সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের এক বিবৃতিতে বলা হয়, “রাখাইনে যা ঘটছে, রোহিঙ্গা ও অন্যান্য জনগোষ্ঠীর ওপর যে নির্মম সহিংসতা চালানো হচ্ছে, তা নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন।”
যুক্তরাষ্ট্র বলছে, ওই সহিংসতার পেছনে যে বা যারাই জড়িত থাকুক না কেন, তাদের বিচারের মুখোমুখি করতে হবে।
রাখাইনে সেনাবাহিনী নতুন করে অভিযান শুরুর পর গত ২৫ অগাস্ট থেকে এ পর্যন্ত ছয় লাখের মত রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। তারা বলছে, রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে সেনা সদস্যরা নির্বিচারে গুলি চালিয়ে মানুষ মারছে, নারীরা হচ্ছেন ধর্ষণের শিকার।
স্যাটেলাইট ছবি বিশ্লেষণ করে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) বলেছে, অভিযান শুরুর পর এক মাসেই ২৮৮টি রোহিঙ্গা গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়ার প্রমাণ পেয়েছে তারা।
মিয়ানমারের নেত্রী সু চি সেনাবাহিনীর এই অভিযানকে ‘সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে লড়াই’ হিসেবে বর্ণনা করলেও জাতিসংঘ একে চিহ্নিত করেছে ‘জাতিগত নির্মূল অভিযান’ হিসেবে।
রাখাইন রাজ্যের পরিস্থিতি দেখতে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোকে সেখানে যেতে দিচ্ছে না মিয়ানমার সরকার। এমনকি সেখানে আইসিআরসি ছাড়া অন্য কোনো সংস্থাকে ত্রাণ দিতেও বাধা দেওয়া হচ্ছে।
এর মাশুল গুণতে হচ্ছে বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থাগুলোকে। বিপুল সংখ্যক মানুষের জন্য খাবার, পানি, আশ্রয় আর ন্যূনতম চাহিদাগুলো মেটাতে তাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে।
গত ৫ অক্টোবর যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি পরিষদের পররাষ্ট্র বিষয়ক কমিটিতে রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে শুনানিতে কয়েকজন কংগ্রেস সদস্য ও কর্মকর্তা রোহিঙ্গা নিপীড়ন থামাতে মিয়ানমার সরকারের বিরুদ্ধে নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপ অথবা সাহায্য বন্ধের মত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান।
দীর্ঘদিন সামরিক শাসনে থাকা মিয়ানমারের ওপর আগেও যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ও অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা ছিল। ২০১৫ সালে নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে মিয়ানমারে গণতন্ত্র ফেরার সময় যুক্তরাষ্ট্র সেসব কড়াকড়ি তুলে নেয়।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন গত সপ্তাহে বলেন, “রাখাইনে যেসব সহিংসতার খবর আসছে, বিশ্ব তা দেখেও চুপ করে থাকতে পারে না।… যা ঘটছে সেজন্য আমরা মিয়ানমারের সামরিক নেতৃত্বকেই দায়ী করব।”
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আসিয়ান সম্মেলনে অংশ নিতে আগামী মাসের শুরুতে প্রথমবারের মত এশিয়ার ওই অঞ্চলে যাচ্ছেন। ম্যানিলায় ওই সম্মেলনে মিয়ানমারও অংশ নিচ্ছে।
ট্রাম্পের ওই সফরের আগেই এ যাবৎকালের সবচেয়ে কঠোর ভাষায় মিয়ানমারকে হুঁশিয়ার করল মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট।
বিবৃতিতে বলা হয়, মিয়ানমারের বিষয়ে নিষেধাজ্ঞার মত পদক্ষেপ নিতে যুক্তরাষ্ট্রের ও আন্তর্জাতিক আইন পর্যালোচনা করছে ওয়াশিংটন।
যুক্তরাষ্ট্র এরই মধ্যে কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। মিয়ানমারের বর্তমান ও সাবেক সেনা সদস্যদের যুক্তরাষ্ট্র সফরের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।
মিয়ানমার যাতে জাতিসংঘের ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং মিশনকে রাখাইনে যাওয়ার অনুমতি দেয়, সেজন্য চাপ দিতে আর কী কী পদক্ষেপ নেওয়া যায়, সে বিষয়ে ওয়াশিংটন মিত্রদের সঙ্গে আলোচনা করছে বলে জানানো হয়েছে বিবৃতিতে।