• রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৬:০৮ অপরাহ্ন
শিরোনাম:

ইন্টারনেটের ভালো-মন্দ

আপডেটঃ : বৃহস্পতিবার, ১২ অক্টোবর, ২০১৭

টেলিভিশন অথবা পত্রিকার বিজ্ঞাপনে বড় করে ছাপা হচ্ছে ইন্টারনেট প্যাকেজ অথবা ফ্রি এসএমএস কিংবা ফ্রি ফেসবুক। আমাদের তরুণ প্রজন্মের মাঝে যোগাযোগের প্রধান এবং প্রায় একমাত্র মাধ্যম হচ্ছে ফেসবুক। মার্কজুকারবার্গ ২০০৪ সালে যা আবিষ্কার করেছিলেন তার কিছু মুষ্টিমেয় বন্ধুর সঙ্গে যোগাযোগের জন্য তা আজ ডালপালা ছড়িয়ে সংযুক্ত করে নিয়েছে পুরো বিশ্বকে। এখন শুধুমাত্র যোগাযোগ নয়, বিনোদন, সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টি, এমনকি মুহূর্তের মাঝে কোনো সংবাদকে ভাইরাল করে দিতে সামর্থ্য রাখে ফেসবুক। যদি এই একবিংশ শতাব্দিকে আমরা তথ্য ও প্রযুক্তি বিপ্লবের কেন্দ্র বলে বিবেচনা করি, তবে বিপ্লবের একটি প্রধান হাতিয়ার হবে এই ফেসবুক। কিন্তু আজ আমি বলতে চাই, এই ফেসবুক তথা সামাজিক গণমাধ্যমের উল্টো দিকটা। এখন কেউ যদি আমাকে প্রশ্ন করে বসেন, তবে শুরুতে কেন এই অপ্রাসঙ্গিক কথাগুলো বাড়িয়ে বলা, তাহলে আমি বলব যুক্তিতর্কে বিপক্ষের কথাগুলোকে প্রথমে আওড়ে নেওয়াটাই আমার উদ্দেশ্য ছিল।

 

আমাদের উঠতি বয়সের নবীন ছেলে-মেয়েরা (বিশেষত ১৫ থেকে ১৬ এবং তদূর্ধ্ব নতুন প্রজন্ম)— আশপাশের অবস্থা বিশ্লেষণ করে যদি বলি, তারা দিনের প্রায় ১/৪ ভাগ কাটায় ফেসবুকে, ভুল হবে কি? ভালো লাগছে না, কী করি? হাতের কাছে ফোন, আর ফেসবুকে ঢু মারি, অথবা হুয়াটস অ্যাপে বন্ধুকে হ্যালো জানিয়ে দারুণ সময় উপভোগ করার সহজলভ্য উপায়। শুধুমাত্র এই দিকটা পাশে রেখে, আর হাজারও অসুস্থ ও নিম্নমানের বিনোদন কেড়ে নিচ্ছে দিনের বেশিরভাগ সময়। যোগাযোগ মাধ্যমগুলো দূরের মানুষকে কাছে এনেছে কিন্তু, কাছের মানুষগুলোকেও দূরে সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে না কি? দোষগুলো শুধু নতুন প্রজন্মের হেয়ালিপনা বলে হাতগুটিয়ে বসে রইলে চলবে না। আজ, এই মুঠোফোনের স্ক্রিনে বদ্ধ এবং জমাট হয়ে আটকে যাচ্ছে হাজার শিশুর মুক্ত চিন্তাধারা। সৃজনশীলতাকে নষ্ট করে, দুনিয়াটাকে ছোট করে দেওয়ার জন্য এই কি যথেষ্ট নয়? প্রতিবছর ১৭% হারে বেড়ে চলেছে ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা। এর মাঝে ঠিক কতজন এটাকে সঠিক কাজে লাগাচ্ছে তা বলা কঠিন। ১৮-২৪ বছর বয়সী ছেলে-মেয়েদের মধ্যে ৫০% এর সকালবেলার প্রথম কাজ হচ্ছে লগইন করা। আছে প্রায় ৮৩ মিলিয়ন ফেক আইডি। পাশাপাশি আছে সাইবার ক্রাইমের মত ভয়াবহ কিছু অপরাধ।

 

সমস্যাগুলো নিয়ে ভাবতে হবে পরিবার পর্যায়ে। যে শিশু ভূমিষ্ঠ হওয়ার আগেই তার ঘরে প্রতিঘণ্টায় স্টারপ্লাস কিংবা জলসার সিরিয়াল চলে, আমরা কি তার চিন্তার ক্ষেত্রটাকে ছোট করে আনছি না? পরিবারকে আমরা যতটুকু সময় দিচ্ছি, তার থেকে বেশি সময় হয়তো ফেসবুকে আপডেটেড হতে হতে চলে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে বিখ্যাত চিন্তাবিদ ড. নোমান আলী খানের একটি কথা আমি তুলে ধরতে চাই ইউ হ্যাভ টু থিংক হায়ার দ্যান দিস। হ্যাঁ, ফেসবুক, ম্যাসেঞ্জার, ভাইবার, ইমোর গন্ডি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। জীবনটাকে শুধুমাত্র লাইক, শেয়ার আর রিঅ্যাক্ট-এর শিকলে বেঁধে ফেলো না। পরিবার পর্যায়ে সচেতনতা আজ খুব বেশি আবশ্যক হয়ে দাঁড়িয়েছে। ব্যস্ত বাবা-মা সময় দিতে পারছেন না। আর কালকের ভবিষ্যত্ ছেলে-মেয়েরা বিনোদনের অন্য উপায় না পেয়ে বেছে নিচ্ছে টেলিভিশন অথবা মুঠোফোনকে। ঠিক এই ইন্টারনেটকেই আমরা আমাদের প্রজন্মের সবচেয়ে বড় শক্তি হিসেবে ব্যবহার করতে পারি। যোগাযোগ মাধ্যমের সস্তা বিনোদন ছাড়িয়ে ভাবতে হবে আরও উপরের দিকে।

 

ইন্টারনেটের কতগুলো আজেবাজে আবর্জনাকে সরিয়ে, সৃজনশীলতাকে ছড়িয়ে দিতে হবে দেখা যাবে চারপাশে। দিনটা যেন ফেসবুকে লগইন করে শুরু না হয়। আশপাশের মানুষগুলোকে নিয়ে ভাবতে হবে। জীবনটা কত সুন্দর। তাহলে আর ‘ডিপ্রেশন’, ‘ইনসোমনিয়া’ নিয়ে দিনের পর দিন কাটাতে হবে না। ‘রিফ্রেশ হওয়ার জন্য মুভির পর মুভি বেছে না নিয়ে, কাছের মানুষগুলোকে সময় দেয়া উচিত। সপ্তাহে অন্তত একঘণ্টা সময় নিয়ে পরিবারের সঙ্গে ঘুরতে হবে কোথাও। প্রচুর বই পড়া হতে পারে আমাদের বিনোদনের অন্যতম একটি উপায়। স্কুল পড়ুয়া ছেলে-মেয়েদের জন্য, বাসায় টেলিভিশনের পরিবর্তে জায়গা করে নিতে পারে কিশোর ম্যাগাজিন, কিংবা ল্যাপটপ—ডেস্কটপ-যেখানে থাকবে শিক্ষণীয় ও আনন্দদায়ক বিভিন্ন ভিডিওক্লিপ।

 

জীবনটাকে অর্থবহ করে তুলতে হবে। ভার্চুয়াল জগত্টাকে একটু পাশে সরিয়ে, বাস্তবকে নিয়ে ভাবতে হবে। সমস্যাগুলোকে আড়াল করার জন্য বুঁদ হচ্ছে ফেসবুকে/ইমোতে, তাতে সমস্যা আড়াল করার জন্য বুঁদ হচ্ছ ফেসবুকে/ ইমোতে, তাতে সমস্যা আড়াল হচ্ছে না; বরং বাড়ছে। স্রোতে গা না ভাসিয়ে, বিকশিত হতে হবে। পৃথিবীতে খুব কম সময়ই আমাদের জন্য বরাদ্দ আছে। তাই, কিছু অপ্রয়োজনীয় কাজে নিজের সারাটাদিন ঘিঞ্জি করে রাখা ঠিক নয় না। বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডায় টপিক হিসেবে বেছে নিতে হবে সৃজনশীল কোনো বিষয়বস্তু। বিশেষ  করে আমাদের মাঝে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী যারা আছে, পড়াশোনার পাশাপাশি বিভিন্ন উদ্ভাবনী কাজে সময় দেয়া যায় অনায়াশে। দেখবে জীবনটাকে আর একঘেঁয়ে লাগছে না। চারপাশের গণ্ডি পেড়িয়ে এক অন্যরকম পৃথিবীর স্বপ্ন দেখা যাবে। নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়ার ইচ্ছাই মানুষকে অনন্য করে তোলে। জীবনটাকে সুন্দর করার প্রচেষ্টা থেকে সুন্দর আর কিছুই নয়।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ