কুড়িগ্রামে ফের বাড়তে শুরু করেছে নদ-নদীর পানি। জেলার নিম্নাঞ্চলগুলো প্লাবিত হয়ে বন্যার আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী। আমন ধান তলিয়ে যাওয়ায় দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে কৃষকদের।
এছাড়া রাস্তা-ঘাট ডুবে যাওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থা নিয়ে ভোগান্তিতে পড়েছে মানুষজন।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য মতে, জেলার ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বেড়ে বিপৎসীমা ৭ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। দুধকুমার নদের পানি ২১ সেন্টিমিটার ও ধরলা নদীর পানি এখনো পানি বিপৎসীমার ৩০ সেন্টিমিটার নিচে রয়েছে।
এছাড়া অন্যান্য নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হলেও তিস্তা নদীর কাউনিয়া পয়েন্ট পানি বিপৎসীমার ২ সেমি নিচে রয়েছে।
সদর উপজেলার চর যাত্রাপুর ইউনিয়নের পোড়ার চরের বাসিন্দা মতিয়ার রহমান বলেন, ‘আজ ৫ দিন থেকে বন্যার পানিতে খুব কষ্টে চলাচল করছি। নৌকা ছাড়া বের হতে পারছি না। যে হারে পানি বাড়তেছে জানি না কি হবে ।’
ব্রহ্মপুত্র নদের পাড়ের খেয়ার আলগা চরের বাসিন্দা আলো খাতুন বলেন, ‘স্বামী বাড়িতে নাই, শহরে কাজে গেছে। বাচ্চা তিনটা ছোট, বাচ্চা তিনটাকে ধরে কষ্টে আছি। পানির মধ্যে বাচ্চাদের নিয়ে ভয়ে আছি।
এই চরের আরেক বাসিন্দা সাহেরা বেগম বলেন, ‘হামার ঘরত পানি উঠছে, মানুষের বাড়িত আশ্রয় নিছি আজ দুইদিন হলো। নদির পানি আজ সকালেও এক হাত বাড়ছে। খাওয়ার পানির খুব কষ্ট হইছে।
উলিপুরের বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বাবলু মিয়া বলেন, ‘আমার এলাকার কয়েকটা চরে ব্রহ্মপুত্রের পানিতে প্রায় ৭০০ পরিবার পানিবন্দী। সরকারের থেকে ৪ টন চাল বরাদ্দ পেয়েছি। পর্যায়ক্রমে বিতরণ করা হবে।
সদরের যাত্রাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল গফুর জানান, ‘ব্রহ্মপুত্র অববাহিকার প্রায় দুইশতটির মতো পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে শৌচাগারের সমস্যাটা বেশি দেখা দিয়েছে।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের বরাতে কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)’র নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, আগামী ২৪ ঘণ্টায় তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমারের পানি কিছুটা কমে বন্যা পরিস্থিতি উন্নতি হবে এবং ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বেড়ে কিছু নিম্নাঞ্চলগুলো প্লাবিত হতে পারে।
কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ জানান, বন্যার জন্য বরাদ্দকৃত ৩৬২ মেট্রিক টন চাল, পাঁচ লাখ নগদ টাকা ও তিন হাজার ৭০০ প্যাকেট শুকনো খাবার উপজেলা ভিত্তিক চাহিদামতো বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে সেসব বিতরণের কাজ চলমান এবং শিশু খাদ্য বাবদ দুই লাখ ও গো খাদ্য ক্রয় বাবদ পাঁচ লাখ টাকা মজুত আছে। নতুন করে বরাদ্দের চাহিদা এখন পর্যন্ত প্রয়োজন হয়নি।