• শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ০৬:০৯ অপরাহ্ন
শিরোনাম:

ইসির সঙ্গে ৩ দলের সংলাপ

আপডেটঃ : সোমবার, ৯ অক্টোবর, ২০১৭

নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সঙ্গে আজ সোমবার জাতীয় পার্টি, ১৫ অক্টোবর বিএনপি ও ১৮ অক্টোবর আওয়ামী লীগের সংলাপ অনুষ্ঠিত হবে। একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে তিন দলই বেশ কিছু লিখিত প্রস্তাব তুলে ধরবে।

ক্ষমতাসীনরা গুরুত্ব দেবে ডিজিটাল নির্বাচনী ব্যবস্থার ওপর। ইসি প্রয়োজন মনে করলে সেনাবাহিনী নামাতে পারবে, তবে তাদের বিচারিক ক্ষমতা দেয়ার বিপক্ষে থাকবে দলটি।

অন্যান্য রাজনৈতিক দলের পরামর্শকে গুরুত্ব দিয়ে নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের জোরালো দাবি জানাবে বিএনপি। এছাড়া নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকার গঠন, সংসদ ভেঙে দিয়ে ভোট চাইবে।

বিরোধী দল জাতীয় পার্টি ইসির সঙ্গে আজকের সংলাপে নির্বাচনের সাত দিন আগে সেনা মোতায়েনসহ আট দফা দাবি তুলে ধরবে।

ডিজিটাল নির্বাচনী ব্যবস্থার প্রস্তাব দেবে
দেয়া হবে ১১ দফা সুপারিশ ও কয়েকটি প্রস্তাব

মাহবুব হাসান

নির্বাচন কমিশনের সংলাপে গিয়ে ডিজিটালাইজড নির্বাচনী ব্যবস্থা গড়ে তোলার প্রস্তাব দেবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এ ছাড়া আরও ১১ দফা সুপারিশ এবং কয়েকটি প্রস্তাব দেয়া হবে।

অবাধ-নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান এবং শত্তিশালী নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠন ও নির্বাচনী ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য এসব প্রস্তাব দেয়া হবে।

আরপিওতে বড় ধরনের পরিবর্তনে রাজি না থাকলেও কয়েকটি ধারা-উপধারায় সংযোজন-বিয়োজনের আহ্বান জানাবে দলটি। এ ছাড়া নদীভাঙন বা জরুরি প্রয়োজনে অত্যাবশ্যক সীমানা পুনর্নির্ধারণ ছাড়া একাদশ নির্বাচনের আগে নির্বাচনী সীমানা পরিবর্তনের বিপক্ষে মত দেবে দলটি।

এদিকে প্রবাসীদের ভোটার করার বিষয়ে ইতিবাচক হলেও তাদের ক্ষেত্রে দেশে এসে ভোট দেয়ার পক্ষে এবং পোস্টাল ভোটিংয়ের বিপক্ষে মত দেবে দলটি।

সার্বিকভাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে সংবিধানসম্মত উপায়ে নির্বাচন সম্পন্ন করার প্রস্তাব দেবে। নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েনের বিষয়টি ইসির ক্ষমতার ওপর ছেড়ে দেয়া হবে। পাশাপাশি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থান পর্যালোচনার আহ্বান থাকবে আওয়ামী লীগের তুলে ধরা প্রস্তাবে।

ক্ষমতাসীন দল তাদের প্রস্তাবের একটি খসড়া ইতিমধ্যে প্রস্তুত করেছে। চলতি সপ্তাহেই দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আলোচনাসাপেক্ষে খসড়াটি চূড়ান্ত করা হবে। গত বুধবার দলের সভাপতির ধানমণ্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে এ সংশ্লিষ্ট দলীয় নেতারা বৈঠক করে খসড়া তৈরি করেন।

এ মুহূর্তে সেগুলো ঘষামাজা চলছে। আগামী ১৮ অক্টোবর নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সংলাপে বসতে যাচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।

প্রস্তাব তৈরির সঙ্গে জড়িত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল এক নেতা রোববার যুগান্তরকে বলেন, ব্যালট পেপার ছাড়া নির্বাচনী ব্যবস্থা চায় আওয়ামী লীগ। যাতে ইভিএম ব্যবহারের মাধ্যমে সারা দেশে একযোগে জাতীয় নির্বাচন সম্পন্ন করা যায়।

যাকে বলা যাবে পূর্ণাঙ্গ ডিজিটালাইজড নির্বাচনী ব্যবস্থা। আর এটি ডিজিটাল বাংলাদেশের ধারণার সঙ্গেও সম্পৃক্ত। তিনি বলেন, একাদশ নির্বাচনে আংশিকভাবে হলেও দ্বাদশ নির্বাচনে পূর্ণাঙ্গ ডিজিটাল নির্বাচনী ব্যবস্থা প্রচলনের দাবি তুলবেন তারা। এ ক্ষেত্রে উদাহরণ হিসেবে ভারতের কয়েকটি নির্বাচনী আসনে অনুষ্ঠিত ডিজিটাল পদ্ধতির কথা তুলে ধরবেন তারা। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ইসির সামর্থ্য অনুযায়ী মফস্বলে সম্ভব না হলেও অন্তত সিটি কর্পোরেশনভিত্তিক আসনগুলোয় ইভিএম ব্যবহারের জোরালো দাবি তুলবেন তারা।

নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সংলাপে কী কী বিষয় আলোচনা হবে জানতে চাইলে এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী রোববার মুঠোফোনে যুগান্তরকে বলেন, অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান প্রশ্নে যে যে অবস্থা দরকার আমরা সেগুলোর পক্ষেই বলব। সংবিধানসম্মত উপায়ে প্রধানমন্ত্রীর অধীনে নির্বাচনকালীন সরকার থাকবে এবং নির্বাচন কমিশন নির্বাচন সম্পন্ন করবে, আমরা সেই মতামত তুলে ধরব।

সূত্র জানায়, অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান প্রশ্নে প্রিসাইডিং অফিসার-পোলিং অফিসার নিয়োগের ক্ষেত্রে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ বিভিন্ন বিষয়ে ১১টি সুপারিশ থাকবে।

এবার কমিশনে গিয়ে ভোটার তালিকায় পিতা বা স্বামীর নামের পাশাপাশি মাতা এবং স্ত্রীর নাম দেয়ার জন্য মত দেবে দলটি। আরপিওর ১৬ ধারায় ছোট্ট একটি সংযোজনের দাবি থাকবে দলের নেতাদের। কেননা এ ধারা অনুযায়ী প্রথমে একটি আসনে কোনো দল একাধিক প্রার্থী মনোনয়ন দিতে পারলেও প্রত্যাহারের আগে অবশ্যই চূড়ান্তভাবে মনোনীতর নাম ইসিকে জানাতে হবে। কিন্তু কোনো কারণে সে তথ্য ইসিতে না পৌঁছলে যেমন- ফ্যাক্স বা চিঠি ইসি না পেলে সে ক্ষেত্রে দলের প্রধান সিইসির সঙ্গে যোগাযোগ করে চূড়ান্ত মনোনীতর নাম জানাতে পারবেন।

এ ছাড়া আগেরবারের মতোই একটি অভিন্ন পোস্টারে সব প্রার্থীর নাম, পরিচয় এবং মার্কা থাকা, একটি অভিন্ন মঞ্চে সব প্রার্থীর নির্বাচনী জনসভা করার জন্য প্রস্তাব দেবে দলটি। ইসি চাইলে সেনাবাহিনীকে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে ব্যবহার করতে পারবে। তবে এ বাহিনীকে বিচারিক ক্ষমতা না দেয়ার পক্ষে থাকবে ক্ষমতাসীনরা।

গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে (আরপিও) নিয়মিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংজ্ঞায় সেনাবাহিনীকে অন্তর্ভুক্ত না করার জন্য দাবি জানানো হবে। রাজনৈতিক দলগুলোকে ভোটের সাত দিন আগে নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলোর নামের তালিকা সরবরাহ করতে হবে। নির্বাচনের দিন সব ভোট কেন্দ্রে তাদের সুষম উপস্থিতি নিশ্চিত করতে বলা হবে। আর সীমানা পুনর্নির্ধারণ প্রশ্নে ‘বিদ্যমান আইন অনুসারে আগামী নির্বাচনের আগে সীমানা পুনর্নির্ধারণের সুযোগ নেই’ মর্মে প্রস্তাবে উল্লেখ থাকবে।

প্রসঙ্গত, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপে নয়টি বিষয় নির্ধারণ করেছে ইসি। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল- আরপিও সংশোধন, বিদ্যমান আইনের বাংলা করা, অবৈধ অর্থ এবং পেশিশক্তির ব্যবহার রোধে আইনি কাঠামো সংস্কার। তাছাড়া সীমানা পুনর্নির্ধারণের লক্ষ্যে জনসংখ্যা, ভোটারসংখ্যা ও মোট আয়তনের সমন্বয়ের মাধ্যমে সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ নিয়ে দলগুলোর মতামত চাইবে কমিশন।

আর ভোটার তালিকা প্রণয়ন ও বিতরণে পরামর্শ, ভোট কেন্দ্র স্থাপন সংক্রান্ত কার্যক্রমে মতামত, রাজনৈতিক দল নিবন্ধন এবং নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল নিরীক্ষা সংক্রান্ত প্রস্তাবনা এবং সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে ইসির সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য প্রস্তাবনাও চাওয়া হচ্ছে সংলাপে। তবে, চলমান সংলাপে এর বাইরেও রাজনৈতিক দলগুলো বিভিন্ন প্রশ্নে তাদের মতামত ও প্রস্তাব তুলে ধরতে পারছে।

গত ৩১ জুলাই সুশীল সমাজ, ১৬ ও ১৭ আগস্ট গণমাধ্যম প্রতিনিধির সঙ্গে মতবিনিময়ের পর ২৪ আগস্ট থেকে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ শুরু করে নির্বাচন কমিশন। ১৯ অক্টোবর এ সংলাপ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।

সংসদ ভেঙে দিয়ে নির্বাচনের দাবি
সেনা মোতায়েনসহ ছয় ইস্যু গুরুত্ব পাবে

হাবিবুর রহমান খান

নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সংলাপে অংশ নিতে জোর প্রস্তুতি শুরু করেছে বিএনপি। সাম্প্রতিক প্রসঙ্গ হিসেবে প্রধান বিচারপতির ছুটি এবং সংসদ ভেঙে দেয়া, সহায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনসহ বেশ কিছু বিষয় তুলে ধরবে দলটি।

এ লক্ষ্যে চলছে প্রাথমিক খসড়া তৈরির কাজ। অন্যান্য রাজনৈতিক দলের পরামর্শকে গুরুত্ব দিয়ে নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের জোর দাবি জানানো হবে। সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট প্রতিটি স্তরে নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের দায়িত্ব দেয়ার দাবি জানানো হবে। এছাড়া সংলাপে রাজনীতিবিদদের বিরুদ্ধে দেয়া মামলা প্রত্যাহারসহ ছয়টি সুনির্দিষ্ট ইস্যুকে গুরুত্ব দেয়া হবে।

সংলাপে অংশ নেয়া প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর যুগান্তরকে বলেন, সংলাপে গেলে আমরা সব দলের অংশগ্রহণে একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে যা যা করা প্রয়োজন তা করতে ইসিকে আহ্বান জানাব।

তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের আগেই রোডম্যাপ ঘোষণা করেছে। এ থেকে সাধারণ মানুষের মনে তাদের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। তারপরও আমরা আশা করব ইসি বাস্তবতা উপলব্ধি করে সব দলের সঙ্গে আলোচনা করে নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা নেবে। গণতান্ত্রিক দল হিসেবে বিএনপি সেই নির্বাচনে যে কোনো সহযোগিতা করতে প্রস্তুত।

রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের অংশ হিসেবে ১৫ অক্টোবর মাঠের বিরোধী দল বিএনপির সঙ্গে ইসির সংলাপের দিন চূড়ান্ত করা হয়েছে। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে সিনিয়র কয়েকজন নেতা, ইসির সাবেক এক সচিব সংলাপের প্রাথমিক খসড়া তৈরির কাজ করছেন।

সূত্র জানায়, দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা সংলাপের আলোচ্য বিষয়ের খসড়া তৈরি নিয়ে পুরোদমে কাজ করছেন। লন্ডনে অবস্থানরত দলের চেয়ারপারসনের পরামর্শে এবং সিনিয়র নেতাদের মতের ওপর ভিত্তি করে দায়িত্বপ্রাপ্তরা এ খসড়া তৈরি করছেন। শীর্ষ নেতাদের পরামর্শের পরই খসড়া চূড়ান্ত করা হবে।

এরপর সংলাপের এক বা দু’দিন আগে সিনিয়র নেতারা ফৈর বৈঠকে বসবেন। সেই বৈঠকেই চূড়ান্ত করা হবে লিখিত প্রস্তাব। এ বিষয়ে সর্বশেষ শনিবার রাতে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সিনিয়র নেতারা বৈঠক করেন। এ বৈঠকে ইসির সঙ্গে সংলাপের বিষয়বস্তু নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয় । নির্বাচন কমিশন গঠন ও ইসি শক্তিশালীকরণে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া যে রূপরেখা দিয়েছিলেন তার আলোকেই তৈরি করা হচ্ছে সংলাপের খসড়া।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচন কমিশন গঠন ও ইসি শক্তিশালীকরণে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া যে রূপরেখা দিয়েছিলেন তার আলোকেই তৈরি করা হচ্ছে সংলাপের খসড়া।

প্রাথমিক খসড়া থেকে জানা গেছে, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) ‘ল এনফোর্সিং এজেন্সি’র সংজ্ঞায় অন্যান্য বাহিনীর সঙ্গে ‘ডিফেন্স সার্ভিস অব বাংলাদেশ’ পুনঃস্থাপন করার সুপারিশ করা হবে। ২০০৯ সালে আরপিওর সংশোধনীতে তা বাদ দেয়া হয়। নির্বাচনের সাত দিন আগ থেকে সেনা মোতায়েন এবং তাদের পাশাপাশি নির্বাচন কমিশন কর্মকর্তাদের ম্যাজিস্ট্রেরিয়াল (বিচারিক) ক্ষমতা দেয়ার সুপারিশ করা হবে।

আগামী জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের বিরোধিতা করবে দলটি। ভোটার তালিকা হালনাগাদের পাশাপাশি প্রবাসীদের অন্তর্ভুক্ত করা এবং ভোট কেন্দ্রে ছবিসহ ভোটার তালিকা সরবরাহের প্রস্তাব রয়েছে বিএনপির প্রাথমিক সুপারিশে। দলীয় কর্মকর্তাদের প্রত্যাহার করে অবিলম্বে সব জায়গায় নিরপেক্ষ কর্মকর্তাদের দায়িত্ব দেয়ার দাবি জানানো হবে।

এছাড়া নির্বাচনের সময় স্বরাষ্ট্র, অর্থ, তথ্য, জনপ্রশাসন, স্থানীয় সরকার, শিক্ষা, পররাষ্ট্র এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় যাতে ইসির চাহিদা অনুযায়ী কার্যকর ব্যবস্থা নেয়- তা নিশ্চিতের আহ্বান জানানো হবে। এছাড়া সব দলের অংশগ্রহণে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের নিশ্চয়তা চাওয়ার ব্যাপারে গুরুত্ব দেয়া হবে। এজন্য নির্বাচন কমিশন কতটা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারবে তার নিশ্চয়তা চাওয়া হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান যুগান্তরকে বলেন, ইসির সঙ্গে সংলাপের বিষয়বস্তু এখনও চূড়ান্ত হয়নি। বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা চলছে। তবে একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি কিভাবে সম্ভব সেদিকেই গুরুত্ব দেয়া হবে।

তিনি বলেন, ইসির সঙ্গে যেসব দল আলোচনা করছে তাদের বেশির ভাগই সংসদ ভেঙে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি জানিয়েছে। অনেকে সেনাবাহিনী নিয়োগেরও দাবি জানিয়েছেন। আমরা বরাবর এসব দাবি জানিয়ে আসছি। সংলাপেও তা তুলে ধরা হবে। এক প্রশ্নের জবাবে নজরুল ইসলাম খান বলেন, বর্তমান পরিস্থিতি তো প্রতি মুহূর্তে বদলাচ্ছে। সংলাপের সময় যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে সেই পরিস্থিতি আলোচনায় স্থান পেতে পারে।

সূত্র জানায়, শনিবার গুলশান কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, ড. আবদুল মঈন খান, সিনিয়র আইনজীবী জয়নুল আবেদীন, এজে মোহাম্মদ আলী, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে প্রধান বিচারপতির ছুটি পরবর্তী পরিস্থিতি ছাড়াও ইসির সঙ্গে সংলাপের এজেন্ডা নিয়ে আলোচনা হয়।

বৈঠকে এক নেতা মত দেন, প্রধান বিচারপতির ছুটিসহ বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিও সংলাপে আলোচনায় আসা উচিত। এভাবে স্বাধীন ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিতর্কিত করা হলে দেশের সার্বিক পরিস্থিতি আরও জটিল হতে পারে। তাই স্বাধীন প্রতিষ্ঠান হিসেবে ইসিকে এ ব্যাপারে কার্যকর ভূমিকা পালন করার অনুরোধ জানানো যেতে পারে। বৈঠকে আরও কয়েক নেতা এ ব্যাপারে একই মত দেন।

বিএনপির নেতারা মনে করেন, সব দলের বিশেষ করে বিএনপির আস্থা অর্জন ইসির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। এজন্য ইসিকে শুধু আশ্বাস নয়, বাস্তব কিছু করে দেখাতে হবে। তফসিল ঘোষণার আগে ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ তৈরিতে ইসিকে কার্যকর উদ্যোগ নেয়ার আহ্বান জানানো হবে। এক্ষেত্রে বিদ্যমান আইনে ইসির কোনো বাধ্যবাধকতা থাকলে প্রয়োজনে আইন সংস্কারের পরামর্শ দেয়া হতে পারে।

ভোটের সাত দিন আগেই সেনা চাইবে
আজ ইসির সঙ্গে সংলাপ

শেখ মামুনূর রশীদ

সংসদ নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণ এবং সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে সেনাবাহিনী মোতায়েন চায় হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি। নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের পর থেকেই সারা দেশে সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েন করার প্রস্তাব দেবে। এছাড়া দলটির পক্ষ থেকে তফসিল ঘোষণার পর সংসদ ভেঙে দেয়ার প্রস্তাবও দেয়া হবে। আজ সোমবার ইসির সঙ্গে জাতীয় পার্টির সংলাপ অনুষ্ঠিত হবে ।

সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের স্বার্থে রাজনৈতিক দলগুলোর মত নিতে নির্বাচন কমিশন ধারাবাহিক সংলাপের আয়োজন করেছে। আজ জাতীয় পার্টির সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের পূর্বনির্ধারিত সংলাপ অনুষ্ঠিত হবে। রাজধানী আগারগাঁও নির্বাচন ভবনের সম্মেলন কক্ষে এ বেলা ১১টায় এ সংলাপ শুরু হবে। প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিতব্য সংলাপে জাতীয় পার্টির পক্ষে নেতৃত্ব দেবেন দলটির মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার এমপি।

জানা গেছে, নির্বাচন কমিশনের এই সংলাপে জাতীয় পার্টি মোট ৮টি প্রস্তাব দেবে। এর মধ্যে অন্যতম নির্বাচনের সময় সেনা মোতায়েন। সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের পর থেকেই সারা দেশে সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েনের প্রস্তাব দেবে দলটি। তবে তারা সংবিধান অনুযায়ী এই নির্বাচন কমিশনের অধীনে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন দাবি করবে। নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পর সংসদ ভেঙে দেয়ার প্রস্তাবও দেবে জাতীয় পার্টি।

নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের প্রস্তাবের কথা স্বীকার করে দলটির মহাসচিব এবিএম রহুল আমিন হাওলাদার রোববার যুগান্তরকে বলেন, ‘আমরা চাই একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন। এই নির্বাচনে যাতে সবাই সমান সুযোগ পায়।’ তিনি আরও বলেন, আমরা আজ ইসির সঙ্গে সংলাপে বসছি। নির্বাচনের সময় সেনা মোতায়েন চাইব। কমপক্ষে নির্বাচনের সাতদিন আগে সেনা মোতায়েন করে ভোটের পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে।’

দলের সূত্রে জানা গেছে, সেনা মোতায়েন ছাড়াও দলটির সম্ভাব্য প্রস্তাবের মধ্যে রয়েছে- নির্বাচন কমিশনকে সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দিতে হবে। অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচন কমিশনের কাজে কোনো হস্তক্ষেপ করতে পারবে না। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর সংসদ ভেঙে দিতে হবে। আনুপাতিক হারে সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী সব দলের সদস্যদের নিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করতে হবে। এছাড়াও দলীয় প্রধানের সুপারিশের ভিত্তিতে অন্তর্বর্তী সরকারের মন্ত্রী নিয়োগ করতে হবে। সিডিউল ঘোষণার পর জেলা উপজেলা পর্যায়ে বিতর্কিত কর্মকর্তাদের মাঠে রাখা যাবে না। প্রার্থীর নির্বাচনী ব্যয় ৮ লাখ করতে হবে।

জাতীয় পার্টি সংলাপে নির্বাচনের বর্তমান পদ্ধতির সংস্কার চাইবে। এর আগে বর্তমান নির্বাচন-পদ্ধতির পরিবর্তন করে ভোটের আনুপাতিক হারে সংসদীয় আসন বণ্টনের প্রস্তাব দিয়েছিলেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। প্রস্তাব অনুযায়ী, ভোটাররা সরাসরি প্রার্থীকে নয়, দলকে ভোট দেবে। সব দল প্রাপ্ত ভোটের ভিত্তিতে আনুপাতিক হারে সংসদীয় আসনের সদস্য পাবে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ