• সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ০৫:০৯ অপরাহ্ন

নারী শিক্ষা ও স্বাধীনতার প্রশ্নে সোচ্চার ছিলেন সুফিয়া কামাল,

নিউজ ডেস্ক
আপডেটঃ : মঙ্গলবার, ২১ নভেম্বর, ২০২৩
কবি সুফিয়া কামালের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পন।

নারী মানবমুক্তির অন্বেষায় আজীবন কাজ করে ইতিহাসে স্থান করে নিয়েছেন কবি সুফিয়া কামাল। কয়েক প্রজন্মকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করা সুফিয়া কামাল নারী শিক্ষা ও স্বাধীনতার প্রশ্নে সর্বদাই ছিলেন সোচ্চার। একইসঙ্গে স্বচ্ছ রাজনৈতিক চিন্তার অধিকারী এ নারী নেত্রী ও কবি সাম্প্রদায়িকতা ও মৌলবাদ প্রতিরোধে কাজ করে গেছেন।

মঙ্গলবার (২১ নভেম্বর) সেগুনবাগিচায় বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের আনোয়ারা বেগম মুনিরা খান মিলনায়তনে সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি কবি সুফিয়া কামালের ২৪তম প্রয়াণ দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় আলোচকরা এসব কথা বলেন।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু। তিনি বলেন, মানবজীবনের ক্ষণআয়ুর জীবনকালে তিনি মানবকল্যাণে অসামান্য অবদান রেখে গেছেন। এই মহীয়সী নারী, মানবমুক্তির অন্বেষায় তার কাজের মাধ্যমে ইতিহাসে স্থান করে নিয়েছেন। তিনি কয়েক প্রজন্মকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করে গেছেন। তিনি ছিলেন স্বচ্ছ রাজনৈতিক চিন্তার অধিকারী। সমাজের মধ্যে তৈরি হওয়া অবক্ষয়, পরিবেশগত বিপর্যয়, সাম্প্রদায়িকতা ও মৌলবাদ প্রতিরোধে তিনি ছিলেন সবসময় সোচ্চার।

বিশিষ্ট আইনজীবী ও মানবাধিকার কর্মী ও কবির কন্যা সুলতানা কামাল বলেন, তার মাতৃত্ব চিন্তার আদর্শ ছিল বরাভয়। তিনি সকলের আশ্রয় ছিলেন। ব্যক্তিগত, সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে তিনি চারিত্রিক দৃঢ়তা বজায় রাখতেন। তিনি ঐতিহ্য ধারণ করে চলেছেন; সময়ের সাথে বুদ্ধির সঙ্গে মেধাকেও ধারণ করেছেন। জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে তিনি মানবতার চর্চাকে সবসময় গুরুত্ব দিয়েছেন।

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মাসুদা রেহানা বেগম বলেন, কবি সুফিয়া কামাল ছিলেন মুক্তবুদ্ধি চিন্তা, অসাম্প্রদায়িক চিন্তা, চেতনা আর ভাবনার প্রতিচ্ছবি। নারী শিক্ষা ও নারী স্বাধীনতার জন্য তিনি সবসময় সোচ্চার ছিলেন। রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের আদর্শ অনুসরণ করে বাংলাদেশের নারী আন্দোলনে তার একটি উক্তি সুফিয়া কামাল আজীবন ধারণ করে গেছেন- ‘মানবমুক্তির জন্য নারী মুক্তি অপরিহার্য’।

তার নেতৃত্বে মহিলা পরিষদ অত্যাবশ্যকীয় নারীবান্ধব আইন প্রণয়ন করতে সক্ষম হয়, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো যৌতুক নিরোধ আইন ১৯৮০, বিবাহ ও তালাক রেজিষ্ট্রেশন আইন এবং অভিন্ন পারিবারিক আইনের প্রস্তাবনা তৈরি হয় বলেও জানান তিনি।

গবেষণা কর্মকর্তা আফরুজা আরমান বলেন, কবি সুফিয়া কামাল নারীর সামাজিক শৃঙ্খল ভেঙে তার মুক্তির জন্য কাজ করেছেন। তিনি নারী মুক্তি বা মানবমুক্তির আন্দোলনে পুরুষ সমাজের পাশাপাশি তরুণ সমাজকে যুক্ত হওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছিলেন। আজ তার এই আহ্বানে সাড়া দিয়ে আমাদের সকলকে উজ্জীবিত হতে হবে। নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে নারী-পুরুষের সমতাভিত্তিক সমাজ গঠনে দৃঢ় প্রত্যয়ী হয়ে এগিয়ে যেতে হবে।

সভাপতির বক্তব্যে মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম বলেন, তিনি ছিলেন সবসময় সমসাময়িক। তিনি বলতেন আমি খুব ভয় পাই একবিংশ শতাব্দী কেমন হবে, এই শতাব্দীর মানুষের মনুষ্যত্ব কেমন হবে? আজ নৈতিকতার প্রশ্ন সব থেকে বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। আজ ক্ষমতা, কালো টাকা ও পেশি শক্তির বিপরীতে আইনের শাসন জোরালো নয়, সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে আমরা পিছিয়েছি, নারীর প্রতি সমাজের বিদ্বেষ বেড়েছে- সব মিলিয়ে একটি জটিল অবস্থার তৈরি হয়েছে। সামাজিক আচরণ বর্জিত প্রজন্ম আমরা তৈরি করছি কিনা তা দেখতে হবে। এ অবস্থায় মানবতাকে রক্ষা কর, মানবাধিকারকে প্রতিষ্ঠা কর- এই শ্লোগানকে সামনে নিয়ে আসতে হবে। তিনি বলতেন এগিয়ে যেতে পারলে সামনের বাধা পিছনে চলে যায়- তার এই আহ্বানকে সঞ্চয় করেই এই সংগঠন নারীর অধিকার মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সকলকে সাথে নিয়ে কাজ করে যাবে।

এর আগে অনুষ্ঠানের শুরুতে কবি সুফিয়া কামালের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পন করা হয়। সংগীত পরিবেশন করেন বিশিষ্ট সংগীতশিল্পী শারমিন সাথী ময়না। কবিতা আবৃত্তি করেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের আইটি অফিসার দোলন কৃষ্ণ শীল।

আলোচনা শেষে ‘Leelaboti Nag:The rebel’ শিরোনামে একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ