শুরু করি একটা ঘটনা দিয়ে—কক্সবাজারে সুগন্ধা বিচে অনেকক্ষণ গোসল করে সমুদ্রের লবণাক্ত পানি ও প্রখর রৌদ্রে পুরো শরীরটাই কালো হয়ে গেছে। এখন সাদা হতে হলে গোসলের বিকল্প নেই। চলে গেলাম শৈবালে। সেখানে নামমাত্র একটা সুইমিংপুল খুঁজে পেলাম। দু’শ’ টাকা টিকেট কেটে সুইমিংপুলে নামলাম। অনেকক্ষণ সুইমিংপুলে গোসল করে আয়নায় চেহারা দেখে অবাক, যাও একটু সাদা হওয়ার জন্য এসেছি, তার দ্বিগুণ কালো হয়ে গেলাম। সুইমিংপুল থেকে উঠে ভালোভাবে ফ্রেশ হওয়ার জন্য ওয়াশরুমে গেলাম। কোনোটার শাওয়ার ঠিক নেই। কোনোটার দরজা লক করার ব্যবস্থা নেই। বেহাল অবস্থা। যাক কোনোমতে গোসল সারলাম। সাদা আর হলাম না। হঠাত্ বাইরে দেখি খুব গালি-গালাজ চলছে। কৌতূহলী হয়ে বের হলাম। এক কিশোর তার বাবার বয়সী একজন রিকশাওয়ালাকে দশ টাকার জন্য আচ্ছামতো গালি-গালাজ করছে। কিশোরের মা তার সন্তানের বেয়াদবির জন্য সন্তানকে শাসন না করে রিকশাওয়ালাকে ধমকাচ্ছেন। পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হওয়ার পর-
আমি কিশোরকে কাছে ডেকে বললাম- ভাইয়া, রিকশাওয়ালাকে তুমি যেসব গালি দিলে আমি যদি এখন তোমার মাকে সেসব গালি দেই, তুমি কি করবে? বলল- আমার যতটুকু শক্তি আছে তা নিয়েই আপনার উপর চড়াও হবো। বললাম- নিজের মায়ের বেলায় ঠিক, রিকশাওয়ালার মায়ের কোনো মূল্য নেই? তার মা চিত্কার করে বললেন- আপনি আমার ছেলের সঙ্গে গায়ে পরে ঝগড়া করছেন! আমি বললাম- আন্টি, আপনার ছেলেকে যে কথাগুলো আপনার বলা দরকার ছিল, আপনি চুপ থাকার কারণে আমি সে কথাগুলো ছোটভাই হিসেবে আপনার ছেলেকে বললাম। ঝগড়া তো করিনি! তিনি বললেন- হইছে, আর শিক্ষা দিতে হবে না। বহুত লেখাপড়া জীবনে শিখছি। যখন সুইমিংপুল থেকে বেরিয়ে যাই, তখন দায়িত্বশীলদের অনুরোধ জানিয়ে বলছিলাম—এটা পর্যটন এলাকা। দেশ-বিদেশের মানুষ এখানে আসে। আপনাদের সুইমিংপুলেও সুইমিং করতে আসবে, গোসল সারবে। তো আপনারা এরকম বেহাল অবস্থা করে রেখেছেন কেন, এসব কি ঠিক করা যায় না? অন্য দেশের মানুষ দেখলে তো হাসবে। দেশের বদনাম করবে। ঠিক তখনই একজন বয়স্ক লোক বললেন- আপনার পছন্দ না হলে এরপর থেকে আপনি আর আসবেন না। কে হাসলো কে কাঁদল এসব দেখার দরকার কি?
উপরে মায়ের বয়সী একজন মহিলার সন্তানের অপরাধের বিপক্ষে কথা বলার কারণে ঝাড়ি খেলাম। তারপর বাবার বয়সী একজন লোকের সামনে সুন্দর ব্যবস্থাপনার অনুরোধ জানিয়ে অনেক কথা শুনলাম।
মনটাই খারাপ হয়ে গেলো। অনেকক্ষণ ভাবলাম- যা বলেছি, তা কি আমার দোষ না গুণ? বহু চিন্তা করে দেখলাম- যা করেছি, তা সঠিক কাজই করেছি। তা আমার গুণ। এতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু আমি বয়সে ছোট বলে আমার গুণের মূল্যায়ন পেলাম না। বরং উল্টো কিছু খারাপ কথা শুনে আসলাম!
এ প্রশ্ন শুধু মনে প্রশ্নই থেকে যায়। উত্তর আর পাই না। আজ তরুণরা জঙ্গি হওয়ার পেছনে যতগুলো কারণ আছে, তার অন্যতম হলো-বড়দের থেকে ভালো কাজের কোনো উত্সাহ না পাওয়া। অনবরত নেগেটিভ কথা শুনতে শুনতে আজ অনেক তরুণের মন-মস্তিষ্কই নেগেটিভ হয়ে যাচ্ছে। অপরাধ করার পর তরুণদের সবাই ঘৃণা করলেও, কি কারণে এসব তরুণ অপরাধে জড়াচ্ছে তা খোঁজার চেষ্টা করা হলেও, যাদের কারণে তরুণরা আজ বিগড়ে যাচ্ছে, তাদের নিয়ে কোনো আলোচনা হয় না। জাতির সামনে তাদের মুখোশ উন্মোচন করা হয় না। প্রথমে তরুণদের যারা বিগড়াচ্ছেন তাদের মানসিকতার পরিবর্তন করা উচিত, তারপরের ধাপেই না তরুণ। প্রথম ধাপ যতদিন জায়গামতো ছোটদের মন্দ কাজের শাসন করবে না, ভালো কাজের মূল্যায়ন করবে না, ততদিন মেধাবী ও বিবেকসম্পন্ন তরুণরা হয় বিগড়ে যাবে, না হয় মানসিক রোগী হয়ে থাকবে।
সবার বোধদয় হোক।