বর্তমান সময়ে তরুণদের অন্যতম স্বপ্ন হলো সে ব্যাংকার হবে। আগ্রহীরা অপেক্ষায় থাকেন কখন সরকারি ব্যাংকগুলো তাদের অনুকূলে নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করবেন সেই আশায়। বরাবরের মতো এবারও বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটি। সম্প্রতি দুইটি ব্যাংকে ১৫৩ জনের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি সেই স্বপ্নবাজদের স্বপ্ন পূরণের একটি সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছে। যোগ্যরা আবেদন করতে পারেন বিজ্ঞপ্তিতে উল্লিখিত পদগুলোতে। ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে আবেদন প্রক্রিয়া। আবেদন প্রক্রিয়া, প্রার্থীদর যোগ্যতা, বেতনসীমা, আবেদনের নিয়মসহ বিস্তারিত লিখেছেন মাহবুব শরীফ
আবেদনের পদসমূহ
সম্প্রতি প্রকাশিত এই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, দুই ব্যাংকে (সোনালী ও জনতা) ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা আইটি বা আইসিটি পদে ১৫৩ জন নিয়োগ দেয়া হবে। এর মধ্যে জনতা ব্যাংকে ৬৮ ও সোনালী ব্যাংকে ৮৫ জনকে এ নিয়োগ দেয়া হবে।
আবেদনের যোগ্যতা
উল্লিখিত পদগুলোতে আবেদন করতে হলে প্রার্থীদের যোগ্যতা হিসেবে প্রয়োজন হবে কোনো স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটার বিজ্ঞান/কম্পিউটার বিজ্ঞান প্রকৌশল/ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন টেকনোলজি/ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং/পদার্থ/ফলিত পদার্থ বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অথবা চার বছরমেয়াদি স্নাতক/স্নাতক (সম্মান) ডিগ্রির। তবে, কোনো তৃতীয় শ্রেণি বা বিভাগ আবেদনের জন্য গহণযোগ্য হবে না। অন্যদিকে গ্রেডিং পদ্ধতিতে প্রকাশিত ফলাফলের ক্ষেত্রে- শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ২০০৯ ও ২০১০ এর নীতিমালা অনুসরণ করা হবে। আর তা হলো- গ্রেডিং পদ্ধতিতে প্রকাশিত ফলের ক্ষেত্রে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ ৩.০০ বা এর বেশি প্রথম বিভাগ, জিপিএ ২.০০ থেকে ৩.০০-এর কম দ্বিতীয় বিভাগ ধরা হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে ৪ পয়েন্ট স্কেলে সিজিপিএ ৩.০০ বা বেশি হলে প্রথম বিভাগ বা শ্রেণি, ২.২৫ বা এর বেশি কিন্তু ৩.০০-এর কম দ্বিতীয় বিভাগ ধরা হবে। আর পয়েন্ট স্কেল ৫ হলে ৩.৭৫ বা এর ওপরে প্রথম বিভাগ বা শ্রেণি, ২.৮১৩ থেকে বেশি কিন্তু ৩.৭৫-এর কম দ্বিতীয় বিভাগ বা শ্রেণি হিসেবে বিবেচিত হবে।
বয়সসীমা
উল্লিখিত পদে আবেদন করতে হলে ১ অক্টোবর ২০১৭ তারিখে প্রার্থীদের বয়স হতে হবে ৩০ বছরের মধ্যে। তবে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় আবেদনকারীদের বয়স ৩২ বছর পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়েছে।
আবেদন পদ্ধতি
সম্প্রতি প্রায় সকল নিয়োগের বিপরীতে আবেন করতে হয় অনলাইনের মাধ্যমে। এবারের নিয়োগেও অনলাইনে আবেদন করতে হবে প্রার্থীদের। বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে অনলাইনে আবেদন করতে পারবেন। প্রায় সব রাষ্ট্রায়ত্ত ও বিশেষায়িত ব্যাংকে আবেদনের একই নিয়ম। ১৫ নভেম্বর ২০০৯ বা পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সিভি ব্যাংকে রেজিস্ট্রেশন করা থাকলে পুনরায় নিবন্ধন করতে হবে না, সিভি আইডেন্টিফিকেশন নম্বর এবং পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে আবেদন করা যাবে। তবে নতুন আবেদনকারীদের আবেদনের আগে নিবন্ধন করতে হবে। প্রার্থীর নাম, পিতা ও মাতার নাম এসএসসি বা সমমানের সনদ অনুযায়ী অনলাইন ফরম পূরণ করতে হবে। ফলাফলের ঘরে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের প্রকাশিত পরীক্ষার ফলাফলের তারিখ উল্লেখ করতে হবে। অনলাইনে আবেদনের জন্য প্রবেশ করতে হবে বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইটের https://erecruitment.bb. org.bd/onlineapp/openpdf.php এই লিংকে । আবেদনের শেষ সময় আগামী ১৮ অক্টোবর, ২০১৭ পর্যন্ত।
যা যা লাগবে
আপলোড করতে হবে ৬০০ বাই ৬০০ পিক্সেল ও সর্বোচ্চ ৮০ কিলোবাইটের ছবি এবং ৩০০ বাই ৮০ পিক্সেল ও সর্বোচ্চ ৬০ কিলোবাইটের স্বাক্ষরের স্ক্যান কপি। অনলাইনে আবেদন করার পর ট্র্যাকিং নম্বরযুক্ত ফরমটি সংরক্ষণ করতে হবে। যথাযথভাবে আবেদনের পর সিভি আইডেনটিফিকেশন নম্বর, ট্র্যাকিং নম্বর ও অ্যাপ্লিকেন্ট কপি প্রার্থীকে সংরক্ষণ করতে হবে। পরবর্তী সময়ে প্রবেশপত্র নেয়ার জন্য এগুলো কাজে লাগবে। প্রবেশপত্র ওয়েবসাইট থেকেই ডাউনলোড করা যাবে। প্রার্থীদের প্রাথমিকভাবে কোনো কাগজপত্র জমা দিতে হবে না। লিখিত পরীক্ষার পর মৌখিক পরীক্ষার সময় সব একাডেমিক পরীক্ষার সনদ, জাতীয়তার সনদ, নাগরিকত্ব সনদ, চারিত্রিক সনদের সত্যায়িত ফটোকপি দাখিল করতে হবে।
বেতনসীমা
চূরান্তভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত একজন কর্মকর্তা জাতীয় বেতন স্কেল ২০১৫ অনুসারে ২২হাজার -৫৩ হাজার ৬০ টাকা স্কেলে বেতনসহ নিয়মানুযায়ী বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা প্রাপ্ত হবেন।
পরীক্ষা পদ্ধতি
পূর্বে অনুষ্ঠিত রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকসমূহে প্রায় একই পদ্ধতিতে পরীক্ষা গ্রহণ করা হয়েছে। সোনালী ও জনতা ব্যাংকে নিয়োগের ক্ষেত্রে সাধারণত প্রার্থীদের এমসিকিউ, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা নেয়া হয়। পরীক্ষার তারিখ ও সময় পরবর্তীকালে ব্যাংকের ওয়েবসাইটে কিংবা বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানানো হবে। প্রার্থীদের নজর রাখতে হবে নির্দিষ্ট ব্যাংকের ওয়েবসাইটে।
পরীক্ষার ধরন
এর আগে সোনালী বা জনতা ব্যাংকের নিয়োগ পরীক্ষাগুলোতে দেখাগেছে এক ঘণ্টার এমসিকিউ পরীক্ষায় ১০০ ও দুই ঘণ্টার লিখিত পরীক্ষায় থাকবে ২০০ নম্বর নির্ধারিত ছিল। বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী এবারের নিয়োগ পরীক্ষাতেও তেমনই হবে। এমসিকিউ ও লিখিত পরীক্ষায় সাধারণত বাংলা, ইংরেজি, সাধারণ গণিত ও সাধারণ জ্ঞান (বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি), তথ্যপ্রযুক্তি, অ্যানালিটিক্যাল অ্যাবিলিটি বিষয়ে প্রশ্ন থাকে। আইটি অফিসার পদে তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক প্রশ্নপত্র বেশি হয়ে থাকে। সব রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের পরীক্ষার প্রশ্নপত্র সাধারণত একই ধরনের হয়ে থাকে। বিগত বছরগুলোর নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন অনুসরণ করলে এমসিকিউ ও লিখিত পরীক্ষায় ভালো করা যাবে।
যে বিষয়ে প্রস্তুতি দরকার
শুরুতে যে পরীক্ষাটা হবে তা হলো এমসিকিউ পরীক্ষা। এতে থাকবে বাংলা ব্যাকরণ অংশের প্রবাদ প্রবচন, উপসর্গ, সন্ধি বিচ্ছেদ, সমার্থক শব্দ, বাংলা পরিভাষা, বাগধারা, পদ, সমোচ্চারিত শব্দ, এক কথায় প্রকাশ, বিপরীত শব্দ, শুদ্ধ বানান, বচন, সমাস, কারক, বিভক্তিসহ নানা বিষয়ে প্রশ্ন। বিভিন্ন উপন্যাসের লেখকের নাম, বিভিন্ন গ্রন্থের নাম, বিভিন্ন উপন্যাসের চরিত্রের নাম, রচয়িতা, জন্ম-মৃত্যুকালসহ উপন্যাস, নাটক ও সাহিত্যের অন্যান্য অংশ থেকে প্রশ্ন থাকে। বর্তমান সময়ে ইংরেজি ছাড়া পরিক্ষার কথা কল্পনাই করা যায় না। এই পরীক্ষাতেও তার ব্যতিক্রম নয়। ইংরেজির গ্রামার অংশে এমসিকিউ পরীক্ষায় গ্রামারের নানা বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়। রচনামূলক অংশে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ইংরেজি রচনা আসতে পারে। বাংলা থেকে ইংরেজিতে অনুবাদও থাকে। অন্য বিষয়গুলোর মতো পাটিগণিত ও বীজগণিত দুই অংশ থেকেই প্রশ্ন করা হয় এমসিকিউ এবং রচনামূলক পরীক্ষায়। পাটিগণিতে লসাগু, গসাগু, শতকরা, সুদকষা, অনুপাত-সমানুপাত, ঐকিক নিয়মসহ নানা বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়। বীজগণিতে উত্পাদক নির্ণয়, সমীকরণ, মূলদ, অমূলদ সংখ্যা, অসমতা, সূচক ও লগারিদমের সূত্রের প্রয়োগ বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়। সব সময়েই নিচের ক্লাসের বইগুলো বেশি কাজে আসে। সে ক্ষেত্রে চাইলে নবম ও দশদ শ্রেণির বইগুলো অনুসরণ করতে পারেন। এছাড়াও সাধারণ জ্ঞানে নজর দিতে হবে।