• শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০১:২৮ পূর্বাহ্ন

তিন বছরেও শেষ হচ্ছে না রূপসী বাংলার সংস্কার

আপডেটঃ : সোমবার, ২৩ অক্টোবর, ২০১৭

আন্তর্জাতিক চেইন হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল নতুনরূপে আবার চালু হচ্ছে। কিন্তু কবে এর সংস্কার কাজ শেষ হবে তা নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। তিন বছরেও সংস্কার কাজ শেষ হচ্ছে না রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন পাঁচ তারকা হোটেল রূপসী বাংলার। অথচ ১৬ মাসের মধ্যে সংস্কার কাজ শেষ হয়ে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল ঢাকা নামে চালু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু প্রকল্প ব্যবস্থাপনায় অদক্ষতা, অসহযোগিতা এবং সমন্বয়হীনতাসহ নানা কারণে তা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে একদিকে প্রকল্পের ব্যয় অনেক বেড়ে গেছে। অন্যদিকে হোটেলটি চালু না হওয়ায় লোকসান গুনতে হচ্ছে সরকারকে। সেইসঙ্গে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে হোটেলটির বেকার শ্রমিক-কর্মচারীদের মধ্যেও। এ অবস্থায় এখনও কেউ বলতে পারছেন না কবে চালু হবে এটির বাণিজ্যিক কার্যক্রম। তবে ব্যাপক পরিবর্তন আসছে হোটেলটিতে। থাকছে ‘ইনফিনিটি পুল’। প্রেসিডেন্সিয়াল সুইট রুমসহ নতুন সুইট রুম, কক্ষের সাজসজ্জায় থাকছে নান্দনিকতার ছোঁয়া, আধুনিক পাঁচ তারকামানের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধিসহ বিনোদনেরও ব্যবস্থা থাকছে।

এ প্রসঙ্গে বক্তব্য জানতে চাইলে সংশ্লিষ্টরা কথা বলতে অস্বীকার করেন। হোটেলের জেনারেল ম্যানেজার বিদেশে থাকায় তিনি ফিরে না আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বলা হয়। এছাড়া বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেও কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, কর্তৃপক্ষ চিঠি দিয়ে মিডিয়ার সঙ্গে কথা বলতে নিষেধ করে দিয়েছে।

অন্যদিকে রাজধানীর শাহবাগে হোটেলটির সংস্কার কার্যক্রম সরেজমিন খোঁজখবর নিয়ে জানা গেছে, বাইরের অবকাঠামোর কাজ প্রায় শেষ হয়েছে। কিন্তু ভেতরের ইন্টেরিয়র ডেকোরেশনের কাজ এখনও অনেক বাকি। এখন চলছে সেসব কাজই। যদিও কেউ কেউ বলেছেন ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে এটি চালু করা সম্ভব হবে। কিন্তু যারা কাজ করছেন তাদের অনেকেই বলেছেন সেটি সম্ভব নয়। এখনও যে কাজ বাকি রয়েছে সেগুলো শেষ করতে আরও সময় প্রয়োজন। তবে কর্তৃপক্ষের ভয়ে কথা বলতে চাননি কেউই। এমনকি কঠোর নির্দেশ থাকায় ভেতরেও ঢোকা যায়নি।

সূত্র জানায়, ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে সংস্কার কাজের জন্য হোটেলটির বাণিজ্যিক কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে বন্ধ ঘোষণা করা হয়। ২০১৫ সালের মার্চে শুরু হয় সংস্কার। কাজের শুরুতে বলা হয়েছিল, ২০১৬ সালের জুন-জুলাইয়ে এটি আবারও চালু করা হবে। তবে তা আর হয়ে উঠেনি। সংস্কার কাজের সময় বাড়ায় খরচও বেড়ে গেছে। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ২০০ কোটি টাকা খরচ বেড়েছে বলে জানা গেছে। শুরুতে এ সংস্কার কাজের জন্য বরাদ্দ ধরা হয়েছিল ৪৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বা ৩৪৪ কোটি টাকা। কিন্তু নানা কারণে খরচ বেড়ে যাওয়ায় বর্তমানে তা ৬৭ মিলিয়ন ডলার বা ৫৩৬ কোটি টাকায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে। ইতিমধ্যেই হোটেলটির পূর্ত ও নির্মাণ কাজের ৮০ থেকে ৮৫ শতাংশ শেষ হয়েছে বলে বিভিন্ন সূত্র জানিয়েছে।

যেসব পরিবর্তন এসেছে : রূপসী বাংলা থেকে ইন্টারকন্টিনেন্টাল রূপে আবির্ভূত হতে গিয়ে অনেক ক্ষেত্রেই পরিবর্তন আনা হয়েছে হোটেলটির। বিভিন্ন সূত্র জানায়, আগে ২৬ বর্গমিটারের অতিথি কক্ষ থাকলেও সেগুলোর পরিসর বাড়িয়ে ৪০ বর্গমিটার করা হয়েছে। আগে গেস্টরুম ছিল ২৭২টি। এখন কমে গিয়ে হয়েছে ২২৬টি। তবে এসব কক্ষের আয়তন বেড়েছে। এছাড়া আগে বলরুম, উইন্টার গার্ডেনসহ মিটিং রুমগুলো বিভিন্ন দিকে ছড়ানো-ছিটানো ছিল। এখন নতুন হোটেলে মোট ৯টি হল থাকবে ২১ হাজার বর্গফুটের মধ্যে। এর মধ্যে ৬টিই থাকবে হোটেলের পূর্বদিকে (রমনা পার্কের পাশে)। হলগুলোর নামও পরিবর্তন করে ইতিমধ্যে ঠিক করা হয়েছে নতুন নাম। এর মধ্যে আগের গ্রান্ট বলরুমটিকে দু’ভাগ করে রূপসী বাংলা উইন্টার গার্ডেন-১ এবং ২ রাখা হয়েছে। কারণ মূল হোটেলের নাম পরিবর্তন হলেও রূপসী বাংলার স্মৃতি হিসেবে এ হলের নামকরণ করা হয়েছে। আগের বলরুমের নাম পরিবর্তন হয়ে হয়েছে ক্রিস্টাল রুম, বীথিকার নাম পরিবর্তন হয়ে পার্ল, বকুলের নাম পরিবর্তন করে মধুমতি ও চামেলির পরিবর্তে তুরাগ রাখা হয়েছে। তাছাড়া ছোট ছোট মিটিং রুমগুলোর এখনও নাম দেয়া হয়নি। সুইমিং পুল নিচে থেকে তিনতলায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এখানে রমনা পার্কের গাছগাছালির সৌন্দর্যের সঙ্গে সমন্বয় করা হয়েছে। এ ধরনের সুইমিং পুলকে বলা হয় ‘ইনফিনিটি পুল’। রেস্টুরেন্ট থাকবে পাঁচটি। এগুলোর নামও দেয়া হয়েছে নতুন করে। রেস্টুরেন্ট অলডে ডাইনিংয়ের নাম দেয়া হয়েছে ‘এলিমেন্টস’। বারের নাম ওপিইউএস (ওপাস), পুলসাইড বারের নাম দেয়া হয়েছে অ্যাকোয়া ডেস্ক, বিশেষ রেস্টুরেন্টের নাম অ্যাম্বার রুম এবং ক্যাফের নাম দেয়া হয়েছে ক্যাফে সোশ্যাল। আগে শুধু মেইন কিচেন ছিল। কিন্তু এখন মেইন কিচেনের বাইরে প্রতিটি রেস্টুরেন্টের পেছনে আলাদা কিচেন থাকবে। আগে কোনো স্পা সেন্টার না থাকলেও এখন অত্যাধুনিক স্পা সংযোজন করা হয়েছে; যা আন্তর্জাতিক মানের তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে পরিচালিত হবে। যতটা সম্ভব হোটেলে সূর্যের আলো ব্যবহার করা হবে। এজন্য রেস্টুরেন্টগুলোতে বিশেষ ধরনের গ্লাস লাগানো হয়েছে। যাতে দিনের বেলা লাইট জ্বালানো ছাড়াই চালানো যায়। এছাড়া উইন্ডোগুলো লাগানো হচ্ছে তাপ নিরোধক। বাইরের তাপ ভেতরে আসবে না। এতে এসসি অনেক বেশি কাজ করবে। ফলে সবকিছু মিলিয়ে প্রায় ৩০ শতাংশ বিদ্যুৎ সাশ্রয় করা হবে। বর্জ্য রিসাইক্লেন (শোধন) করা হবে; যা আগে ছিল না।

বাড়বে ভাড়া : ২২৬টি কক্ষের মধ্যে ২০১টি কক্ষ ডিলাক্স, প্রিমিয়াম ও এক্সিকিউটিভ কক্ষ হিসেবে বরাদ্দ থাকবে। বাকি ২৫টি বিভিন্ন ধরনের স্যুট কক্ষ হিসেবে থাকবে। কক্ষের আয়তন বাড়ার পাশাপাশি নকশা ও সুযোগ-সুবিধা উন্নত করা হয়েছে। ব্যবহার করা হয়েছে অত্যাধুনিক সামগ্রী। এ কারণে হোটেলটির বিভিন্ন ধরনের খরচ বা ভাড়া আগের চেয়ে ২৫ শতাংশের মতো বাড়তে পারে বলে জানা গেছে। তবে ভাড়া বাড়লেও তা অবশ্যই প্রতিযোগিতামূলক হবে।

সংস্কারে বিলম্বের নানা কারণ : সম্প্রতি বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে বাংলাদেশ সার্ভিসেস লিমিটেড (বিএসএল) একটি প্রতিবেদন দাখিল করে। সেখানে দেখা যায়, প্রকল্প ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে প্রকল্প পরিচালক ও জনবল বারবার পরিবর্তন, প্রকল্প শেষ না করেই ইন্টারকন্টিনেন্টাল গ্রুপ অনুমোদিত প্রকল্প ব্যবস্থাপনা কোম্পানি সাইট ছেড়ে চলে যাওয়া, এক্ষেত্রে নতুন করে কোম্পানি নিয়োগে বিলম্ব, আগের কোম্পানির বিভিন্ন কাজে ত্রুটি থাকায় নতুন করে তৈরি করা এবং ঠিকাদারদের মালামাল সরবরাহে দেরি ইত্যাদি। এছাড়া পরিকল্পনাকালীন বেশকিছু কারণের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, টি-২০ বিশ্বকাপের জন্য শুরুতেই হোটেল বন্ধের তারিখ ১ বছর পেছানো, পরামর্শকের নকশা তৈরিতে সময়ক্ষেপণ, দরপত্র সংক্রান্ত জটিলতা, কাজের প্যাকেজ আবারও বিভক্তিকরণ এবং ভবন সংস্কারে নকশা জটিলতায় নতুন করে নকশা করা ইত্যাদি। এছাড়া শুরুতেই সংস্কার কাজের জন্য ১৬ মাস সময় নির্ধারণ বাস্তবসম্মত হয়নি বলেও উল্লেখ করা হয়।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ