• মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:৩৪ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম:

বছরে ৬০ বিলিয়ন ডলার সাশ্রয়ের সুযোগ

নিউজ ডেস্ক
আপডেটঃ : মঙ্গলবার, ২৪ অক্টোবর, ২০২৩

প্রতি বছর ৬০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয়ের সুযোগ রয়েছে বাংলাদেশের সামনে; দেশীয় পতাকাবাহী সমুদ্রগামী জাহাজ ও কনটেইনারে পণ্য পরিবহন করে এই পরিমাণ বিদেশি অর্থ সাশ্রয় করা সম্ভব বলে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) থেকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে। এ লক্ষ্যে সমুদ্রগামী পণ্য পরিবহনে দেশের রাষ্ট্রীয় ও বেসরকারি খাতের শিপিং ও কনটেইনার কোম্পানিগুলোর সক্ষমতা বাড়ানোর সুপারিশ করা হয়েছে ওই প্রতিবেদনে।

সূত্র জানায়, সেবা খাতে বিনিয়োগ বাড়ানোর বিষয়ে গুরুত্ব দিচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। এ লক্ষ্যে সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ ইআরডির সঙ্গে একটি যৌথ সেমিনারের আয়োজন করে। পরে ওই সেমিনারের সারসংক্ষেপ প্রতিবেদন আকারে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠায় ইআরডি।

সম্ভাবনাময় শিপিং ও কনটেইনার শিল্প নিয়ে ইআরডির প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, শিপিং কনটেইনার ম্যানুফ্যাকচারিংয়ের বড় হাব হয়ে উঠতে পারে দেশের দক্ষিণাঞ্চল; বিশেষ করে পায়রা বন্দরে কনটেইনার ডিপো স্থাপন করা যেতে পারে। চট্টগ্রাম বন্দরে আমদানি-রপ্তানির কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ে অফডক সুবিধা বাড়াতে বেসরকারি অপারেটরগুলোকে আরও বেশি লাইসেন্স দেওয়া উচিত বলেও প্রতিবেদনটির পর্যবেক্ষণে তুলে ধরা হয়েছে। আর এসব সুবিধার পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন (বিএসসি) এবং বেসরকারি খাতের শিপিং কোম্পানি ও কনটেইনার শিল্পকে সহায়তা দিলে বছরে ৬০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় করা সম্ভব হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
নৌ পরিবহন অধিদফতরের মহাপরিচালক কমডোর মোহাম্মদ মাকসুদ আলম বলেন, ৬০ বিলিয়ন ডলার সাশ্রয়ের হিসাবটি ঠিক কীভাবে এসেছে- এটি আমার জানা নেই। শুধু পণ্য পরিবহনে জাহাজ ও কনটেইনার ফ্রেইট থেকে এত বেশি মুদ্রা সাশ্রয় হবে না। তবে জাহাজ শিল্পের উন্নয়ন হলে এতে বিপুল পরিমাণ আর্থিক অন্তর্ভুক্তি ঘটবে। প্রতিটি জাহাজে কর্মসংস্থান হবে। এ ছাড়া রিপেয়ারিং, ড্রাইডকিং বিভিন্ন কার্যক্রম রয়েছে যেখানে কর্মসংস্থান ছাড়াও আর্থিক অন্তর্ভুক্তির সুযোগ রয়েছে। এ লক্ষ্যে সরকার বিভিন্ন নীতি সহায়তা অব্যাহত রেখেছে।

কর্মকর্তারা জানান, বর্তমানে বড় জাহাজ আমদানিতে শুল্ক ছাড় রয়েছে। বন্দরের জেটিতে ভেড়ানোর ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাচ্ছে দেশীয় জাহাজ। এ ছাড়া দেশীয় পতাকাবাহী জাহাজে ৫০ শতাংশ পণ্য পরিবহনের বাধ্যবাধকতা রেখে আইন হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, সমুদ্রগামী জাহাজ শিল্পে সরকারের বিভিন্ন নীতি সহায়তা অব্যাহত থাকলেও এই খাতে খুব বেশি বিনিয়োগ নেই।

জাহাজের নিবন্ধন প্রদানকারী সংস্থা নৌবাণিজ্য কার্যালয়ের প্রিন্সিপাল অফিসার এবং রেজিস্ট্রার অব বাংলাদেশ শিপস ক্যাপ্টেন সাব্বির মাহমুদ বলেন, সারা বছর দেশে যে পরিমাণ আমদানি-রপ্তানি হয়ে থাকে- এগুলো পরিবহন করার জন্য ন্যূনতম ৫০০ জাহাজের প্রয়োজন। সে তুলনায় দেশীয় জাহাজের সংখ্যা কম। বর্তমানে বাংলাদেশের পতাকাবাহী ৯৭টি জাহাজ রয়েছে। এর মধ্যে ৮টি কনটেইনার জাহাজ, ৮টি ট্যাংকার এবং বাকিগুলো বাল্ক কেরিয়ার। ফলে এই খাতে দেশীয় জাহাজের পরিমাণ বাড়িয়ে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয়ের পাশাপাশি বিদেশি কার্গো পরিবহন করে বৈদেশিক মুদ্রা আয়েরও সুযোগ রয়েছে বাংলাদেশের সামনে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, স্বাধীনতার পর সমুদ্রগামী পণ্য পরিবহন কার্যক্রম রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বিএসসির মাধ্যমে পরিচালিত হলেও বর্তমানে এ শিল্পে বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তারা এগিয়ে আসছে। বাংলাদেশের পতাকাবাহী জাহাজের মধ্যে সরকারি প্রতিষ্ঠান বিএসসির জাহাজের সংখ্যা মাত্র ৭টি। বাকি ৯০টি জাহাজ বেসরকারি খাতের। আশার কথা হচ্ছে, সাম্প্রতিক কালে বসুন্ধরা গ্রুপ, মেঘনা, কেএসআরএম এর মতো বড় শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো এই শিল্পে এগিয়ে আসছে। এসব প্রতিষ্ঠান নিজস্ব পণ্য পরিবহন করে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় করছে। কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি বিদেশি কার্গো পরিবহন করে বৈদেশিক মুদ্রাও আয় করছে।

সমুদ্রগামী জাহাজ পরিচালনার রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের এমডি কমডোর মো. জিয়াউল হক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, বর্তমানে বিএসসির ৭টি জাহাজ আছে। আরও ৪টি জাহাজ আমদানির জন্য চুক্তি হয়েছে। এ ছাড়া আরও ১৫টি জাহাজ বহরে যুক্ত করার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। সরকারের নীতি সহায়তা পেলে এসব জাহাজ দ্রুত বিএসসির বহরে যুক্ত করে সমুদ্রপথে পণ্য পরিবহনের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় করতে পারবেন তারা।

বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সৈয়দ মোহাম্মদ আরিফ বলেন, প্রতিবছর দেশের সমুদ্র বন্দরগুলোতে প্রায় ৪ থেকে ৫ হাজার বিদেশি জাহাজ ভিড়ে। দেশীয় পতাকাবাহী জাহাজে কনটেইনার পরিবহন করতে পারলে আমাদের ডলারে পেমেন্ট করতে হতো না। এতে করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় করা সম্ভব হতো। তবে আন্তর্জাতিক সমুদ্রসীমায় পণ্য পরিবহনের জন্য খুব বেশি জাহাজ দেশে নেই। ফলে এই খাতে সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য সংস্কারের প্রয়োজন রয়েছে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ