দ্বিতীয় দফা বন্যায় জমিতে জলাবদ্ধতার কারণে এক মাস বিলম্বে চাষাবাদ শুরু হলেও আগাম রবিশস্য (শীতকালীন শাকসবজি) বাজারে উঠতে শুরু করেছে। প্রতিকূল পরিবেশে চাষাবাদ কিছুটা কম হলেও দাম ভালো পাওয়ায় চাষী ও বিক্রেতারা খুশি। বর্তমানে প্রতি কেজি শাকসবজিতে ১৫ থেকে ২০ টাকা লাভ হওয়ায় কৃষকের মাঝে চাষের আগ্রহ বেড়েছে।
বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্র জানায়, ১৬ অক্টোবর থেকে রবি মৌসুম শুরু হয়েছে। মাঠজুড়ে সবুজের সমারোহ। চাষাবাদ হচ্ছে মুলার শাক, সরিষা, পালং শাক, ফুলকপি, বাঁধাকপি, গাজর, লাউ, মিষ্টি কুমড়া, চাল কুমড়া, বরবটি, ঝিঙ্গা, করলা, বেগুন ও শিমসহ বিভিন্ন শীতকালীন (রবি মৌসুম) সবজি। আগামী মার্চের মাঝামাঝি পর্যন্ত এসব শাকসবজি চাষাবাদ হবে। এ মৌসুমে বগুড়া জেলার ১২ উপজেলায় ১২ হাজারের বেশি হেক্টর জমিতে রবি ফসল চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রতি হেক্টরে ফলন ২২ থেকে ২৩ মেট্রিক টন। প্রায় ৬ হাজার হেক্টর জমিতে আগাম চাষাবাদ হওয়ার কথা ছিল। দ্বিতীয় দফা বন্যায় অনেক জমিতে জলাবদ্ধতা থাকায় এক মাস বিলম্বে সাড়ে ৪ হাজার হেক্টর জমিতে আগাম রবি ফসল চাষাবাদ হয়েছে। গাজর, শিম ও টমেটো ছাড়া প্রায় সব শাকসবজি বাজারে উঠেছে।
বগুড়া সদরের ভাটকান্দি গ্রামের জনাব আলী ও মোজাম্মেল হক, শাজাহানপুরের দাড়িগাছা গ্রামের আকরাম হোসেন ও টেংগামাগুড়ের জয়নাল আবেদীন, শিবগঞ্জের রায়নগরের আজমল হোসেন, গাবতলীর পাঁচমাইলের মামুনুর রশিদ প্রমুখ কৃষক জানান, প্রতিকূল পরিস্থিতির কারণে নিবিড় পর্যবেক্ষণ, অধিক পরিমাণে কীটনাশক, ছত্রাকনাশক প্রয়োগ এবং কোনো কোনো এলাকায় জমি পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখতে হয়েছে। ফলে উৎপাদন খরচ বেশি পড়েছে। রবি ফসল উৎপাদনে তাদের প্রতি কেজিতে গড়ে ২৫ টাকা খরচ পড়লেও বর্তমানে তারা প্রতি কেজি ৩০ থেকে ৪০ টাকা বিক্রি করছেন। খরচ বাদে লাভ হওয়ায় তারা (কৃষক) খুশি রয়েছেন।
শনিবার সকালে শহরের ফতেহ আলী বাজার, নামাজগড় বাজার, ফুলবাড়ি বাজার, কলোনি বাজার ও গোদারপাড়া বাজারে ঘুরে দেখা গেছে, শীতকালীন শাকসবজি বিক্রি হচ্ছে। ফুলকপি প্রতি কেজি পাইকারি ৯০ থেকে ১০০ টাকা ও খুচরা বিক্রি ১১০ থেকে ১২০ টাকা, বাঁধাকপি প্রতি কেজি পাইকারি ৫০ টাকা ও বিক্রি ৬০ টাকা, সরিষা শাক প্রতি কেজি পাইকারি ৩০ টাকা ও বিক্রি ৪০ টাকা, রাঁধুনী প্রতি কেজি পাইকারি ১৫০ টাকা ও বিক্রি ২০০ টাকা, ধনিয়াপাতা প্রতি কেজি পাইকারি ২৫০ থেকে ২৮০ টাকা ও বিক্রি ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা, মুলা প্রতি কেজি পাইকারি ৩০ টাকা ও বিক্রি ৪০ টাকা, শলুকপাতা প্রতি কেজি পাইকারি ২০০ টাকা ও বিক্রি ২৫০ টাকা, ঢেঁড়স প্রতি কেজি পাইকারি ৫০ টাকা ও বিক্রি ৬০ টাকা, সজিনা প্রতি কেজি পাইকারি ১২০ টাকা ও বিক্রি ১৫০ টাকা, বেগুন প্রতি কেজি পাইকারি ৪০ টাকা ও বিক্রি ৫০ টাকা, শিম প্রতি কেজি পাইকারি ১২০ টাকা ও বিক্রি ১৪০ টাকা, করলা প্রতি কেজি পাইকারি ৩০ টাকা ও বিক্রি ৪০ টাকা, ওলকচু প্রতি কেজি পাইকারি ২০ টাকা ও বিক্রি ৩০ টাকা, মিষ্টি লাউ সজিনা প্রতি কেজি পাইকারি ৩০ টাকা ও বিক্রি ৩৬ টাকা, বরবটি সজিনা প্রতি কেজি পাইকারি ৭০ টাকা ও বিক্রি ৮০ টাকা, সাচিলাউ প্রতি পিস পাইকারি ২০ টাকা ও বিক্রি ৩০ টাকা, জালি কুমড়া প্রতি পিস পাইকারি ২৮ টাকা ও বিক্রি ৩০ টাকা এবং জলপাই প্রতি কেজি পাইকারি ৩০ টাকা ও বিক্রি ৪০ টাকা। শহরের নামাজগড় বাজারের আলমগীর হোসেন ও কলোনি বোবা স্কুল বাজারের শাকসবজি বিক্রেতা মাদলা দড়িনন্দী গ্রামের আনোয়ারুল ইসলাম জানান, শীতকালীন নতুন শাকসবজি বাজারে আসছে। বিক্রি করে কৃষক ও তারা উভয়ই লাভবান হচ্ছেন। তবে বাজারে সরবরাহ কম থাকায় দাম কিছুটা বেশি। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে দাম অনেকটা কমে আসবে বলে তিনি জানান। বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক প্রতুল চন্দ্র সরকার জানান, এবার রবি মৌসুমে কৃষক শাকসবজি চাষাবাদ করে লাভবান হচ্ছেন। এতে তাদের মাঝে চাষাবাদে আগ্রহ বেড়েছে।