বাজারে প্রতিদিনই বাড়ছে নিত্যপণ্যের দাম। সেই সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাড়ছে সবজির দামও। নিত্যপণ্যের দাম বাড়লেও বাড়ছে না আয়। প্রতিমাসেই আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি হচ্ছে। ফলে দিশেহারা হয়ে পড়ছেন সীমিত আয়ের মানুষ।
নিত্যপণ্যের দাম বেশী হওয়ায় মধ্যবিত্ত আর সীমিত আয়ের মানুষ পণ্য আগের তুলনায় কম কিনছেন। তারা বলছেন, দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে, আর পারছি না। আগের চেয়ে কম পণ্য কিনছি, হিসেব করে সংসার চালাচ্ছি। তারপরও ঋণ হতে হচ্ছে। এভাবে আর কতদিন।
অনেকে আগের চেয়ে কম খাচ্ছেন। খাবার টেবিলে মেনু কমিয়ে দিয়েছেন। তারপরেও প্রতিমাসে হিমসিম খেতে হচ্ছে। সংসার চালাতে পারছেন না অনেকে। ন্যুনতম পণ্য কিনতে চলে যাচ্ছে আয়ের অধিকাংশ টাকা। বাসাভাড়া, বাচ্চাদের পড়াশোনার খরচ যোগানো কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে।
বেলায়েত হোসেন। গ্রামের বাড়ি মাদারীপুর। রাজধানীর মতিঝিলে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। তিনি বলেন, আগে পরিবার নিয়ে মালিবাগে দুই রুমের একটি বাসায় ভাড়া থাকতাম। যে বেতন পেতাম তা দিয়ে ৫ জনের সংসার মোটামুটি চলে যেত। কিন্তু এখন আর পারছি না। তাই পরিবার গ্রামের বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছি। এখন একটা মেসে উঠেছি। কষ্ট হচ্ছে। ছেলেটার পড়ালেখা নিয়ে টেনশানে আছি। ওর ভবিষ্যৎ নষ্ট হচ্ছে। কি আর করার? আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি হচ্ছে। প্রতিমাসে ঋণ হতে হচ্ছে। তাই এ সিদ্ধান্ত।
তিনি আরও বলেন, ঢাকায় যে হারে বাসা ভাড়া বাড়ছে, তাতে কম বেতনে যারা চাকরি করেন তাদের থাকাই দায়। বেতনের অধিকাংশ বাড়িভাড়া দিতেই শেষ। এছাড়া নিত্যপণ্যের যে দাম, সেই হারে বেতনতো আর বাড়ে না।
তিনি আক্ষেপ করে বলেন, চাকরিই যেন গলার ফাঁদ, চাকরি করলেও মরি, না করলেও মরি। মাঝে মাঝে মনে হয়, চাকরি না করে ছোট কোনো ব্যবসা করলে মনে হয় ভাল হতো। আসলে, বিপদে আছে আমাদের মত শিক্ষিত মানুষ। যাদের অসৎ পথে আয়ের সুযোগ নেই। আবার সৎভাবে ভাল বেতন পাচ্ছি না। আমরা না পারি হাত পাততে, না পারি উপরে উঠতে। যত বিপদ আমাদের। বর্তমান বাজারে সম্মান নিয়ে বাঁচাই দায় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রিপন কাজী, টাঙ্গাইলের মধুপুরে বাড়ি। রাজাধানীর হাতিরপুলে একটি কোম্পানিতে চাকরি করেন। তিনি বলেন, ২ বছর যাবৎ বেতন বাড়ে না। বস বলেন কোম্পানির অবস্থা ভাল না। বেতন বাড়ানো সম্ভব না। বাজারে নিত্যপণ্যের দামের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারছি না। আয়ের চেয়ে ব্যয় হচ্ছে। তাই ভোগ কমিয়ে দিয়েছি। আগের চেয়ে কম বাজার করছি। বাড়তি খরচ করছি না। তারপরও কষ্ট হচ্ছে।
এদিকে রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে শীতের সবজি উঠা শুরু হয়েছে। তবুও কমছে না সবজির দাম। সব ধরণের সবজির দাম চড়া। ৮০ টাকার নিচে মিলছে না সবজি। কোনো কোনো সবজির দাম ১০০ টাকার উপরে।
বিক্রেতারা বলছেন সবজির দাম আগামী মাসেও কমার সম্ভাবনা নেই। শুক্রবার (২০ অক্টোবর) রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, অধিকাংশ সবজির দাম ৮০ থেকে ১২০ টাকা কেজি। ঢেঁড়স, করলা, ধুন্দল, চিচিঙ্গা বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা কেজিতে। আর পটল কেজি ৬০ টাকা, লাল আলু ৫০ টাকা, লম্বা বেগুন ৬০ টাকা, পেঁপেও ৬০ টাকা।
এর বাইরে দেশি টমেটো কেজি বিক্রি হচ্ছে ১০০-১২০ টাকায়। শীতের সবজি শিমের দাম ১৮০ টাকা, বরবটি ১২০ টাকা, উচ্ছে ১২০ টাকা, কাঁচামরিচের দাম দোকানভেদে ২০০-২২০ টাকা, গোল বেগুন ১২০ টাকা, কচুমুখী ১২০ টাকা,। আর পেঁয়াজের দাম ১০০ টাকা, রসুন ২০০ থেকে ২২০ টাকা।
বাজারে চাল, ডাল, তেল, ব্রয়লার মুরগি, চিনি, লবণসহ সব পণ্যই বিক্রি হচ্ছে বাড়তি দামে। সেই সঙ্গে মাছ-মাংস এবং পেঁয়াজ, আলুসহ সব ধরনের সবজিরও বেড়েছে দাম। সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে ১০ থেকে ১৫ টাকা পর্যন্ত দাম বেড়ে বেশির ভাগ সবজি ৮০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, সম্প্রতি সারাদেশে টানা বৃষ্টিতে সবজিখেত ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ঢাকার বাজারগুলোতে সরবরাহ কমে গেছে। এতে সবজির দাম বেড়ে গেছে।
পাইকারি বিক্রেতারা জানান, সম্প্রতি ভারী বর্ষণে ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, বগুড়া, যশোর ও কুষ্টিয়ার আশপাশের সবজিখেত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব স্থান থেকে রাজধানীতে বেশির ভাগ সবজি আসে।
এদিকে বাজারে মসুর ডাল বিক্রি হচ্ছে ১২৫ টাকা করে। যা এক সপ্তাহ আগে ১২০ টাকা ছিল। নতুন দেশি রসুন বিক্রি হচ্ছে ২৩০ টাকায়। যা এক সপ্তাহ আগে ২২০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। আমদানি করা আদা মানভেদে বিক্রি হচ্ছে ২২০ থেকে ৩৩০ টাকা। যা আগে ২০০ থেকে ৩২০ টাকা ছিল।
ব্রয়লার মুরগি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৮০ থেকে ১৯০ টাকায়। পাশাপাশি প্রতি কেজি সোনালি জাতের মুরগির বিক্রি হচ্ছে ৩২০ থেকে ৩৩০ টাকা দরে।
দেশি মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫৫০ টাকা। আর প্রতি কেজি গরুর মাংস ৮০০ ও খাসির মাংস ১১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া পাঙাশ, চাষের কই ও তেলাপিয়া মাছের কেজি ২২০ থেকে ২৮০ টাকা। প্রতি কেজি রুই, কাতলা, কালিবাউশ ও মৃগেল বিক্রি হচ্ছে আকারভেদে ৩৮০ থেকে ৪৫০ টাকায়।