জেলার তিন উপজেলার জলাধারগুলোতে মুক্তা চাষ বাড়ছে। মুক্তা চাষে খরচের তুলনায় প্রায় নয় গুণ বেশি লাভ হয়। জেলায় বরগুনা সদর, আমতলী এবং পাথরঘাটা উপজেলায় ১১জন চাষি মৎস্য বিভাগের সহায়তায় মুক্তা চাষ করছেন বলে জানিয়েছেন মৎস্য বিভাগের কর্মকর্তারা।
মাছ চাষের সাথে একত্রে মুক্তা চাষ করা যায়। প্রয়োজন হয় না অতিরিক্ত খাল বা পুকুরের। জেলার আমতলী উপজেলার উত্তর ঘটখালী গ্রামে মুক্তা চাষে ভাগ্য গড়ার স্বপ্ন দেখছেন আরজান মোল্লা। উপজেলা মৎস্য অফিস থেকে সরবরাহ করা ৩ হাজার ৫শ ঝিনুকে মুক্ত চাষ করছেন তিনি । মুক্তা চাষে তার গড় খরচ ৮০ হাজার টাকা । খরচ বাদ দিয়ে ৭ থেকে সাড়ে ৭ লাখ টাকা নিশ্চিত লাভ বলে জানান আরজান মোল্লা। তিনি জানান, আমতলী ও বরিশালের মৎস্য বিভাগের ৪ দিনের প্রশিক্ষণ নিয়ে পরীক্ষামূলকভাবে দেশীয় প্রজাতির মাছ এবং শামুক সংরক্ষণ ও উন্নয়ন প্রকল্প গোপালগঞ্জ এর আওতায় আমতলী উপজেলা মৎস্য অফিসের সহযোগিতায় ৩৫শ ঝিনুকে মুক্তা চাষ শুরু করেন।
আমতলী উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা হালিমা সরদার জানান, আরজান মোল্লাকে মুক্তা চাষের ব্যাপারে সার্বিকভাবে মৎস্য বিভাগ থেকে পরামর্শ প্রদান করে হচ্ছে। আমরা তাকে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দিয়েছি ।
বরগুনা জেলায় প্রথম পরীক্ষামূলক মুক্তা চাষ করে সফল হয়েছিলেন অবসর প্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা ও বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম। প্রাথমিকভাবে পুকুরে ঝিনুকের মুক্তা চাষের প্রদর্শনী খামার গড়ে সেই প্রকল্প সফল হওয়াতে মুক্তা চাষে আগ্রহী হচ্ছেন অনেকেই। বরগুনা সদর উপজেলার লতাবাড়িয়া গ্রামে ব্রাইট এগ্রো নামের কৃষি খামারের মালিক অবসর প্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা মো. নুরুল ইসলাম তার ছোটভাই টেকসই উপকূলীয় মেরিন ফিশারিজ প্রকল্পের উপ-প্রকল্প পরিচালক মো. কামরুল ইসলামের পরামর্শে এ এগ্রো ফার্মে ২০১৯ সালে মাছের পাশাপাশি ঝিনুকের মুক্তা চাষের প্রকল্প হাতে নেন। গড়ে তোলেন একটি প্রদর্শনী খামার। নুরুল ইসলাম জানান, তিনি সুনামগঞ্জে চাকরি করার সময় মুক্তা চাষ দেখেছেন। সেখান থেকেই উদ্বুদ্ধ হয়ে ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পরামর্শ নিয়ে মুক্তা চাষ শুরু করেন। নুরুল ইসলাম জানিয়েছেন, কেউ মুক্তা চাষ করতে চাইলে তিনি প্রযুক্তি ও উপকরণ দিয়ে তাকে তিনি সহায়তা করেন। তিনি বরগুনা থেকে গ্রিসে মুক্তা রপ্তানি করার উদ্যোগ নিয়েছেন।
মুক্তা চাষিরা জানিয়েছেন, প্রাকৃতিক জলাধার থেকে মান স¤পন্ন ঝিনুক সংগ্রহ করে ঝিনুকের মুখ ফাঁকা করে ঝিনুকের খোসার গুড়া ও ২ ধরনের রাসায়নিক দ্রব্যের সংমিশ্রণে বিভিন্ন ধরনের ডাইচের ভেতরে স্থাপন করা হয়। ৭ থেকে ৮ মাসের মধ্যে ঝিনুকের ভিতরে মুক্তা আহরণের উপযুক্ত হয়। আর এসকল কাজে ব্যয় হয় সর্বোচ্চ ১০০ টাকা। বাড়ির পাশে পুকুর ও জলাধারে এরকম মুক্ত চাষ সম্ভব। ব্যয়ের পরিমাণও কম। উৎপাদিত মুক্তা প্রতিটি গড়ে ১ হাজার থেকে দেড় হাজার টাকায় বিক্রি হয়। চাষিরা আরও জানান, বাজারজাতকরণের যথাযথ সুবিধা না থকায় তারা ন্যায্যমূল্য না পওয়ার আশঙ্কায় রয়েছেন।
টেকসই উপকূলীয় মেরিন ফিশারিজ প্রকল্পের উপ-প্রকল্প পরিচালক মো. কামরুল ইসলাম জানিয়েছেন, জুয়েলারি, ওষুধ শিল্পে, কসমেটিক্স, পেইন্টস ফরমুলেসনে মুক্তা ব্যবহৃত হয়ে থাকে। মুক্তা বিদেশ থেকে আমদানি করতে হচ্ছে। আমাদের দেশে হাওড় ও বিলে প্রাকৃতিকভাবে মুক্তা পাওয়া যায়। ব্যাপকহারে এটি চাষের আওতায় নিয়ে আসা সম্ভব হলে দেশীয় চাহিদা পূরণের পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রা ও অর্জন করা সম্ভব।
পাথরঘাটা উপজেলার মৎস্য বিভাগের সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা জয়ন্ত কুমার অপু জানান, বরগুনা সদর, আমতলী ও পাথরঘাটার ১১ চাষির দেখাদেখি এলাকার অনেকেই এখন মুক্তা চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছে। বাজারজাত করার বাঁধাগুলো দূর করা গেলে চলতি বছর বরগুনা জেলায় কোটি টাকা লাভের আশা করছেন মুক্তা চাষিরা।
বরগুনা সরকারি মহিলা কলেজের অর্থনীতি বিভাগের প্রভাষক মিজানুর রহমান সোহেল বলেন, ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করা গেলে বদলে যেতে পারে গ্রামের চিত্র।
বরগুনার জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ কুমার দেব জানান, মুক্তা চাষিদের অর্থনৈতিক সহায়তাসহ প্রশিক্ষণ দিচ্ছে মৎস্য বিভাগ। মুক্তা বাজারজাত করার বাঁধাগুলো দূর করার প্রচেষ্টা চলছে।