোতে জেগে ওঠে এক আদিম মাতৃভক্ত নিষাদ। দেবী দুর্গার পরিচয় দিতে লেখকরা লিখে গেছেন এমন করেই। সাধারণত শরৎকাল থেকে বসন্তকাল পর্যন্ত বাঙালির পূজার সময়; শারদীয়া দুর্গাপূজা দিয়ে এই বাৎসরিক মাতৃপূজার শুভ সূচনা। বারো মাসে তের পার্বণ কথাটি হিন্দু সম্প্রদায়ের জন্য প্রচলিত হলেও শারদীয় বা দুর্গাপূজাই বেশি আনন্দ উৎসবের মাধ্যমে পালন করা হয়। এ থেকে বাদ পড়ে না শোবিজের তারকারাও। তারাও সাধারণ মানুষের লাইনে দাঁড়িয়েই দুর্গার আশীর্বাদ কামনা করে বেড়ান। পূজা নিয়ে তাদের বাড়তি আগ্রহ লক্ষ্য করা যায় প্রতিবারই। এবারও ব্যতিক্রম নয়।

এবারের পূজা ঢাকাই ছবির অন্যতম জনপ্রিয় নায়িকা বিদ্যা সিনহা মিমের একটু অন্যরকমই হচ্ছে। এর একটা কারণও রয়েছে। সেটি হচ্ছে এবার পূজাতে তার অভিনীত সৃজিত মুখার্জির ‘ইয়াতি অভিযান’ ছবিটি মুক্তি পেয়েছে কলকাতায়। পূজা উপলক্ষে কী করছেন এ তারকা? সেটিই জানতে চাওয়া হয়েছিল তার কাছে। কিংবা আগের পূজার সঙ্গে এখনকার পূজার কোনো পার্থক্য রয়েছে কিনা? উত্তরে মিম বলেন, ‘আগে পূজা এলেই গ্রামের বাড়ি রাজশাহী চলে যেতাম। বন্ধুবান্ধব আর আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে মণ্ডপে মণ্ডপে ঘুরে বেড়াতাম। এখন শুটিংয়ের কারণে তা আর নিয়মিত সম্ভব হয়ে ওঠে না। তবে সাধ্যমতো পূজা মণ্ডপ ঘুরে ঘুরে দেখার চেষ্টা করি। এবারও রাজশাহী যাব। পরিকল্পনা আছে। ’ পূজার কেনাকাটা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে মিম বলেন, ‘শুটিংয়ের ব্যস্ততার ফাঁকে শপিংটা সেরে ফেলেছি। পূজার এ ক’দিন বিভিন্ন মণ্ডপে ঘুরে বেড়াব। বাসায় নিজের হাতে মজার কিছু আইটেমও রান্না করব। আর রাজশাহী গেলে তো কথাই নেই।’

বাংলা গানের আরেক জনপ্রিয় তারকা কুমার বিশ্বজিৎ। সঙ্গীতের বর্ণিল ক্যারিয়ার তার। বয়স ৫৪ পার করলেও এখনও চিরসবুজ গায়ক হিসেবেই ভক্তদের কাছে নিজের ইমেজ ধরে রেখেছেন। গায়কীতে ত্রিশ বছর আগের সেই কুমার বিশ্বজিৎকেই খুঁজে পাচ্ছেন শ্রোতারা। এবারের পূজা পরিবারের সবাইকে নিয়ে ঢাকাতেই উৎযাপন করছেন এ তারকা। পূজা নিয়ে কুমার বিশ্বজিৎ বলেন, ‘শুধু পূজা নয়, উৎসব উপলক্ষে পরিবারের কেনাকাটার বিষয়টি আমার স্ত্রীই করে। এবারও সে-ই করেছে। পূজা মানেই আমার কাছে দারুণ এক মুহূর্ত। বিশেষ করে ঢাকের বাদ্য। ঢাকের বাদ্যের সঙ্গে প্রেম আমার ছোটবেলা থেকেই। পূজাতে এখনও তাই ঢাকের শব্দ শুনলেই আমি চমকে উঠি। ছোটবেলায় ফিরে যাই। যে সময়টা কিসের খাওয়া দাওয়া! সবসময় যারা ঢোল বাজাতেন তাদের সঙ্গেই কাটিয়ে দিতাম। এখন কাজের ব্যস্ততায় অষ্টমীর দিন খুব একটা যাওয়া পড়ে না। তবে নবমীতে অবশ্যই পরিবার নিয়ে মণ্ডপে যাই। এবারও যাব।’

টিভি নাটকের জনপ্রিয় অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী। সিনেমাতেও অভিষেক হয়েছে তার। কিছুদিন আগে হুমায়ূন আহমেদের ‘দেবী’ গল্প অবলম্বনে নির্মিত ‘দেবী’ ছবিতে মিসির আলী চরিত্রে অভিনয় শেষ করেছেন তিনি। পূজা নিয়ে এ তারকারও রয়েছে দারুণ সব স্মৃতি। তবে পূজায় রাজধানীতে থাকছেন না তিনি। এ প্রতিবেদন ছাপা যখন হবে তখন হয়তো তিনি গ্রামেই থাকবেন। গ্রামে বাবা-মা আছেন। তাদের সঙ্গে মিলে পূজার আনন্দ ভাগাভাগি করতে নবমীতে বাড়ি যাবেন বলে জানিয়েছেন তিনি। তবে দশমীর দিনে ঢাকাতেই দেখা যাবে তাকে। এ প্রসঙ্গে চঞ্চল বলেন, ‘পূজাতে গ্রামে যাচ্ছি। পরিবারের সঙ্গেই ঈদ করব। তবে এখনকার পূজা আমার কাছে একটু অন্যরকম। ছোটবেলায় যেমনভাবে পূজা পালন করেছি এখন সেভাবে পালন করা হয় না। প্রতিমা বিসর্জন দিতে নৌকায় উঠতাম। ঢাকের তালে তালে নাচতাম। এখন সেটি নেই। তবে আনন্দ ঠিকই আছে।’

ছোট পর্দা থেকে শুরু করে ভিন্নধারার সব জায়গায়ই প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন অভিনেত্রী অপর্ণা ঘোষ। গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের দামপাড়ায়। তাই পূজা পালন করতে ২৫ তারিখ চট্টগ্রাম চলে গেছেন তিনি। তবে আগের মতো এখন আর পূজা মণ্ডপে ঘোরা হয় না অপর্ণার। পরিবারের সবাই ও অন্য বন্ধুদের সঙ্গে জমিয়ে আড্ডা দেবেন বলেই জানিয়েছেন। পূজা পালন শেষে আগামী ৫ অক্টোবর ঢাকায় ফিরবেন এ অভিনেত্রী। পূজা উদযাপন উপলক্ষে তিনি বলেন, ‘পূজা মানেই আলাদা কিছু। প্রতি বছরই পূজা উপলক্ষে আমি চট্টগ্রাম যাই। এবারও এসেছি। আনন্দময় কাটছে সময়গুলো। তবে ছোটবেলার মতো আনন্দ আর এখন হয় না। যদিও সময়ের আবর্তে মানুষের জীবনে অনেক পরিবর্তন ঘটে। আমি সবসময় চেষ্টা করি উৎসব পার্বণে নিজেকে হাসিখুশি রাখতে। সবার সঙ্গে মিলেমিশে থাকতে।’

টিভি তারকা হওয়ার আগে পূজা গ্রামের বাড়িতেই উদযাপন করতেন অভিনেত্রী মৌটুসী বিশ্বাস। চট্টগ্রামে বাড়ি মৌটুসীর। মেয়ে আর স্বামীকে নিয়ে এখন পূজা ঢাকাতেই করা হয় বলে জানিয়েছেন তিনি। এ প্রসঙ্গে মৌটুসী বলেন, ‘শুটিংয়ের কারণে বাড়ি যাওয়ার জন্য সময় বের করতে পারি না। কেনাকাটা অবশ্য এরই মধ্যে সেরে ফেলেছি। পূজার প্রতিটা দিন কাজের ফাঁকে ফাঁকে স্বামী-সন্তান আর বাবা-মাকে নিয়ে বিভিন্ন মণ্ডপে ঘুরে বেড়াব। প্রতিবারই এমনভাবে আনন্দঘন সময়টা পার করি।’

চট্টগ্রামের মেয়ে উর্মিলা শ্রাবন্তী কর। পূজা এলেই ছুটে যান নাড়ির টানে। এবারও যাচ্ছেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘পূজা মানেই তো আমার কাছে অন্যরকম আমেজ। এবার পূজা উপলক্ষে বেশ কয়েকটি নাটকে কাজ করলাম। তবে পূজায় কোনো নাটকের শুটিংয়ের শিডিউল দেইনি। নবমী ও দশমীতে চট্টগ্রামে থাকব। পরিবারের সবার সঙ্গেই পূজার আনন্দ ভাগ করে নেব। তবে এখনকার পূজার চেয়ে ছোটবেলার পূজায় বেশি আনন্দ করতাম। সবাই একসঙ্গে মণ্ডপে মণ্ডপে ঘুরে বেড়াতাম। সবাই মিলে হইহুল্লোড় করে কাটাতাম। এখন সেটি নেই। তবে আনন্দ আছে। অন্যরকম আনন্দ। আমরা বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের আনন্দগুলোও বদলে যায়।’


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ