শিল্পচর্চার পাশাপাশি সমাজ-রাজনীতিতেও আগ্রহী ছিলেন কামরুল হাসান
পটুয়া কামরুল হাসান কেবল জনবিচ্ছিন্ন শিল্পচর্চায় নিজেকে গুটিয়ে রাখেননি, বরং জীবনের শুরু থেকেই শিল্পচর্চার পাশাপাশি সামাজিক ও রাজনৈতিক কর্মময়তার জগতে সমান আগ্রহে প্রবেশ করেছিলেন।
শনিবার (২ ডিসেম্বর) বিকেলে রাজধানীর বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরে অনুষ্ঠিত এক আয়োজনে এমন কথা বলেন বিশিষ্টজনেরা।
আয়োজনে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর পর্ষদের সভাপতি অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক মো. কামরুজ্জামান। আলোচনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ড. সৈয়দ আজিজুল হক এবং শিল্পী শাওন আকন্দ।
আলোচনায় বক্তারা বলেন, বাংলাদেশে চারুচর্চা, প্রাতিষ্ঠানিক শিল্পশিক্ষার উদ্যোগ, জনভোগ্য ব্যবহারিক শিল্প তৈরির চেষ্টাসহ সামগ্রিকভাবে চারুকলায় কামরুল হাসানের নাম অনন্য হয়ে আছে। কামরুল হাসান কেবল জনবিচ্ছিন্ন শিল্পচর্চায় নিজেকে গুটিয়ে রাখেননি। তিনি জীবনের শুরু থেকেই শিল্পচর্চার পাশাপাশি সামাজিক ও রাজনৈতিক কর্মময়তার জগতে সমান আগ্রহে প্রবেশ করেছিলেন। সারাজীবন তার কাজ ও জীবনচর্চায় পরস্পরের পরিপূরক হয়ে এ দুই ধারা তাকে ব্যতিক্রমী করে তোলে।
বক্তারা বলেন, কামরুল হাসানের শিল্পকর্মের সংখ্যা বিপুল। কাজও করেছেন বিচিত্র মাধ্যমে। নিজেকে তিনি ‘পটুয়া’ বলে পরিচয় দিতেন। বাংলার পটুয়াদের ঐতিহ্যবাহী রং ও রূপবন্ধে তিনি মুগ্ধ ছিলেন। এর সঙ্গে এসে মিশেছিল ইউরোপের আধুনিক নন্দনবোধ। পিকাসোর কিউবিক রীতি আর মাতিসের বর্ণচ্ছটা তাকে অনুপ্রাণিত করেছে। কিন্তু তার ছিল এক নিজস্ব চিত্রভাষা। কামরুল হাসানের চিত্রকলায় নারী, নিসর্গ, প্রাণী নানা আঙ্গিকে ও ব্যঞ্জনায় উঠে এসেছে। একইসঙ্গে তার ছিল জনশিল্পের চর্চা। তিনি বইয়ের প্রচ্ছদ, অলংকরণ, সাজসজ্জা থেকে শুরু করে শাড়ির নকশা করতেও ইতস্তত করেননি। বিসিকের নকশাকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করে তিনি ঐতিহ্যবাহী জামদানির নকশা সংগ্রহ এবং এর আধুনিকায়নে একাগ্র ছিলেন। বৈশাখী মেলার আয়োজন করে কারুশিল্পকে নাগরিক জনরুচি গড়তে এবং তার প্রসার ঘটাতে চেয়েছেন। তিনি প্রচুর রাজনৈতিক পোস্টার ও কার্টুনও করেছেন। তার আঁকা ইয়াহিয়া খানের মুখচ্ছবির কার্টুনটি মুক্তিযুদ্ধের আইকন হয়ে উঠেছে। রাজনীতিতে শিল্পের ভূমিকার এটি এক অনন্য উদাহরণ।
অতিথিরা বলেন, বেঁচে থাকলে শিল্পী কামরুল হাসান এখন শতায়ু হতেন। জীবনের পরিধি শতায়ুর মাইলফলক স্পর্শ করতে না পারলেও কোনো কোনো মানুষ তার কাজের ভেতর দিয়ে শত কেন, হাজার বছর পেরিয়ে মৃত্যুঞ্জয়ী হয়ে ওঠেন। তেমনই একজন মানুষ বাংলাদেশের আধুনিক শিল্পকলা চর্চার অন্যতম পথিকৃৎ কামরুল হাসান।