মিয়ানমারের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গা মুসলিম অধ্যুষিত কিয়াকতাউ শহরে সেনাবাহিনীর নবম মিলিটারি অপারেশন্স কমান্ডে (এমওসি-৯) হামলা চালিয়েছে সেখানকার সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মি (এএ)। রাখাইনের কালাদান উপত্যকার গুরুত্বপূর্ণ এই শহরে সেনাবাহিনীর অবস্থানে আরাকান আর্মির হামলার পর সেখানে তীব্র লড়াই শুরু হয়েছে।
শুক্রবার (২৬ জানুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে রাখাইনের স্থানীয় সংবাদমাধ্যম নারিনাজারা নিউজ। সেনাবাহিনীর একটি সূত্রের বরাতে সংবাদমাধ্যমটি বলেছে, কিয়াকতাউ শহরে শুক্রবার দিনভর লড়াই হয়েছে। যা মধ্যরাত থেকে তীব্র আকার ধারণ করে।
সূত্রটি বলেছে, ‘‘এমওসি-৯-এ আরাকান আর্মির সদস্যরা গত তিন থেকে চারদিন ধরে হামলা চালাচ্ছে। শুক্রবার সকাল থেকে হামলার তীব্রতা বৃদ্ধি পায়। আমরা জানতে পেরেছি আরাকান আর্মি সেখানে এগিয়ে আছে এবং এমওসি-৯ এর কার্যালয়ে প্রবেশ করেছে।
আরাকান আর্মিসহ মিয়ানমারের তিনটি সশস্ত্র গোষ্ঠী গত অক্টোবরে ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স নামের একটি জোট গঠন করে। নিজেদের মধ্যে সমন্বয় করে জান্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে সম্মিলিত হামলা চালাচ্ছে এই জোট। গত ২৪ জানুয়ারি এক বিবৃতিতে ব্রাদারহুড অ্যালায়ন্স জানায়, তারা একটি একটি করে জান্তা বাহিনীর প্রত্যেকটি ডিভিশন এবং ঘাঁটি দখলে নেওয়ার চেষ্টা করছে।
স্থানীয়রা বলেছেন, কিয়াকতাউয়ের এমওসি-৯ জান্তাবাহিনীর একটি ডিভিশন। বিবৃতিতে এই ডিভিশন দখলের চেষ্টার কথা উল্লেখ করেছিল ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স।
এদিকে, রাখাইনের আরেক শহর পাউয়াকতোর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার দাবি করেছে আরাকান আর্মি। এখন তারা কিয়াকতাউ, মারুক-উ, মিনবায়া এবং রাথেডংয়ে জান্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে নিয়মিত হামলা চালাচ্ছে। এসব অঞ্চলে অবস্থানরত সেনাবাহিনীর সদস্যরা এখনও আত্মসমর্পণ করেনি।
বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য গত কিছু দিন ধরে ফের উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। রাখাইনভিত্তিক বৌদ্ধদের সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মির সঙ্গে সেনাবাহিনীর ব্যাপক লড়াই হচ্ছে। এ লড়াই পৌঁছে গেছে বাংলাদেশের টেকনাফ থেকে মাত্র ৩০ কিলোমিটার দূরের বুচিডং শহরেও। সেনাবাহিনীর সদস্যদের কাছ থেকে রাখাইনের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিতে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাচ্ছে আরাকান আর্মি।
দ্য আরকান এক্সপ্রেস নিউজ নামের স্থানীয় একটি সংবাদমাধ্যম বলেছে, গত কয়েকদিন ধরে সেখানে প্রচণ্ড হামলা-পাল্টা হামলা হচ্ছে। এর মধ্যে বৃহস্পতিবার (২৫ জানুয়ারি) বুচিডংয়ের একটি রোহিঙ্গা গ্রামে ভারী অস্ত্র দিয়ে হামলা চালায় জান্তা বাহিনী। তাদের ছোড়া দুটি বোমা সাধারণ মানুষের বাড়িতে আঘাত হানে। এতে ঘটনাস্থলেই তিনজনের মৃত্যু হয়। বর্তমানে বুচিডং এবং আশপাশের অঞ্চলে মোবাইল নেটওয়ার্ক বন্ধ করে দিয়েছে জান্তা বাহিনী।
ইয়ুথ এশিয়া ফর মিয়ানমার নামের একটি ফেসবুক পেইজে বলা হয়েছে, বুচিডংয়ের ফো নো লেক গ্রামের ১০০ বাসিন্দা বোমা হামলার ভয়ে অন্যান্য গ্রামে চলে গেছেন। সেখানে আরাকান আর্মির সদস্যদের লক্ষ্য করে হামলা হচ্ছে।