টাঙ্গাইলের ১২টি উপজেলার মধ্যে বর্তমানে সাতটিতেই নির্বাহী কর্মকর্তা
(ইউএনও) হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন নারীরা। শুধু পুরুষ কর্মকর্তারাই দক্ষতা,
যোগ্যতার মাপকাঠিতে সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারে- এ ধারণা ভুল প্রমাণিত
করে বিশাল এই কর্মযজ্ঞে নারীরা কিন্তু আর পিছিয়ে নেই। প্রশাসনের শীর্ষপদে
থাকা এই নারী কর্মকর্তারা সফলতা আর নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব
পালন করে দেশের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছেন
মামুন হায়দার
কোথায় নেই নারীরা? ঘর থেকে শুরু করে হেন কোনো কর্মস্থল নেই যেখানে নারীর পদচারণা নেই। দিনদিন এ সম্ভাবনা বেড়েই যাচ্ছে। নিজেদের কর্মস্থলে মেধা ও যোগ্যতার প্রমাণ দিয়ে নিজেদের দৃষ্টান্ত হিসেবেও স্থাপন করেছেন তারা। এমন একটি দৃষ্টান্ত দেখা যায় টাঙ্গাইল জেলায়।
এ জেলার ১২টি উপজেলার মধ্যে বর্তমানে সাতটিতেই নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন নারীরা। শুধু পুরুষ কর্মকর্তারাই দক্ষতা, যোগ্যতার মাপকাঠিতে সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারে— এ ধারণা ভুল প্রমাণিত করে বিশাল এই কর্মযজ্ঞে নারীরা কিন্তু আর পিছিয়ে নেই। প্রশাসনের শীর্ষপদে থাকা এই নারী কর্মকর্তারা সফলতা আর নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে দেশের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছেন।
টাঙ্গাইল জেলার বিভিন্ন উপজেলার নারী ইউএনওরা হলেন— সখীপুর উপজেলার ইউএনও মৌসুমী সরকার রাখী, তিনি প্রশাসনের ২৮তম বিসিএসে উত্তীর্ণ। টাঙ্গাইল সদরের ইউএনও জিনাত জাহান, তিনি প্রশাসনের ২৭তম বিসিএস ক্যাডার। নাগরপুরের ইউএনও আসমা শাহীন প্রশাসনের ২৭তম বিসিএসে উত্তীর্ণ। গোপালপুরের ইউএনও দিলরুবা শারমিন ২৮তম বিসিএস ক্যাডার। মির্জাপুরের ইউএনও ইসরাত সাদমীন, তিনি প্রশাসনের ২৮তম বিসিএসে উত্তীর্ণ। ধনবাড়ীর ইউএনও আরিফা সিদ্দিকা ৩০তম এবং বাসাইলের ইউএনও শামছুন নাহার স্বপ্না ৩০তম বিসিএস ক্যাডার।
নির্বাহী কর্মকর্তার প্রধান কাজ হলো- উপজেলায় অবস্থিত সকল বিভাগের কাজকর্মের সমন্বয় সাধন করা। মাদকমুক্ত, যৌতুক-বাল্য বিবাহ রোধ ও জঙ্গিমুক্ত সামাজিক ব্যবস্থার গুরুত্বপূর্ণ কাজের ভার তাদের ওপর ন্যস্ত। এছাড়াও একজন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা একটি উপজেলার সকল দায়িত্ব তদারকি করে থাকেন। পাশাপাশি জেলার সঙ্গে সমন্বয় করে তিনি অনেক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। সাধারণ প্রশাসন, রাজস্ব প্রশাসন, ফৌজদারি প্রশাসন ও উন্নয়ন প্রশাসন বিষয়ে দায়িত্ব পালনের ভার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের। টাঙ্গাইলের এই সাত উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তারা নিজেদের ওপর অর্পিত দায়িত্বসমূহ যথাযথভাবে পালনের চেষ্টা করে যাচ্ছেন।
এছাড়াও অন্যান্য দায়িত্বের মধ্যে আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ ও উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড তদারকি করা, সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ তদারকি ও বাস্তবায়ন, বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় পূর্ব প্রস্তুতি ও পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন কার্যক্রমও দেখভাল করেন তারা। ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্প বাস্তবায়ন, উপজাতিদের ঋণ প্রদান ও তাদের স্বাবলম্বী করা, মাধ্যমিক ও প্রাথমিক স্তরের বিদ্যালয় পরিদর্শন ও শিক্ষার মান উন্নয়ন করা, স্থানীয় জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধ নিষ্পত্তি করা, সরকারের নতুন কর্মসূচি সম্পর্কে জনগণকে অবহিত করা, সামাজিক সমস্যা দূরীকরণে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করা এবং যৌতুক-বাল্য বিবাহ রোধসহ বিভিন্ন কর্মকাণ্ড পুরুষ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের মতোই দক্ষভাবে পালন করছেন এই সাত নারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।
উপজেলায় কাজ করার অভিজ্ঞতার বিষয়ে জানতে চাইলে জেলার সখীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মৌসুমী সরকার রাখী বলেন, ‘ইউএনও হিসেবে কাজের ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা হয় না। প্রশাসনে তৃণমূল পর্যায়ে এখন নারীদের কর্মক্ষেত্র ব্যাপক বিস্তার লাভ করেছে। একজন ইউএনও হিসেবে প্রায় প্রতিদিনই বিভিন্ন প্রোগ্রাম কভার করতে হয় জানিয়ে তিনি বলেন, সেক্ষেত্রে আমরা অনেক লজিস্টিক সাপোর্ট পেয়ে থাকি। এতে করে আমাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব সঠিকভাবে সম্পন্ন করা যায়।’
এ বিষয়ে টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক খান মোহাম্মদ নূরুল আমিন বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকার নারীবান্ধব প্রশাসন পরিচালনায় বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে। টাঙ্গাইলেও নারীবান্ধব প্রশাসন পরিচালনায় বিশেষ নজর দেওয়া হচ্ছে। জেলায় কর্মরত সাত নারী নির্বাহী কর্মকর্তা নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন। জেলা প্রশাসন তাদের সার্বিক সহযোগিতা করছে। এছাড়াও মাঠপর্যায়ে নারী ইউএনওরা অনেক ভালো কাজ করছেন। তাদের নারী হিসেবে নয়, একজন কর্মকর্তা হিসেবে দেখা হয়।’
আগে নারীর দক্ষতা প্রকাশ পেত ঘরোয়া কাজের নৈপুণ্যে। সে সময়ের ইতি হয়েছে। এখন তাদের পদাঙ্ক রচিত হয়েছে এভারেস্টের চূড়ায়ও। ঘরের পাশাপাশি তাদের দক্ষতা প্রকাশ পাচ্ছে— মাঠে, কর্মক্ষেত্রে।