‘জাতিগত ভাবে বিশ্বের সেরা ফুটবলারটি আর্জেন্টাইন। লিওনেল মেসিকে ছাড়া ফুটবল, বিশ্বকাপ কোনোটাই ভাবা যায় না।’—ম্যাচ শেষে কথাটি বললেন কোচ হোর্হে সাম্পাওলি।
অথচ, রাতের শুরুটা এর চেয়ে বাজে ভাবে হওয়া সম্ভব ছিল না!
বাঁচামরার ম্যাচ, অথচ ৩৮ সেকেন্ড যেতে না যেতেই প্রথম গোল হজম করে বসে আর্জেন্টিনা। ইকুয়েডরের ম্যাচে হারের শঙ্কা নিয়ে তখন বিশ্বকাপ না খেলার দুয়ারে দাঁড়িয়ে ছিল দু’বারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা।
এমন পরিস্থিতিতে ক্লাব ফুটবল কিংবা আন্তর্জাতিক ফুটবল—সব জায়গাতেই ত্রাণকর্তা হিসেবে যার আবির্ভাব হয় সেই লিওনেল মেসির ওপর মঙ্গলবার রাতেও ভর করল ভিনজাগতিক ফুটবল ক্ষমতা। ফলাফল, ৩-১ ব্যবধানে জিতে গেল আর্জেন্টিনা। তিনটি গোলই করলেন মেসি। আর সবচেয়ে বড় ব্যাপার, ১৮ ম্যাচে ২৮ পয়েন্ট নিয়ে আগামী বছর অনুষ্ঠিতব্য ফুটবল বিশ্বকাপে জায়গা নিশ্চিত করে ফেলল আর্জেন্টিনা।
সব শঙ্কা দূর হলো, সব গুঞ্জন থেমে গেল। লিওনেল মেসিকে ছাড়া বিশ্বকাপ হচ্ছে না। আর্জেন্টিনাকে নিয়ে রাশিয়ার বিশ্বকাপে গেলেন সময়ের সেরা ফুটবলার।
ইকুয়েডরের কুইটো শহরটা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৯৩৫০ ফিট উঁচুতে। আর এখানে ২০০১ সালের পর থেকে কোনো জয় নেই আর্জেন্টিনার। শঙ্কার জন্য এই তথ্যটাই ছিল যথেষ্ট। শেষ অবধি মেসি ম্যাজিকটা হলো বলে রক্ষা। ম্যাচের যথাক্রমে ১২, ২০ ও ৬২ মিনিটে তিনটি অবিশ্বাস্য গোল করলেন এই সুপারস্টার। বিশ্ব ফুটবলের বর্তমানে অন্যতম সেরা ফুটবলারটি নিজের জোরেই দলকে টেনে তুললেন মূলপর্বে। বার্সেলোনার বরাবরের নায়ক মেসি নাকি জাতীয় দলের হয়ে ব্যর্থ হন—এমন সমালোচনায় টেনে ধরলেন লাগাম।
ম্যাচ শেষে তাই কোচের অতি উচ্ছ্বাস মোটেই আদিখ্যেতা নয়। সাম্পাওলি বলেন, ‘মেসি নিঃসন্দেহে বিশ্ব ফুটবলের ইতিহাসের সেরা ফুটবলার। ওর কাছাকাছি থাকতে পারাটা আমার জন্যও খুবই রোমাঞ্চকর।’
কোচ মানছেন, মেসির জন্যই জয়টা খুব জরুরি ছিল আর্জেন্টিনার। তিনি বলেন, ‘মেসিকে ছাড়া বিশ্বকাপ হতে দেওয়া যাবে না। এটা আমাদের মাথায় ছিল। সেজন্য অনেক চাপও ছিল। তবে, বাছাইপর্বের বাধা টপকে আমরা চাপটা ঝেড়ে ফেলেছিলাম। আমরা আধিপত্য রেখে খেলেছি। প্রতিপক্ষ আমাদের আগেই গোল করেছিল। তারপরও আমরা পথ হারাইনি। আমরা পুরোপুরি মেসির ওপর নির্ভরশীল ছিলাম না। মেসি নিজেই ওর যোগ্যতা প্রমাণ করেছে।’
২০০২ বিশ্বকাপের আগেও প্রায় একইরকম সমীকরণের সামনে ছিল ব্রাজিল। সমীকরণটা ছিল শেষ ম্যাচে যদি ব্রাজিল বড় ব্যবধানে হারে আর কলম্বিয়া বড় ব্যবধানে জিতে তাহলে ব্রাজিলকে টপকে বিশ্বকাপে চলে যাবে কলম্বিয়া। কলম্বিয়া বড় ব্যবধানে ঠিকই জিতেছিল। তবে, ব্রাজিলও ভেনেজুয়েলাকে ৩-০ ব্যবধানে উড়িয়ে দেয়। চলে যায় বিশ্বকাপের মূলপর্বে।
বাকি ইতিহাসটা কমবেশি সবার জানা। সেবার কোরিয়া-জাপান থেকে বিশ্বকাপ জিতে ফিরেছিলেন রোনালদো, রিভালদো, রোনালদিনহোরা। এবারো কী একইরকম কিছু একটা করে বসবে আর্জেন্টিনা? -বলা যায় এটাই তো মেসির শেষ সুযোগ। সাম্পাওলি তো বলেই রাখলেন, ‘মেসি বিশ্বকাপের কাছে ঋণী নয়, বরং বিশ্বকাপই মেসির কাছে ঋণী!’