এর সঙ্গে যেসব দলের গঠনতন্ত্র মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও সংবিধানবিরোধী তাদের ব্যাপারেও একই পরামর্শ এসেছে তাদের কাছ থেকে।
সোমবার নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সংলাপে অংশ নেন নারী নেত্রীরা। এতে সভাপতিত্ব করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নূরুল হুদা।
ইসির অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার এবং ভারপ্রাপ্ত সচিব হেলালুদ্দীন আহমদসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও সংলাপে উপস্থিত ছিলেন।
গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে প্রত্যেক রাজনৈতিক দলের সব পর্যায়ের কমিটিতে ৩৩ শতাংশ নারী সদস্য ২০২০ সালের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করার কথা বলা হয়েছে।
সংলাপ থেকে বেরিয়ে এই বিষয়ে বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘের নির্বাহী পরিচালক রোকেয়া কবির বলেন, “নির্বাচন কমিশনে ৪০টি দলের নিবন্ধন আছে। কয়েকটি দল ইসির সংলাপে এসে দাবি করেছে, এই বিধান তুলে দেওয়ার জন্য, যা বাংলাদেশের সংবিধান বিরোধী।
“সুতরাং যে সকল দলের গঠনতন্ত্র মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও সংবিধানের মূল চেতনা বিরোধী, সকল নাগরিকের সমান অধিকার বিরোধী, সে সমস্ত রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন যাচাই করে বাতিল করতে হবে। আমরা সেই বিষয়টি নির্বাচন কমিশনেরর কাছে তুলে ধরেছি।”
‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের’ যে কথা বলা হয় তা কেবল কয়েকটি রাজনৈতিক দলের জন্য বলে মন্তব্য করেন রোকেয়া কবির।
তিনি বলেন, “লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নারী-পুরুষ সবার জন্য করতে হবে। বাংলাদেশে নারীদের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নেই। কেননা তারা নিরাপত্তা, চলাফেরা, রাজনৈতিক দলগুলো থেকে মনোনয়ন পাওয়ার ক্ষেত্রে সমান অধিকার পায় না। নারীরা উত্তরাধিকার না হওয়ার কারণে স্বাধীনভাবে নির্বাচনও করতে পারে না। তাই নির্বাচন কমিশনের কাছে নারী ও দরিদ্র মানুষের জন্য ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ নিশ্চিত করার সুপারিশ করেছি।”
প্রিপ ট্রাস্ট্রের নির্বাহী পরিচালক অ্যারোমা দত্ত বলেন, “এবার দেখা যাচ্ছে নতুন প্রজন্মের ভোটার এসেছে। তাদের মধ্যে নারী অংশীদারিত্বের বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। কারণ নতুন প্রজন্ম একটা বড় ফ্যাক্টর। নির্বাচন পূর্ব ও পরবর্তী সময় যেন ভাল করে নির্বাচন কমিশন নারীদের সাপোর্ট দেয়, যেন কোনোরকম সংহিসতা না ঘটে।”
নির্বাচনে মিডিয়াকে স্বাধীনভাবে কাজের পরিবেশ দেওয়ার বিষয়েও সুপারিশ করেছেন বলে জানান তিনি।
বাংলাদেশ নারী সাংবাদিক কেন্দ্রের জেনারেল সেক্রেটারি পারভীন সুলতানা ঝুমা বলেন, “যেখানে ৫২ শতাংশ নারী ভোটারের অংশগ্রহণের একটি নির্বাচিত সংসদ আসবে, নির্বাচন প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে সেই নারীদের যেন চাপ প্রয়োগ করা না হয়।”
তাদের যেন সম্মানের সঙ্গে নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ নিশ্চিত করা হয়, সে সুপারিশ করার কথা জানান তিনি।
এছাড়া সংসদে এক-তৃতীয়াংশ নারী আসন বরাদ্দ ও এতে সরাসরি ভোটের ব্যবস্থা, ভোটে নারীদের বেশি মনোনয়ন, ‘না ভোট’ রাখার বিধান এবং মসজিদে নারীদের ভোট দিতে নিরূৎসাহিত করার বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে সুপারিশ করেন তারা।
সংলাপে ২২ নারী নেত্রীকে কমিশন আমন্ত্রণ জানালেও ১৩ জন অংশ নিয়েছেন।
সংলাপে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু, ডিজ্যাবল্ড রিহ্যাবিলিটেশন অ্যান্ড রিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ডিআরআরএ) নির্বাহী পরিচালক ফরিদা ইয়াসমিন, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব উইমেন ফর সেলফ এমপাওয়ারমেন্টের (বাউশী) নির্বাহী পরিচালক মাহবুবা বেগম, ফর ইউ ফর এভারের (ফাইফে) প্রেসিডেন্ট রেহানা সিদ্দিকী, নারী উদ্যোগ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক মাসহুদা খাতুন শেফালী, নারী নেত্রী রেখা চৌধুরী, ফাতেমা আক্তার, নাসরিন বেগম, রীনা সেন গুপ্ত ও মনসুরা আক্তার।
গত ৩১ জুলাই সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে এবং ১৬ ও ১৭ অগাস্ট গণমাধ্যমের প্রতিনিধিদের সঙ্গে সংলাপে করে ইসি। এরপর গত ২৪ অগাস্ট থেকে ১৯ অক্টোবর পর্যন্ত ৪০টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ধারাবাহিক সংলাপ করেছে নির্বাচন কমিশন। রোববার নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের সঙ্গেও সংলাপ করেছে সংস্থাটি।
মঙ্গলবার নির্বাচন বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে সংলাপের মধ্যে দিয়ে এই প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।